দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির প্রয়োজনীয়তা ও করণীয়

রাষ্ট্রব্যবস্থার উন্নয়নের মূল পাথেয় বা ভিত্তি স্তর হচ্ছে দক্ষ জনশক্তি। দক্ষ জনশক্তি রাষ্ট্রের ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙা করে অর্থনীতির চালিকা শক্তিকে সচল করে। একটি রাষ্ট্রের অদক্ষ, অশিক্ষিত ও বেকার কর্মক্ষম মানুষকে রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতায় দীক্ষিত করে দেশ ও বহির্বিশ্বে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে সহায়তা করাকে দক্ষ জনশক্তি বলা হয়। দক্ষ জনশক্তি হচ্ছে  দীর্ঘমেয়াদি একটি প্রক্রিয়া, যা নিয়মসংবলিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। দক্ষ জনবল গঠনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের উন্নয়নকাজ ত্বরান্বিত হয়। একটি আদর্শ রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে দক্ষ জনশক্তির বিকল্প নেই। স্বাভাবিকভাবে দেশের অদক্ষ  মানুষের মাঝে কর্মক্ষম মনোভাব সৃষ্টি করে কর্মদক্ষতার উন্নয়ন সাধন করাই হচ্ছে দক্ষ জনশক্তি গঠন করার প্রাথমিক ও মূল উদ্দেশ্য।

দক্ষ জনশক্তি রাষ্ট্রের আলোচিত একটি বিষয়।
প্রতিটি রাষ্ট্রের অর্থনীতির চালিকা শক্তিগুলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। অর্থনীতির চালিকা শক্তিগুলো সে দেশের সক্ষমতা, আয়তন, মাথাপিছু আয়, প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের ওপর নির্ভর করে। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তিগুলোকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হয় দক্ষ জনশক্তি প্রয়োগের দ্বারা। এতে দারুণ সমন্বয় সাধন হয় রাষ্ট্রব্যবস্থাপনায়। কারণ, এতে রাষ্ট্রের স্বাভাবিক জিএনপি ও জিডিপির মান বৃদ্ধি হয়। রাষ্ট্রের রাজস্ব খাত সচ্ছল হওয়ার দরুন মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। রিজার্ভে ঘাটতি সহজে সৃষ্টি হয় না। তা ছাড়া অর্থনীতির বিপর্যয় ও ঘাটতি বাজেটে সৃষ্টিকৃত সমস্যা সমাধানের পথ রচিত করে দক্ষ জনশক্তি।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে দক্ষ জনশক্তি। দেশগুলো তাদের মানবাধিকার চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তাকে প্রাধান্য দিয়ে দক্ষ জনশক্তি নির্মাণ করছে। এতে ওই দেশের শক্ত ভিত্তি স্থাপনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নশীলতার গতি বৃদ্ধির পাশাপাশি বিশ্ববাজারেও নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশ রয়েছে, যাদের ভিত্তি সম্পূর্ণরূপে দক্ষ জনশক্তির ওপর নির্ভরশীল। কারণ, দেশগুলো তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের পরিস্থিতি অবলোকন করে স্থায়ী কাঠামো নির্মাণে মূল প্রকল্প তৈরি করেছে দক্ষ জনশক্তিকে কেন্দ্র করে। এতে দেশগুলোর নাগরিক চাহিদা অর্জন হচ্ছে এবং পূরণ হচ্ছে অর্থনীতির ঘাটতিগুলো।

দেশে এখনো দক্ষ জনশক্তি নির্মাণের পথ পুরোপুরি তৈরি হয়নি। সেটা দেশের প্রেক্ষাপট ও বাস্তব চিত্র লক্ষ করলে সহজে উপলব্ধি করা যায়। আমাদের দেশে সামাজিক সমস্যা প্রকট। দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে যৌতুক, বাল্যবিবাহ, নারী সমস্যা, মানব পাচার, লিঙ্গবৈষম্য প্রমুখ সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারের হার বাংলাদেশে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এ অঞ্চলের ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। প্রতিবছর আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দক্ষ জনশক্তি গঠনে তৃণমূল পর্যায়ে সামাজিক কাঠামোকে সুশৃঙ্খল করা দেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এতে দেশের সামাজিক সমস্যা লাঘব হবে। চিন্তাধারা ও মনোভাবে আধুনিকতার ছাপ পরিলক্ষিত হবে। দেশে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতের প্রসার ও বিকাশ হবে। সে জন্য দক্ষ জনশক্তি নির্মাণকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে হবে।

আঞ্চলিক রাজনীতি থেকে শুরু করে বিশ্বরাজনীতিতে বাংলাদেশের প্রভাব বেশ ইতিবাচক। সেই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে দক্ষ জনশক্তি নির্মাণ করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রথমত, দেশের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। মৌলিক বিষয় পঠনের পাশাপাশি কর্মমুখী বিষয়বস্তু সংযুক্ত করতে হবে।

কম্পিউটার, মৎস্য, কৃষি, অটোমোবাইলসহ আধুনিক চাহিদাসম্পন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষা ও সেবার মান নিশ্চিত করতে হবে। আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে রপ্তানিনির্ভর হতে হবে। সে জন্য নিজেদের সীমাবদ্ধকৃত সম্পদের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে হবে। যাতে দেশে সর্বোচ্চসংখ্যক উৎপাদনকৃত পণ্য ও শস্যের ফলন হয়। অর্থনীতি ও সামাজিক খাতের সূচকগুলোতে ভারসাম্যপূর্ণ স্থিতিশীল অবস্থা বজায় রাখতে হবে। তা ছাড়া রেমিট্যান্স আমাদের দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত। সে জন্য বিদেশ থেকে অর্থ আনয়নে নিয়মনীতি শিথিল করতে হবে। যাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় চলমান থাকুক সব সময়। এতে দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক সুরক্ষার মানে আমূল পরিবর্তন হবে। দেশের ইতিবাচক পরিবর্তনে এর ভাবধারা অগ্রগতি হবে বিশ্বব্যাপী।


*লেখা: শাহ মুনতাসির হোসেন মিহান, শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়