ভেটেরিনারিয়ানদের শাড়ি-পাঞ্জাবি উৎসব, ছিলেন মালয়েশিয়া-নেপালের শিক্ষার্থীরাও

‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’, স্বামী বিবেকানন্দের সর্বাধিক উদ্ধৃত উক্তি এটি। সৃষ্টিকর্তা প্রাণীদের মুখের ভাষা দেননি। প্রাণী চিকিৎসক বা ভেটেরিনারিয়ানরা অবলা জীব বা প্রাণীদেরই চিকিৎসা করে। তাই বলা যেতেই পারে ভেটেরিনারিয়ান হওয়া একটি মহৎ পেশা। ভেটেরিনারিয়ানরা যে শুধু অবলা প্রাণীদের চিকিৎসা করে জীবন বাঁচায় তা নয়, দেশের বাড়তি জনসংখ্যার আমিষের ঘাটতি পূরণেও ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছে। এতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারিয়ানরা।

এত ভালো কিছুর পরেও ভেটেরিনারিয়ানদের ডাকা হয় ‘গরুর ডাক্তার’ নামে। ১৯৭৩ সালে বাকৃবির ১ হাজার ২৩১ একরের সবুজ চত্বরে এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্র্যাজুয়েটদের প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা দেন। এর ফলে এ দেশের শিক্ষার্থীদের কৃষিবিদ হওয়ার ইচ্ছা আরও দৃঢ় হয়েছে। বাকৃবিতে শিক্ষার মান দিন দিন আরও উন্নত হয়েছে, পরিণত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম কৃষিশিক্ষা বিদ্যাপীঠ হিসেবে। এরই ধারাবাহিকতায় বাকৃবিতে প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে আসেন। বিদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদ।

বাকৃবি গ্র্যাজুয়েটদের প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা পাওয়ার দিনটিতে ক্যাম্পাসের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা এবং উচ্ছ্বাস দেখা যায়। দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে বর্তমান ভেটেরিনারি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা শাড়ি-পাঞ্জাবি দিবস উৎসব আয়োজন করেন। যাঁদের মধ্যে ছিল পাঁচজন নেপালি শিক্ষার্থী ও পাঁচজন মালয়েশিয়ান শিক্ষার্থী। বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের নামকরণ করা হয়েছে অরিত্র ৫৯।

শিক্ষার্থীদের ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আব্দুল আউয়াল। ময়মনসিংহের সুতিয়াখালীতে অবস্থিত অধ্যাপকের খামারবাড়িতেই দিনভর উৎসবের ব্যবস্থা করা হয়।

প্রায় ১০১ জন শিক্ষার্থী বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পোশাক শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরে ব্যান্ড পার্টির বাজনার তালে তালে খামারবাড়িতে প্রবেশ করেন। দুপুরে আয়োজন করা হয় বাঙালিয়ানা খাবারের। বিকেলে শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে ছবি তোলার পর্ব শুরু হয়। আয়োজন করা হয় খেলাধুলারও। সন্ধ্যায় কেক কাটা হয়। কেক কাটার পরই শুরু হয় সাংস্কৃতিক আয়োজন। দলগত ও একক গান, নাচ, কৌতুকে সবাইকে মাতিয়ে তোলেন শিক্ষার্থীরা। বিদেশি শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করেন তাঁদের দেশীয় গান ও সংস্কৃতি।

ভেটেরিনারি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আল ফারুক বলেন, ‘নানা আয়োজনের কারণে দিনটিতে ক্যাম্পাস কানায় কানায় পূর্ণ থাকে। আউয়াল স্যারের উদ্যোগের কারণে আমরা খুব সুন্দরভাবে অনুষ্ঠানটি করতে পেরেছি। স্যারের মতো ছাত্রবান্ধব শিক্ষক পেয়ে সত্যিই আমরা অনেক আনন্দিত এবং গর্বিত। তা ছাড়া আনন্দঘন এ পরিবেশে অধ্যাপক মো. সহিদুজ্জামান ও অধ্যাপক এম আরিফুল ইসলামের উপস্থিতি আমাদের আরও উজ্জীবিত করেছে। পুরো অনুষ্ঠানটি আজীবন আমাদের স্মৃতিডোরে থাকবে।’

নেপালি শিক্ষার্থী দীপেশ আরিয়াল বলেন, ‘আমরা বাড়ি থেকে অনেক দূরে বাংলাদেশে এসেছি পড়াশোনা করতে। তবে এমন আয়োজন আমাদের পড়াশোনাতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। শিক্ষক যদি পরিবারের সদস্যের মতো আয়োজন করেন, আমরাও পরিবারের অভাব ভুলে থাকতে পারব। ছাত্র–শিক্ষক সম্পর্ক উন্নয়ন করতে এমন ছাত্রবান্ধব শিক্ষক ও আয়োজন উভয়ই প্রয়োজন।’

আরেক বিদেশি শিক্ষার্থী জেনিশ অধিকারী তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে এসে আজকেই প্রথম পাঞ্জাবি পরেছি। কারণ, আমাদের দেশে সাধারণত ছেলেরা পাঞ্জাবি পরে না। মেয়েরাও শাড়ি পরতে অভ্যস্ত নয়। শাড়ি পাঞ্জাবি দিবসের আজকের এই আয়োজন আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

অধ্যাপক মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘আমার ছেলেরা অনেক দূরে অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। তোমাদের খুশিতেই আমি পুলকিত হই, তোমাদের মাঝেই তাদের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাই। শিক্ষার্থীদের যেকোনো প্রয়োজনে আমি পাশে দাঁড়াতে চাই, আনন্দ ও কষ্ট ভাগাভাগি করে নিতে চাই।’

* লেখক: মো. আশিকুজ্জামান, শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]