মানিকগঞ্জে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস পালন

সারা দেশের মতো মানিকগঞ্জেও আজ রোববার (২৮ এপ্রিল) জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস পালিত হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য—‘সুস্থ শ্রমিক, শোভন কর্মপরিবেশ, গড়ে তুলবে স্মার্ট বাংলাদেশ’। দিবসটি পালন উপলক্ষে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, মানিকগঞ্জ-এর যৌথ উদ্যোগে সকাল সাড়ে ৯টায় শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসন, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধি, মানিকগঞ্জের বিভিন্ন কারখানা ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, সেফটি কমিটির সদস্যরা র‌্যালি ও আলোচনা সভায় অংশ নেন।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার। স্বাগত বক্তব্যে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, মানিকগঞ্জের উপমহাপরিদর্শক মো. মোজাম্মেল হোসেন দিবসটির পটভূমি ও গুরুত্ব তুলে ধরেন। সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুরজাহান লাবনী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. তরিকুল ইসলাম এবং আকিজ টেক্সটাইল লিমিটেড ও তারাসিমা অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপকেরা বক্তব্য দেন। বক্তারা কর্মস্থলে দুর্ঘটনা হ্রাস ও নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের শিল্পকারখানায় টেকসই শোভন কর্মপরিবেশ তৈরির প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

শ্রমজীবী মানুষের অধিকার, কল্যাণ ও মর্যাদা এবং পেশাগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য স্বাধীনতার পর থেকেই সরকার বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ১৯৭২ সালের ২২ জুন বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সদস্যপদ লাভ করে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার ৩৬টি আইএলও কনভেনশন অনুস্বাক্ষর করেছে, যার মধ্যে আটটি এবং সব কটি মৌলিক কনভেনশন রয়েছে।

কর্মক্ষেত্রে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটির গুরুত্ব, স্টেকহোল্ডারদের ভূমিকা ও দায়িত্ব স্পষ্ট করে সরকার ২০১৩ সালে ‘জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি নীতিমালা, ২০১৩’ প্রণয়ন করেছে। এর আলোকে জাতীয় শিল্প, স্বাস্থ্য ও সেফটি কাউন্সিল গঠন ও কার্যকর করা হয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্তৃক শ্রমিকদের সুচিকিৎসার জন্য নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গীতে দুটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের কাজ চলছে। দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা দেওয়াসহ শ্রমিক পরিবারের মেধাবী সন্তানদের উচ্চশিক্ষার জন্য শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

কর্মক্ষেত্রে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৬ সাল থেকে প্রতিবছর ২৮ এপ্রিল জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস (OSH Day) রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হচ্ছে। জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবসে সরকার OSH উত্তম চর্চার ক্ষেত্রে কারখানাকে OSH Good Practice Award দেওয়ার মাধ্যমে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি–সংক্রান্ত গবেষণা ও প্রশিক্ষণের জন্য রাজশাহীতে ১৭ একর জায়গার ওপর আন্তর্জাতিক মানের ন্যাশনাল OSH ইনস্টিটিউট নির্মাণ করেছে সরকার, যা পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়। এ ছাড়া শিল্পকারখানা ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনারোধে বিডার নেতৃত্বে এবং প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে বিদ্যুৎ, গ্যাস, ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদপ্তর, গণপূর্ত অধিদপ্তর, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর বা সংস্থার সমন্বয়ে সমন্বিত পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]