ব্লু বার্ড স্কুলে ৩ দিনব্যাপী স্বাধীনতা দিবসের চিত্রপ্রদর্শনী
মুক্ত মঞ্চে বসে তুলির সাহায্যে সাদা কাগজটিকে শুধু আঠায় লেপে নিল, তারপর রংমাথা পলিথিন দিয়ে চেপে চেপে বসিয়ে দিল কাগজে, খানিক পরেই তুলির আঁচড়ে এঁকে ফেলল সন্ধ্যার আকাশ। কতই–না সুন্দর আমার দেশের সন্ধ্যার আকাশ। মুগ্ধ হয়ে দেখলাম ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফির আঁকা দৃশ্য।
আর ভাবছি, হাজার হাজার বছর ধরে এই চিত্রশিল্প আঁকড়ে ধরে রেখেছে মানুষের আনন্দ-বেদনা, আন্দোলন-সংগ্রাম, স্বাধীনতা, প্রাকৃতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশ, কৃষক-শ্রমিক এমনকি রাজার জীবনযাপনও। প্রজন্মের পর প্রজন্ম দেখতে ও উপলব্ধি করতে পারবে। মহাবিশ্ব থেকে শুরু করে চারপাশ অপূর্ব রূপে চিত্রপটে সাজানো সম্ভব। চিত্রকলা শুধু একটি গুণ নয়, বরং শিক্ষার্থীদের মেধা-মনন বিকাশ এবং সৃষ্টিশীল ভাবকে জাগ্রত করতে বড় এক শক্তিশালী মাধ্যম। এতে যেমন মনের মাধুরী মেশানো সৌন্দর্য ফুটে ওঠে, একইভাবে শক্ত-কঠোর আন্দোলনও প্রকাশ পায়।
স্কুলের শ্রেণিকক্ষ থেকে শুরু করে মাঠপর্যন্ত খুদে আঁকিয়েরা রংতুলি নিয়ে ব্যস্ত। তাদের চোখে–মুখের স্বপ্নের আঁচড় পড়ছে সাদা কাগজে। আঁকছে আবহমান গ্রামবাংলার চিত্র, নদ-নদী, পাহাড়, চা-বাগান, শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, জাতীয় পতাকা, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ আর ’২৪–এর গণ–অভ্যুত্থানের চিত্র। উপলব্ধি করতে পারছিলাম, স্নিগ্ধ মনে মাতৃভূমির মাটির প্রতি টান। শিশুমনের সুপ্ত ভালোবাসার রঙে ফুটে উঠছে সব চিত্রকর্মে।
দৃষ্টি নন্দিত সব দৃশ্যকলা চোখ জুড়ানো। তাদের এত আয়োজন স্কুলটিকে রঙিন করার পূর্বপ্রস্তুতি। প্রতিবছর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় ব্লু বার্ড স্কুলে। স্কুল আঙিনা থেকে শুরু করে মাঠ সাজানো হয় শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবিতে। অঙ্কনের বিষয় থাকে জাতীয় পতাকা, স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, বাংলার ফুল-ফল, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, গ্রামবাংলার দৃশ্য। খুদে শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করার জন্য দেড় যুগের বেশি সময় ধরে স্কুলের এই উদ্যোগ। বলা যায়, এটি স্কুলের মৌলিক আয়োজনে রূপ নিয়েছে। প্রতিবছর শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক মুখিয়ে থাকেন স্বাধীনতা দিবস চিত্রপ্রদর্শনী উৎসবটির জন্য।
২৩ মার্চ আয়োজনটি জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উদ্বোধনী পর্বে অতিথি কিশোরগঞ্জের ভৈরব ফাইন আর্টস একাডেমির পরিচালক নুর হোসেন। চিত্রপ্রদর্শনী আয়োজনটি চলবে ২৫ মার্চ পর্যন্ত। কিশোরগঞ্জের ব্লু বার্ড স্কুলের প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদা আমিন পলি বলেন, ‘দেশকে নিয়ে স্বপ্ন বুনতে এবং স্বাধীনতার মমার্থ শিক্ষার্থীদের কোমল মনে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছি।’
প্রতিষ্ঠানের পরিচালক সুমন মোল্লা বলেন, ‘দেড় যুগের অধিক সময় ধরে স্বকীয়ভাবে ব্লু বার্ড স্কুল চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করছে। দেশমাতৃকার প্রতি শিক্ষার্থীদের মননে, চেতনা বিকাশে আয়োজনটি সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।’
প্রতিষ্ঠানের গবেষণা বিভাগের প্রধান নাফিস রহমান বলেন, ‘দেড় যুগের অধিক সময় ধরে স্বকীয়ভাবে ব্লু বার্ড স্কুল চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করছে। দেশমাতৃকার প্রতি শিক্ষার্থীদের মননে, চেতনা বিকাশে আয়োজনটি সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।’
*লেখক: প্রিয়াংকা, সহকারী প্রধান শিক্ষক, ব্লু বার্ড স্কুল, ভৈরব
‘নাগরিক সংবাদ’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]