তুমিই আমার সীমাহীন স্বপ্নের একমাত্র অনুপ্রেরণা

বাবা! আদর, স্নেহ এবং ভালোবাসা সংমিশ্রিত এক আবেগময় শব্দ। দুই অক্ষরবিশিষ্ট এই শব্দ সীমাহীন ভরসার একটি জায়গা। বাবা শুধু ব্যক্তি কিংবা সম্পর্কের নাম নয়। এই মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিশাল পৃথিবীর একরাশ অদ্ভুত ভালোবাসা আর অনুপ্রেরণা। বাবা শব্দটি যেন সব আবদারের এক অফুরন্ত ভান্ডার। পৃথিবীতে প্রত্যেকটি বাবাই তাঁর সন্তানের কাছে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। প্রতিটি পরিবারের কাছে সন্তানস্নেহে পূর্ণ একটি হৃদয়। যার অক্লান্ত পরিশ্রম আর অনিঃশেষ ভালোবাসা প্রত্যেকটি সন্তানের এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা। এ জন্য হয়তো হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, ‘পৃথিবীতে অনেক খারাপ পুরুষ রয়েছে কিন্তু একটিও খারাপ বাবা নেই।’ এই মানুষের সারা জীবনের ত্যাগ, তিতিক্ষার ফলে সেই ছোট থেকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজ আমাদের এতদূর পথচলা। তীব্র শীতের দিনে বাবা নামক মানুষটি যেমন তাঁর সন্তানের শীত নিবারণের চাদর, ঠিক তেমনি প্রয়োজনে বৃষ্টির দিনে তিনি তাঁর সন্তানের মাথার ওপরের ছাতা।

জীবনে চলার পথে প্রতিটি ঘাত-প্রতিঘাতে মানুষটি যেমন আমাদের ছায়া হয়ে পাশে থাকেন, ঠিক তেমনি আমাদের সব বিপদ–আপদে শক্তি দিয়ে, সাহস দিয়ে সামনে হাঁটতে অনুপ্রেরণা জোগান। আমার জীবনের সব থেকে মূল্যবান এবং সেরা এই শব্দকে বিশ্লেষণ করার যোগ্যতা আমার হয়নি। আজ যখন তাঁকে নিয়ে কিছু লিখতে বসেছি, তখন তাঁর কাছ থেকে পাওয়া আদর, ভালোবাসা কিংবা অনুপ্রেরণার গল্প বলে হয়তো শেষ করতে পারব না। আর তাঁর এই অবদানের গল্পের ইতি টানতে না পারাটাই হয়তোবা বাবার জন্য আমার সামান্য কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। আমি দেখেছি, আমার বাবার শার্টগুলো কখনো পুরোনো হয়নি। জুতা ছিঁড়ে গেলেও তা চলেছে মাসের পর মাস। তার নেই আলমারি ভরা পোশাক-আশাক। দুটি পোশাকেই তাঁর পার হয়ে গেছে বছরের পর বছর। তবুও সেটি তাঁর কাছে অসহ্য বা অপমানের মনে হয়নি। কিন্তু আমি কখনো দেখেনি, আমার বাবা সাধ্যের মধ্যে আমার কোনো চাওয়াকে অপূর্ণ রেখেছেন। বরং দেখেছি, আমার হাসিমুখটা দেখার জন্য তিনি দ্বিতীয়বার না ভেবে পৃথিবীর সবকিছু করতে রাজি হয়েছেন। যেটা আমার জীবনের পরম পাওয়া।
আমার বাবা একজন পল্লিচিকিৎসক। অন্য আর দশজনের মতোই সাধারণ একটি পরিবারে তাঁর জন্ম।

অভাব–অনটনের মধ্যেই তাঁর বেড়ে ওঠা। কিন্তু এই অভাব–অনটন নামক দুটি শব্দের সঙ্গে আমাকে কখনো পরিচয় করিয়ে দেননি। বরং যখন যা চেয়েছি, যখন যা প্রয়োজন হয়েছে, তিনি দ্বিতীয় কোনো প্রশ্ন না করে আমার সে চাহিদা মেটানোর জন্য চেষ্টা করেছেন। তিনি শুধু চেয়েছেন, আমি যেন সমাজের গতানুগতিক শিক্ষায় গাঁ ভাসিয়ে না দিয়ে ভালো একজন মানুষ হয়ে গড়ে উঠি। আমার মধ্যে যেন সততা, দেশপ্রেম আর গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসার কমতি না থাকে। প্রতিটি ধর্ম, বর্ণ ও মানুষের প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধে যেন কখনো ঘাটতি না পড়ে। তাই আমিও তাঁর দেখানো পথ, তাঁর উপদেশ এবং অনুপ্রেরণায় হেঁটে চলেছি সুন্দর একটি ভবিষ্যতের উদ্দেশে। যদিও আজ অবধি আমি আমার বাবাকে বলার মতো খ্যাতি কিংবা অর্জন বয়ে আনতে পারিনি। পারিনি আমার বাবার গর্বের কোনো কারণ হতে।

তবে সৃষ্টিকর্তার ওপর আমার অগাধ ভরসা রয়েছে, তিনি হয়তো আমার কঠোর পরিশ্রম আর আমার ওপর রাখা আমার বাবার আস্থা, ভালোবাসা এবং বিশ্বাসের ফলে আমাকে একদিন আমার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিবেন। যেদিন হয়তো আমার বাবা বুক ফুলিয়ে বলবে আমার ছেলেটা শুধু শিক্ষিত হয়নি, ভালো মানুষও হয়েছে। সেই দিনের অপেক্ষায় আজও আমি স্বপ্ন বুনে চলেছি। আজ বাবা দিবস হিসেবেই যে আমি আমার বাবাকে শ্রদ্ধা কিংবা ভালোবাসার কথা বলছি এমনটা নয়, বছরের প্রতিটি দিনই তিনি আমার কাছে সব থেকে শ্রদ্ধার এবং ভালোবাসার মানুষ। যদিও বাবাকে কখনো বলা হয়নি, ‘বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসি’ তবুও আজ এতটুকু বলতে চাই, পৃথিবীর মধ্যে আমার কাছে সব থেকে দামি যদি কিছু থেকে থাকে, তাহলে সেটি হলো, ‘বাবা তোমার ঘামের প্রতিটি ফোঁটা।’

লেখক: রিয়াদ হোসেন, শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা।

** নাগরিক সংবাদে লেখা ও ছবি পাঠাতে পারবেন যে কেউ। ঠিকানা: [email protected]