কাঁচা মরিচের ঝাঁজ

কাঁচা মরিচ
ফাইল ছবি

কাল সন্ধ্যায় ডিমভাজি খেতে ইচ্ছা করল। ঘরে ডিম, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ—কিচ্ছু নেই। বাসার পাশের গলির মোড়েই দোকান। ওই দোকানে সবকিছুই পাওয়া যায়। এ জন্য দোকানের নাম রেখেছে ‘একের ভেতর সব’।

বাইরে যাওয়ার জন্য আয়োজন করছি। ঠিক তখনই কলবেল বেজে উঠল। দরজা খুলে দেখি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমার বন্ধু মুহিব দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাকে কিছুক্ষণ বসতে বললাম। সে বসল না। আমার সঙ্গে দোকানে যেতে চাইছে। তাকে সঙ্গে নিয়েই রওনা হলাম।

সে দোকানিকে বলল, এক হালি ডিম দেন তে।
দোকানি পলিথিনে ডিম ভরতে লাগল।

মুহিব পলিথিন থেকে একটা করে ডিম বের করে আর বলে, ডিম এত ছোট কেন? বড় বড় দেইখে দিতে পারেন না? এটা তো আরও ছোট। ওর পাশেরটা দেন। উফ্, এটা তো ভাঙা ডিম। ওই যে ওইটা দেন। এটাও তো ছোট। আরেকটু বড় দেইখে দেন না!’

দোকানি সব ডিম পলিথিন থেকে নামিয়ে খাঁচায় রাখতে রাখতে গজগজ করে বলল, ডিম তো আমি পাড়ি না যে বড় বড় দেইখে দিমু আপনেরে। ডিম পাড়ে মুরগি। আমার কাছে অভিযোগ না করে মুরগির কাছে অভিযোগ করতে পারেন না? একটা ডিম পাড়তে মুরগির কী যে কষ্ট হয়, সেই কষ্ট তো আপনে বুঝবেন না! যান, আমি আর আপনের কাছে ডিমই বেচুম না।

ডিম আর কেনা হলো না। মুহিব বলল, ডিম কেনা হয়নি তো কী হয়েছে? আমি ভালো করে কাঁচা মরিচের তরকারি রাঁধতে পারি। একবার খেলে তোর বারবার খেতে ইচ্ছা করবে। ওর কথা শুনে কাঁচা মরিচের তরকারি চোখের সামনে ভেসে উঠল। ভীষণ খেতে ইচ্ছা করল।

ঝিরঝির বৃষ্টিতে হাঁটতে লাগলাম। রাস্তার ওপাশের ভ্যানওয়ালার কাছে গেলাম। সবজিতে পানি ছিটাচ্ছে। বৃষ্টি পড়ছে, তারপরও সবজিতে পানি ছিটাচ্ছে কেন, ব্যাপারটা বুঝলাম না। থাক, বোঝার দরকার নেই। সবজির গায়ে নিশ্চয় জ্বরটর এসেছে!

ফাইল ছবি

মুহিব বলল, চাচা, কাঁচা মরিচ আছে?
হ, আছে।
দেওন যাইব?
কয় কেজি নিবেন খালি কন।
এক কেজির দাম কত?
তিন শ কুড়ি টেকা।
আধা কেজির দাম কত?
এক শ ষাইট টেকা।
এক পোয়ার দাম কত?
আশি টেকা।
আধা পোয়ার দাম কত?
চল্লিশ টেকা।

আমারে ভালো ও মোটাতাজা দেইখে পাঁচ টেকার তরতাজা কাঁচা মরিচ দেন তো।
ভ্যানওয়ালা ওর কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ল।

আমি একটু দূরে সরে এলাম। ওর সঙ্গে বাজারসদাই করতে এলে নিশ্চিত পিটুনি খেতে হবে।

ভ্যানওয়ালা বলল, আপনে কি মরিচ নিতে আইছেন না আমার সঙ্গে ফাজলামি করতে আইছেন?

ওই মিয়া, আমি কি আপনের দুলাভাই লাগি যে ফাজলামি করমু? মরিচ নিতে আইছি, দিলে দেন, না দিলে বইসে বইসে বৃষ্টিতে বিড়ি টানেন।

ভ্যানওয়ালা পলিথিনে লম্বা একটা ফুঁ দিয়ে বেছে বেছে পাঁচটা পচা মরিচ ভরে দিল।