সাবেক রাষ্ট্রদুত এম মতিউর রহমানের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
সাবেক মন্ত্রী, সচিব ও রাষ্ট্রদুত এম মতিউর রহমানের মৃত্যবার্ষিকী আজ বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি)। আজ তাঁর অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ৯৫ বছর বয়সে ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
এম মতিউর রহমান ১৯২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর পিরোজপুরের কাউখালি থানার জয়কুল গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কাউখালি মাধ্যমিক স্কুল থেকে ম্যট্রিক পাস করার পর ১৯৩৮-১৯৪২ সাল পর্যন্ত বরিশাল বিএম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। সর্ব ভারতীয় মুসলিম স্টুডেন্টস ফেডারেশনের সদস্য হিসাবে ১৯৪১ সালে তিনি সিরাজগঞ্জে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগ কনভেনশনে বরিশাল ছাত্র প্রতিনিধি হিসাবে যোগদান করেন। বিএম কলেজে অধ্যয়ন শেষে এম মতিউর রহমান ১৯৪২-১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং এমএ ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। এ সময়কালে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাধারণ সম্পাদক এবং এস এম হলের ছাত্র সংসদের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে তিনি আজিমপুর দায়রা শরীফের পীর হযরত শাহ সূফি লাকিতউল্লাহর (রহ.) কন্যা সৈয়দা আসিয়া বেগমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
এম মতিউর রহমান বিশাল পেশাগত জীবনের অধিকারী ছিলেন। তিনি ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন এবং ১৯৪৯ সনে পাকিস্তানের প্রথম সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। ১৯৬০ সালে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের উপসচিব পদে নিয়োগ লাভ করেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি থাকাকালে তৎকালীন সরকারের ইকোনোমিক পুলের সদস্য নিযুক্ত হন। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের ডেপুটি সেক্রেটারি হিসাবে পদোন্নতি পেয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে কাজ করেন, এরপর ১৯৬২ সালে এম মতিউর রহমান অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষের সদস্য (অর্থ) হিসাবে যোগদান করে পরিকল্পনা ও উন্নয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ১৯৬৪ সালে এম মতিউর রাহমান কেন্দ্রীয় সরকারের যুগ্ম সচিব হিসেবে যোগদান করেন এবং তিনি ন্যাশনাল শিপিং করপোরেশনের ফাইন্যান্স ডাইরেক্টরের পদে নিয়োজিত হন। ১৯৭০ সালে তিনি সরকারের অতিরিক্ত সচিব পদে কর্মরত ছিলেন এবং তিনি এ সময়ে পাকিস্তান ট্রেডিং করেপোরেশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।
পাকিস্থানে বসবাসকারী বাঙালি সমিতির সভাপতি ছিলেন এম মতিউর রহমান। ১৯৭১ সালে বাঙ্গালি জনগোষ্ঠীকে বিভিন্নভাবে সাহায্য–সহযোগিতা করার কারণে এবং বাংলাদেশি আন্দলনকে সমর্থন জানানোর কারণে করাচিতে তাঁকে বন্দী করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। ১৯৭৩ সালে এম মতিউর রহমান আন্তর্জাতিক রেডক্রসের সাহায্যে পরিবারসহ নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন।
পরবর্তীতে এম মতিউর রহমান শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে যোগ দেন। ১৯৭৬ সালে এম মতিউর রহমান বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৮২ সালে তিনি জাপান ও কোরিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হন। তিনি তার নিজ জেলা পিরোজপুরের আইরন-জয়কুল হাই স্কুল, জয়কুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জয়কুল আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় এবং কারিগরি স্কুল ও কলেজের মতো অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি কাউখালী ডিগ্রি কলেজের (বর্তমান সরকারি কলেজ) প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন। জাতীয় সাহিত্য সংসদ সমাজকল্যাণে অবদানের জন্য তাঁকে স্বর্ণপদক প্রদান করে। বরিশাল বিভাগ সমিতি তাঁকে শেরেবাংলা পদক প্রদান করে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি নানাবিধ দায়িত্ব পালন করে এসেছেন এবং দেশের মানুষের আর্থ–সামাজিক উন্নয়নে তিনি সদা সচেষ্ট ছিলেন। এম মতিউর রাহমানের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে সকলের কাছে দোয়া প্রার্থী।