স্বার্থপরতা না সহানুভূতি না ভালোবাসা

প্রতীকী ছবি

একটা সময় আমাদের গ্রাম, পাড়া কিংবা শহরের মানুষের মধ্যে পরস্পরের প্রতি যে আন্তরিকতা, আতিথেয়তা ও সহানুভূতি ছিল, তা আজকাল আর খুব একটা চোখে পড়ে না। বিশ্বায়নের এই সময় যোগাযোগ, মিডিয়া, প্রযুক্তি আর ইন্টারনেটের বদৌলতে মানুষ একদিকে যেমন ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্ষুন্নিবৃত্তির পেছনে প্রচুর সময় ব্যয় করছে, তেমনি নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যসামগ্রী জোগাড় করার জন্য হন্যে হয়ে পড়েছে!

এখনকার গ্রামগুলোও আর আগের মতো নেই। কেমন যেন একটা আধাখেঁচড়া বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। শহরের মতো হতে চাওয়ার কারণে গ্রামের প্রাকৃতিক আবহাওয়া ক্ষুণ্ন হয়েছে, তার স্বকিয়তা নষ্ট হয়েছে!

যৌথ পরিবারের কোনো অস্তিত্ব এখন নেই, মা–বাবা, ভাইবোন আর তাদের ছেলেমেয়ে মিলে একসঙ্গে এক জায়গায় বাস করার যে ঐতিহ্য, তা আজ প্রায় নেই বললেই চলে। কারণ, জীবিকার তাগিদে মানুষ এখন এক দেশ ছেড়ে অন্য দেশে কিংবা এক অঞ্চল ছেড়ে অন্য অঞ্চলে বসবাস করছে। এখন প্রতিটি পরিবারই একক পরিবার, সন্তানেরা বড় হয়ে বিয়েশাদি করে একেক জন একেক অঞ্চলে চলে যাচ্ছেন; বৃদ্ধ মা–বাবা হয়ে পড়ছেন একা, নিঃসঙ্গ আর অবলম্বনহীন!

সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরা আজ বলছেন মানুষের প্রতি মানুষের সহানুভূতি নাকি ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে। পত্রিকার পাতায়, টেলিভিশনে আমরা প্রতিদিন ভয়াবহ সব খবর পাচ্ছি, কিন্তু সবাই নির্বিকার। আধুনিক জীবনযাপনের সব প্রয়োজনীয় সামগ্রী লাভ করার জন্য মানুষের উদগ্র বাসনা, অর্থের পেছনে ছোটা এবং যেকোনো প্রকারে নিজের স্বার্থ হাসিল করার মানসিকতা, এর পেছনের একটি কারণ হতে পারে!

টেলিভিশন আর সিনেমায় ছোট শিশু যখন দেখছে, মানুষ হাসতে হাসতে মানুষকেই খুন করছে (উদাহরণ: পাবজি, ফ্রি ফায়ার গেম) তখন ধীরে ধীরে মানুষ খুন করাকে তার ছেলেখেলা বলেই মনে হয়! মানুষের দুঃখ–কষ্ট কিংবা মৃত্যুর যন্ত্রণা তখন সে বোধ করি আর অনুভব করতে পারে না।

উন্নয়নের সূচকে যতই আমরা এগিয়ে যাই না কেন, প্রতারণা, শোষণ ও বঞ্চনা যেন বেড়েই চলেছে! গরিবদের জন্য যত হাজার কোটি টাকাই খরচ করা হোক না কেন, পৃথিবী থেকে দারিদ্রতা দূর হবে না, যতক্ষণ না আমরা মন থেকে তাদের ভালো চাই! যত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডই আমরা হাতে নিই না কেন, মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা না থাকলে ধনী হবে আরও ধনী, গরিবের সংখ্যা বাড়বে বৈ কমবে না।

*লেখক: ফ্রিল্যান্সার, বেসরকারি সংস্থায় চাকরি