১৮ বছরে পদার্পণ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের
১৭ বছর অতিক্রম করে ১৮–তে পদার্পণ করেছে প্রাণের বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। আজ ২০ অক্টোবর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন হচ্ছে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দিনটির সঙ্গে আমার সম্পর্ক একটু ভিন্ন। ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। ওই দিন পুরো ঢাকা বৃষ্টির পানিতে টইটম্বুর ছিল। খুব কষ্ট করে কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিই। দিনটির জন্যই আজ আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু যখন জানতে পারলাম, ওই দিনই ছিল বিশ্ববিদ্যালয় দিবস, এরপর ২০১৮ থেকে দিবসটি উদ্যাপন আমি আর না করে পারিনি। সমস্যা বাধে করোনার সময় দুই বছরে। এবার আবারও জাঁকজমকভাবে উদ্যাপন করা হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ২০২২।
১৮ বছরে নানা বাধা অতিক্রম করে বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশে একটি ভালো অবস্থান তৈরি করেছে। ছোট এই ক্যাম্পাসে প্রত্যেহ সবার সঙ্গে দেখা হওয়া একটা নতুন মাত্রা যোগ করে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার অংশগ্রহণে আজ জবি এসেছে সাফল্যের স্বর্ণসিঁড়িতে। নানামুখী ইতিবাচক পদক্ষেপ জবির সম্মান আরও বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জবিই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, যার প্রতিটি বিভাগে সেমিস্টার পদ্ধতিতে পাঠদান শুরু হয়েছিল। গবেষণায়ও প্রমাণিত হয়েছে বিষয়টিকে শিক্ষার্থীরা অনেক ইতিবাচকভাবে দেখেছেন।
যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন এসেছে, তাদের জন্য একরকম অনুভূতি এই দিবসকে ঘিরে। তাদের মধ্যে নতুনত্বের ছাপ ফুটে উঠবে। যারা কয়েকটি বছর পার করেছে, তাদেরও একটু ভিন্ন রকম। কেউ আসবে কেউ আসবে না। সেই নিয়মে এই বছরের বিশ্ববিদ্যালয় দিবসটি আমার জন্য স্মরণীয় হবে। কেননা অনার্সে এটাই শেষ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আমার জন্য। লিখতে নিলে নানা স্মৃতি আর আবেগ চলে আসবে, কিন্তু লিখে শেষ করা যাবে না।
বন্ধুত্বের বাজারে এখানে, এখনো যাদের পেয়েছি, তারা জীবনের অনেক অংশজুড়ে। কথায় আছে, বন্ধুত্বের সম্পর্ক রক্তের সম্পর্কের চেয়েও বিশাল। সেই মিলনমেলা আজ ভোর থেকেই দেখতে পাচ্ছি। এখানে বর্তমানদের পাশাপাশি অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা, যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে নিজ নিজ পেশায় নিয়োজিত, শুনলাম ছুটি নিয়ে অনেকেই প্রিয় এই অঙ্গনে ছুটে আসছেন। এভাবেই প্রাণের স্পন্দনে মুখর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
একটি মাত্র মেয়েদের হল বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হলো বছরখানেক হবে। তবে নেই ছেলেদের জন্য আবাসনব্যবস্থা। এরপরও প্রতিটি শিক্ষার্থী নিজের জায়গা থেকে ভালো কিছু করার চেষ্টা করে এবং শিক্ষা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় তাদের অবস্থান উপরের দিকে।
জবি আজ ১৮ বছরে পা রাখল। সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতায় পড়েছিলাম, ১৮ বছর মানে না কোন বাধা, বছরটি দুর্বার, মেনে নেয় না কোন সংকোচ। সঁপে নিজেকে শপথের কোলাহলে। কাজেই প্রত্যাশা, সব বাধা উপেক্ষা করে জবি এগিয়ে যাবে স্বীয় মহিমায়। এই বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে যেন আমাদের শপথ হয় বিশ্ববিদ্যালয় হবে আধুনিক, থাকবে না কোনো সাম্প্রদায়িকতার বীজ।
*লেখক: সিফাত রাব্বানী, শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।