জন্মদিনের শুভেচ্ছা ‘প্রথম আলো’
আজ প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। পত্রিকাটি ১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে দেশসেরা পত্রিকার স্থানে অবস্থান করছে দীর্ঘদিন ধরে। আমি মফস্সলে বড় হলেও পত্রিকা পড়ার অভ্যাসটা অনেক আগে থেকে। গ্রাম তখনো বিদ্যুৎ–সুবিধার আওতার বাইরে। ডিস কেব্ল, ইন্টারনেট কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বলতে গ্রামে তখন কিছুই ছিল না। ফলে দেশ–বিদেশের খবর জানতে পত্রিকা বা রেডিও টিভির সংবাদের ওপর নির্ভর করতে হতো। গ্রামে সংবাদমাধ্যমে বলতে তখন মূলত বিটিভি আর বাংলাদেশ বেতার ছিল। পত্রিকা খুব কম মানুষ পড়তেন। তবে আমি পত্রিকা পড়ার পাশাপাশি বিবিসি বাংলা শুনতে বেশি পছন্দ করতাম। আমার মাধ্যমিক স্কুলের এক শিক্ষক পত্রিকা রাখতেন।
গ্রামের ভাঙাচোরা রাস্তা পেরিয়ে স্কুলে এসে আমি আগে পত্রিকা খুঁজতাম। এমনও হয়েছে, নির্দিষ্ট দিনের পত্রিকা আমি কয়েক দিন পরে পড়েছি। আমার সেই বয়সেই সমসাময়িক রাজনীতি, সম্পাদকীয়, বিনোদন পেজের প্রতি বেশি আগ্রহ ছিল। খেলাধুলা ও বাণিজ্য পেজে একটু চোখ বোলাতাম। আমার এক মামার রেডিও ছিল। আমরা সন্ধ্যার পর নিয়মিত বিবিসি বাংলা শুনতাম। গ্রামের অনেকে আসতেন সংবাদ শুনতে। তখন লন্ডন স্টুডিও থেকে মানসী বড়ুয়া, নবনীতা চৌধুরী, ঢাকা থেকে কাদির কল্লোলসহ অনেকেই বেশ পরিচিত ছিলেন আমাদের কাছে। বিবিসি বাংলার সঙ্গে বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান শুনতাম ছুটির দিনে। বিশেষ করে গরম, ঈদ ও পূজার ছুটিতে গ্রামে বাড়িতে যেতাম। আমার কাজিন আর আমি হাজারের বেশি গানের প্রথম কলি কণ্ঠশিল্পী, সিনেমার নামসহ লিখে রেখেছিলাম। বিভিন্ন কুইজ প্রতিযোগিতায় আমরা পোস্ট অফিসের মাধ্যমে উত্তর পাঠাতাম। অপেক্ষা করতাম কবে কখন রেডিওতে আমাদের নাম বলবে। নাম ঘোষণা করলে খুব ভালো লাগত। কলকাকলি ও আইসিআই ইউনিভার্সিটি নামে দুটি খ্রিষ্টান সংস্থায় লিখতাম। তারা বই পাঠাত। ডাকপিয়নের হাত থেকে বই পেতে ভালো লাগত। এসবই ২০০৫ থেকে ২০০৮ সালের ঘটনা। তখন থেকেই মূলত সংবাদপত্র, রেডিও, টিভির সংবাদ শোনা ও দেখার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়।
এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হলাম। তখন মেসে প্রথম আলো পত্রিকা নেওয়া হতো। পত্রিকা আসার সঙ্গে সঙ্গে কাড়াকাড়ি শুরু হতো, কে আগে পড়বে। আমি চলে যেতাম উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরিতে। প্রথম আলোর সঙ্গে আরও পত্রিকা পড়তে পারব ভেবেই সময়ক্ষেপণ করতাম না। তখন থেকেই প্রথম আলোর প্রতি ভালো লাগা শুরু। অন্য পত্রিকা পড়লেও প্রথম আলো না পড়া হলে মনে হতো, কোনো সংবাদ বুঝি বাদ পড়ল। পত্রিকার সঙ্গে বিভিন্ন ম্যাগাজিন আমার মতো অনেকের মন কেড়েছে। বিশেষ করে ‘রস+আলো’ তখন আমার চাই–ই চাই। তবে এখন অধুনা, নকশা বেশ জনপ্রিয় আয়োজন প্রথম আলোর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় পত্রিকার খুঁটিনাটি পড়তাম। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ও সমসাময়িক ঘটনা বেশি পড়া হতো। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর দেখেছি, ‘বন্ধুসভা’ নামে তরুণদের সংগঠনটি খুব জনপ্রিয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের পত্রিকা রুমে প্রথম আলো পড়ার জন্য অনেককে অপেক্ষা করতে দেখেছি। এমনকি আমি নিজেও অপেক্ষা করেছি। আমার মনে হয়েছে, সাহসী ও ভিন্নধারার সংবাদ পরিবেশনা এই পত্রিকার প্রতি মানুষের আকর্ষণের মূল কারণ। এ ছাড়া অ্যাসিড–সন্ত্রাস রোধ, মাদকবিরোধী আন্দোলন, আপৎকালীন ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা, গণিত অলিম্পিয়াড, কিশোর আলোসহ বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে এ দেশের মানুষের মধ্যে আলাদা আবেদন তৈরি করতে পেরেছে প্রথম আলো। তবে বেশ কিছু বিতর্কও আছে পত্রিকাটি ঘিরে। এরপরও এখন পর্যন্ত এটি দেশের প্রধান ও সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সংবাদপত্র।
করোনার সময় থেকে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আমি প্রথম আলোর ‘নাগরিক সাংবাদ’-এ বেশ কয়েকটি লেখা লিখেছি। পাঠকের ছবি সেকশনে আমার তোলা অনেক ছবি প্রকাশিত হয়েছে। এখনো প্রথম আলোতে নিজের লেখা বা তোলা ছবি প্রকাশিত হলে আনন্দ অনুভব করি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে একজন লেখক ও পাঠক হিসেবে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে প্রথম আলো আরও অনেক বছর জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করবে, এমনটাই প্রত্যাশা রইল।
*লেখক: মো. শাহিন রেজা, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়