শখের খোঁজে সুখ পাহাড়ে

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

মাহমুদ একজন মধ্যবয়সী মানুষ। দিনরাত একগাদা দায়িত্বের মধ্যে বন্দী হয়ে গেছে। তার সংসার, চাকরি, আর টানা নিত্যদিনের জীবনে সুখের খোঁজে হারিয়ে গিয়েছিল শখের সেই চেনা পথ। কিন্তু আজ সকালে সে একটি বিশেষ অনুভূতি নিয়ে ঘুম থেকে উঠল। মনে হলো, কিছু একটা করতে হবে, কিছু একটা পেতে হবে।

সকালবেলা জাগার পর মাহমুদ সিদ্ধান্ত নিল যে সে পাহাড়ে যাবে। বরাবরই তার ইচ্ছা ছিল পাহাড়ে যেতে, প্রকৃতির কাছে গিয়ে নিজের শখের খোঁজে—ছবির জন্য, কবিতার জন্য। পাহাড়ের শীর্ষে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় দেখার শখ তার দীর্ঘদিনের ছিল। কিন্তু সংসারের চাপের কারণে সে তা কখনো করতে পারেনি।

মাহমুদ তৈরি হয়ে বের হলো। গন্তব্য পাহাড়ের পাদদেশ। সেখানে পৌঁছানোর পর সে পাহাড়ের সৌন্দর্যে বিমোহিত হলো। প্রকৃতির নিস্তব্ধতা, সবুজের গভীরতা, আর পাহাড়ের স্রোতস্বিনী নদী—এ সবই যেন তার শখের প্রতিফলন। সে কিছু ছবি তুলল, কিছু কবিতা লিখল। তার মনে হলো, এটাই সত্যিকারের সুখ।

পাহাড়ের শীর্ষে উঠে, সূর্যোদয়ের আলোতে নিজেকে হারিয়ে ফেলল। ওই মুহূর্তে তার মনে হলো, শখের জন্য মানুষ কত কিছু করতে পারে, আর সে এখন তার জীবনের সেই শখের বাস্তবায়ন করছে। সত্যিই, শখ মানুষকে পাগল করে তোলে। মানুষের শখের পরিমাপ হয় না, এটি এক অদ্ভুত অনুভূতি।

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

কিন্তু পাহাড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে মাহমুদ বুঝতে পারল, তার শখ কেবল এক জায়গায় সীমাবদ্ধ নয়। এটি তার জীবনের সব জায়গায় বিস্তৃত। সে কী করবে? শখ পূরণের জন্য কি সে অপরাধের পথে পা বাড়াবে? এ প্রশ্নের উত্তরে সে মাথা নাড়ে। সে জানে, তার শখকে পূরণের জন্য তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

একটি নতুন শখ গড়ে তোলার জন্য, তার পুরোনো শখগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে। পাহাড়ে থেকে ফিরে আসার পথে মাহমুদ এই সিদ্ধান্ত নিল। সে কেবল পাহাড়ে গিয়ে খুঁজে পেয়েছে শখের নতুন রূপ, যা তার পুরোনো জীবনের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছে।

সেই দিনের পর মাহমুদ প্রতিদিনই তার নতুন শখগুলোর খোঁজে বের হলো। মাঝেমধ্যে ছবি তোলা, কবিতা লেখা—এগুলো তার জীবনের অংশ হয়ে উঠল। পাহাড়ের প্রতিফলন তার মনে গেঁথে গেল, আর সে জানল, শখের খোঁজে সুখ কেবল পাহাড়েই নয়, বরং নিজের অন্তরে।

এভাবেই মাহমুদ তার নতুন শখের খোঁজে সুখের সন্ধান পেল।

*লেখক: মুহাম্মদ মুহিউদ্দীন ইবনে মোস্তাফিজ, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, চান্দগাঁও, চট্টগ্রাম।