সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বুদ্ধিবিকাশে ৫০ তরুণ-তরুণীর উদ্যোগ

আমরা বলি, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। এর সঙ্গে একটি জাতির উন্নতির জন্য আরেকটি বিষয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো সঠিক বুদ্ধিবিকাশে পর্যাপ্ত পুষ্টি আমাদের শিশুদের খাদ্যে নিশ্চিত করা। তবেই না যাবতীয় শিক্ষা কর্মসূচি কার্যকর হবে এবং আমাদের বুদ্ধিদীপ্ত শিশুরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণ করবে। এই উদ্দেশ্যেই পুরো রমজান মাসে আয়োজিত হয় একটি গবেষণা, যার বিষয় হলো এমন খাবারের অনুসন্ধান করা, যার মধ্যে বুদ্ধিবিকাশের যাবতীয় পুষ্টি উপাদান থাকবে এবং যা তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশে মূল্যেও সুলভ! পরে এ গবেষণার তথ্য নিয়ে প্রায় ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী পৌঁছে যান বাংলাদেশের ৯টি জেলাতে  সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অভিভাবকদের কাছে। তাঁদের সঙ্গে ছিল পুষ্টিকর, সহজলভ্য এবং তুলনামূলক সুলভ খাবার। পুরো আয়োজনটি করে মিস বাংলাদেশ ইন ট্রেইনিং (MBIT) নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, যারা ২০২০ সাল থেকে কাজ করছে নারীর ক্ষমতায়ন এবং শিশুদের নিয়ে।

পুরো আয়োজনটি বাংলাদেশে আয়োজিত হয় ‘প্রজেক্ট নুরজাহান’ নামে। যার প্রথম ভাগে ছিল একটি গবেষণা। এ গবেষণায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন ১৩ জন তরুণ-তরুণী। তাঁদের নির্দেশনায় ছিলেন কানাডার পুষ্টিবিদ বেনজীর শামস, চিকিৎসক এবং ওয়েলনেস কনসালট্যান্ট তৌহিদা ইরিন, এমবিআইটির প্রতিষ্ঠাতা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৌশলী নিলুফার ইসলাম এবং এমবিআইটির অ্যাডমিন সেহেমি সুলতানা।

এই প্রজেক্টের গবেষণা শেষে একটি তথ্যবহুল পোস্টার এবং লিফলেট নিয়ে দশজন গ্রুপ লিডার পৌঁছে যান বাংলাদেশের ৯টি এলাকায়। গ্রুপ লিডার হিসেবে ছিলেন ফারিহা তাসনিম হৃদি ও তানভীর আজাদ ইবন (সিলেট লিডার), যুক্তা ভৌমিক (ঢাকা লিডার), সুরাইয়া ইসলাম দিবা (রাজশাহী লিডার), জান্নাতুল মাওয়া (চট্টগ্রাম লিডার), হাদিউজ্জামান অভি (যশোর লিডার), তায়ামুন নাহার (চুয়াডাঙ্গা লিডার), সুমাইয়া রহমান সমাপ্তি (খুলনা লিডার), সাবরিনা করিম সুহি (কুমিল্লা লিডার) এবং তৌহিদা তাসনিম (গাজীপুর লিডার)।

নিলুফার ইসলাম জানান, ‘বাংলাদেশের মানুষ আমরা অনেক বেশি ভাত এবং শর্করানির্ভর খাবার খাই। অথচ একটি শিশুর বুদ্ধি বিকাশে প্রয়োজন অনেক ধরনের পুষ্টি। অনেকে, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বাবা-মায়েরা মনে করি, এ ধরনের পুষ্টি শুধু দামি খাবারেই পাওয়া যায়। অথচ ব্যাপারটা তেমন না। তাই আমরা বিভিন্ন রিপোর্ট, জার্নাল পেপার থেকে সংগ্রহ করি প্রয়োজনীয় পুষ্টিবিষয়ক তথ্য। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সেগুলো কোনো কোনো সুলভ মূল্যের খাবারে পাওয়া যায়, তার একটি তালিকা তৈরি করি। পরবর্তী সময়ে পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হই তাঁদের মতামত নেওয়ার জন্য।

এ উদ্যোগের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল তরুণসমাজকে সমাজসেবামূলক কাজে উৎসাহিত করা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া। প্রজেক্ট শেষে স্বেচ্ছাসেবীদের এমবিআইটি সার্টিফিকেট ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা থেকে চালিত মিস বাংলাদেশ ইন ট্রেইনিং ইতিমধ্যেই নারীর ক্ষমতায়নে এবং প্যারেন্ট প্রশিক্ষণে অনলাইনে ৩৬টি বিনা মূল্যের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।