বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তারুণ্যের ইশতেহারে ১১ দফা

‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশ: তারুণ্যের ইশতেহার’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় (বাঁ থেকে) সাঈদ আহমেদ, উমামা ফাতেমা, অর্পিতা শ্যামা দেব, এ কে এম ফাহিম মাশরুর ও  মামুন আব্দুল্লাহিছবি: লেখকের সৌজন্য

বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ১১ দফা ইশতেহার দিয়েছেন তরুণেরা। গত মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকার একটি হোটেলে ইয়ুথ ফর পলিসি আয়োজিত ‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশ: তারুণ্যের ইশতেহার’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা তরুণ প্রতিনিধিরা বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে তাঁদের দাবিসমূহ তুলে ধরেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সফলতার অনুপ্রেরণা থেকে এই তরুণ প্রতিনিধিরা দেশের ১৮টি জেলায় ২০টি ফোরামের মাধ্যমে পাঁচ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

আলোচনার মাধ্যমে উঠে আসা মূল বিষয়গুলো নিয়ে তরুণদের পক্ষ থেকে ১১ দফার একটি ইশতেহার প্রণয়ন করা হয়। দফাগুলো হচ্ছে:

১.

চিন্তাশীল ও ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত প্রজন্ম গড়তে অবিলম্বে পাঠ্যক্রম সংস্কারের রূপরেখা চাই।

২.

বৈষম্যহীন ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে শিক্ষা ও চাকরি কোটার সংস্কার করতে হবে।

৩.

দুর্নীতির দুষ্টচক্রে রাজনৈতিক ও দলীয় পালাবদল নয়, দরকার এর স্থায়ী অবসান।

৪.

দুর্নীতিবান্ধব ব্যাংক সংস্কার করে তরুণ উদ্যোক্তাবান্ধব ব্যাংকব্যবস্থা চাই।

৫.

জলবায়ুবান্ধব অর্থনীতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় কঠোর আইনগত নজরদারি প্রয়োজন।

৬.

জননীতি তরুণদের অংশগ্রহণের স্থায়ী বন্দোবস্ত করা অপরিহার্য।

৭.

ইন্টারনেট ব্যবহারের সমান সুযোগ ও নিবর্তনমূলক নিয়ন্ত্রণ রোধের নিশ্চয়তা জরুরি।

৮.

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার নিশ্চয়তা চাই। সেই সঙ্গে দুর্নীতিমুক্ত ও বিকেন্দ্রীকৃত স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি।

৯.

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালাকানুন বাতিল করতে হবে।

১০.

রাষ্ট্রের তিন বিভাগের ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় স্বাধীন বিচার বিভাগের সাংবিধানিক রূপরেখা করতে হবে।

১১.

সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণে ও বাজেটে বিশেষ বিবেচনায় অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি।

‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশ: তারুণ্যের ইশতেহার’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারীরা
ছবি: লেখকের সৌজন্য

আলোচনায় আইআইডির নির্বাহী প্রধান সাঈদ আহমেদ বলেন, ‘যতবারই দেশ বিপথে গেছে বা কর্তৃত্ববাদের কবলে পড়েছে, ততবারই তরুণেরা আত্মত্যাগের মাধ্যমে দেশকে ঠিক পথে নিয়ে এসেছে। কিন্তু যতবারই তরুণেরা আত্মত্যাগ করেছে, ততবারই পুরোনোরা ক্ষমতায় গিয়ে দেশকে আবার আগের অবস্থানে নিয়ে গেছে। এবারও যেন এটা তরুণদের হাতছাড়া না হয়ে যায়, এর একটি স্থায়ী বন্দোবস্ত দরকার।’

‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশ: তারুণ্যের ইশতেহার’ অনুষ্ঠানে তরুণ প্রতিনিধিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যাঁরা মতামত দেন তাঁরা হলেন ইশতিয়াক আহমেদ, জি এম রাকিব, নিলয় সাহা, রংথুইং ম্রো, আসিফ ইকবাল জুবায়ের, সাইফুল ইসলাম তানজিলা ইসলাম, কিফায়াত আরা রিফা, মো. নিয়ামত উল্লাহ, উম্মে সালমা নেহা, জান্নাতুল ফেরদৌসী, ইতি চৌধুরী, মার্জিয়া স্বর্ণা, নিশাত আনজুম সেমন্তী, রিপন মৃধা প্রমুখ।

সাঈদ আহমেদের সঞ্চালনায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাতীয় লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য মামুন আব্দুল্লাহি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য অর্পিতা শ্যামা দেব, বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফাহিম মাশরুর ও ইউনিভার্সিটি প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস লিমিটেডের প্রধান মাহরুখ মহিউদ্দিন।

*লেখক: সুলতানা মেহজাবীন: ফোকাল, ইয়ুথ ফর পলিসি এবং সিনিয়র সহকারী পরিচালক, আইআইডি। ই–মেইল: [email protected]

**নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]