শ্রীমঙ্গলে ব্যান্ড সংগীতের তৃষ্ণা মিটিয়ে যাচ্ছে এসবিএ

শ্রীমঙ্গল উপজেলার প্রথম ব্যান্ডদলের নাম ‘স্পন্দন’। পরে ‘তারুণ্য’ নামে আরেকটি ব্যান্ডদল গঠিত হয়। দুটি ব্যান্ডই আশির দশকের। স্পন্দন ব্যান্ডের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন স্বপন সুপ্রিয় (ভোকাল), বাচ্চু সূত্রধর (ভোকাল), পিংকু কর (ভোকাল), ঝলক চৌধুরী, ঝিনুক চৌধুরী (ড্রামার), বাবু (গিটার)। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকে এই ব্যান্ডদলে যোগ দেন।

১৯৯১ সালে আত্মপ্রকাশ করে ‘সারগাম’ ব্যান্ড। যার সদস্যদের মধ্যে বুলবুল আনাম (পরিচালক), পান্না কর (ভোকাল), আসমত আলী মুন্না (ভোকাল), তারেক ইকবাল (ভোকাল), মুমিনুল হোসেন সোহেল (ভোকাল+গিটার), আর কে রুপু (কি-বোর্ড+ভোকাল), উজ্জ্বল বণিক (ড্রামস)। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ব্যান্ডদলেও যোগ দেন অনেকেই। পরবর্তী সময়ে ‘ফাগুন ব্যান্ড’ আত্মপ্রকাশ করে ১৯৯৯ সালে। ২০০৬ সালের পর স্বদেশ ব্যান্ড আত্মপ্রকাশ করে। পরবর্তী সময়ে একে একে সাদাকালো, ফোক ন্যাশন, অজানা, অনুরণ, থ্রিল, হেইলস্ট্রম, মুখোশ, রক্তিম, শব্দ, প্রহর, প্রাচীন, সেইকেলস, বিস্ময়, আগ্রাসন আত্মপ্রকাশ করে।  

প্রথম নারী ব্যান্ডদল

শ্রীমঙ্গলের উপজেলায় ‘টুইংকেল’ ও ‘আঁচল’ নামে দুটি নারী ব্যান্ডদল গড়ে উঠেছিল। যাদের ব্যান্ডের সব সদস্যই ছিলেন নারী। যারা দেশের একমাত্র নারী দল হিসেবে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিল। কলেজপড়ুয়া অদিতি, ইরিনা, পিংকি, সুস্মিতা ও শতাব্দী পাঁচ বান্ধবী মিলে সম্পূর্ণ একটি নারীদের ব্যান্ডদল তৈরি করে ২০১০ সালে। যে ব্যান্ডের নাম ছিল ‘টুইংকেল’। যার ভোকালে অদিতি, ড্রামসে ইরিনা, কি-বোর্ডে শতাব্দী, লিড গিটারে পিংকি ও বেইস গিটারে সুস্মিতা ছিলেন। আর ২০১২ সালে যাত্রা শুরু করলেও ২০১৫ সাল থেকে নিয়মিত মঞ্চে গান করত আঁচল ব্যান্ড। যাঁদের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন মৌমিতা (ভোকাল), নন্দিতা (কি-বোর্ড), পূরবী (অক্টোপেড), পালকি (লিড গিটার) ও শিমু (বেইস গিটার)।

উচ্চশিক্ষা গ্রহণে শ্রীমঙ্গলের বাইরে ও দেশের বাইরে চলে যাওয়া এবং কর্মজীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়াসহ বিভিন্ন কারণে সেই দুটি নারী ব্যান্ডদলের পক্ষে নিজেদের টিকিয়ে রাখা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ২০১২ সালে ৬টি ব্যান্ড নিয়ে শ্রীমঙ্গল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন পথচলা শুরু। ওই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি শ্রীমঙ্গল বিজিবি সীমান্ত স্পন্দন প্রাঙ্গণে এসবিএর প্রথম ব্যান্ড ফেস্টিভ্যাল ভলিউম-১ অনুষ্ঠিত হয়। স্বদেশ, অনুরণ, থ্রিল, হেইলস্ট্রম, মুখোশ, রক্তিম—এই ছয়টি ব্যান্ড নিয়ে শ্রীমঙ্গল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনের (এসবিএ) শুভ সূচনা হয়।

প্রতিবছর টানা এ ব্যান্ড ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হলেও ব্যান্ড ফেস্টিভ্যাল ভলিউম-৯ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর করোনা মহামারি থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন পরিস্থিতি ও সমস্যার কারণে এ ব্যান্ড ফেস্টিভ্যালে একটা বিরতি হয়ে যায়। ভলিউম-৯–এ ছয়টি ব্যান্ডদল অংশগ্রহণ করে। আর মাঝখানে কয়েক বছর বিরতির পর চলতি বছরের ২০ এপ্রিল আয়োজন করা হয় ব্যান্ড ফেস্টিভ্যাল ভলিউম-১০। যেখানে ১৪টি ব্যান্ডের অংশগ্রহণে বিশাল এ আয়োজন মিলনমেলায় পরিণত হয়। সংগঠনের ১২ বছর পূর্তি উপলক্ষে জেলা পরিষদ অডিটরিয়াম শ্রীমঙ্গলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শ্রীমঙ্গল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন (এসবিএ)।

‘Sodium’ ব্যান্ড দিয়ে বেলা তিনটায় শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠানে একে একে গান পরিবেশন করে Sodium, Betel Leaf, Aloron, Bohipir, Agnibina, Shimahin, Prohor, Sector 3, Avro, Wee, Unity ব্যান্ড। সংগীত পরিচালক আরমান খান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ব্যান্ডগুলোর পরিবেশনা উপভোগ করেন। উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের আলিয়া পুঞ্জির খাসিয়া সম্প্রদায়ের Unity ব্যান্ডের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় এবারের ব্যান্ড ফেস্টিভ্যাল। নিজেদের কয়েকজন সদস্য উপস্থিত হতে না পারায় তিনটি ব্যান্ড তাদের পরিবেশনা উপস্থাপন করতে পারেনি। যথাসময়ে এসবিএর রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে না পারায় আরও দুটি নতুন ব্যান্ড এ আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে পারেনি।

শ্রীমঙ্গল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন (এসবিএ) সদস্যদের মতে, শ্রীমঙ্গলের ব্যান্ড–জগতের অভিভাবক হচ্ছে শ্রীমঙ্গল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন (এসবিএ)। এ অ্যাসোসিয়েশন হচ্ছে নতুনদের আবাসন, নতুনদের ভবিষ্যৎ। যারা ব্যান্ড মিউজিক করেন, তাঁদের একটি প্ল্যাটফর্ম দরকার। আর নতুন ব্যান্ডের প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে শ্রীমঙ্গল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন।

পুরোনো দিনের ব্যান্ডের গানগুলো রক্ষার্থে শ্রীমঙ্গল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন নতুনদের মাধ্যমে নতুন আঙ্গিকে শ্রীমঙ্গলের সব শ্রেণির মানুষকে সেই হারানো দিনগুলোকে স্মরণ করিয়ে দিতে চায়। সেই লক্ষ্যেই ১১ ধরে শ্রীমঙ্গলের মানুষের ব্যান্ড সংগীতের তৃষ্ণা মিটিয়ে আসছে শ্রীমঙ্গল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন (এসবিএ)।

*লেখক: জীবন পাল, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার

নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল অ্যাড্রেস: [email protected]