বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা: কিছু প্রস্তাব
এ বছরের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধ প্রায় শেষের দিকে। যাঁরা এ ভর্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, তাঁরাই জানেন ঘরে ও বাইরে কতটুকু মানসিক চাপ তাঁদের মোকাবিলা করতে হয়েছে। একদিকে পড়াশোনার চাপ, অন্যদিকে অনলাইনে ভর্তি ফরম পূরণ করতে গিয়ে নানা ধরনের বিড়ম্বনা, এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার জন্য দৌড়াদৌড়ি, অসচ্ছলদের জন্য ভর্তি পরীক্ষার ফি, যাতায়াত ও আবাসন খরচ জোগাড় করাসহ নানাবিধ সমস্যা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিপ্রক্রিয়াকে কঠিন বিষয়ে পরিণত করেছে। শারীরিক শ্রমের সঙ্গে মানসিক চাপ, আর্থিক সংকট ইত্যাদি বিষয় একত্র হয়ে ভর্তি–ইচ্ছুকদের বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে।
গত কয়েক বছরে সংবাদপত্রে পড়েছি, কিন্তু এ বছর নিজের সন্তান ও আত্মীয়ের সন্তানদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কারণে এ হয়রানি আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছি। কিছু লেখার জন্য বিবেকের তাগিদ অনুভব করেছি। শিক্ষার্থীদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিপ্রক্রিয়া সহজ করার জন্য অভিভাবক ও একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে কিছু প্রস্তাব তুলে ধরছি-
১. বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের আভিজাত্যবোধ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে তাদের অবশ্যই একক এবং সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় একীভূত হতে হবে।
২. প্রতিটি অনুষদের জন্য পৃথকভাবে একক ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করতে হবে। এ জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করা যায়-
ক. মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা একই দিনে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে অনুষ্ঠিত হবে;
খ. বুয়েট, চুয়েট, কুয়েট, রুয়েট ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদগুলোর ভর্তি পরীক্ষা একযোগে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে;
গ. সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদগুলো একত্র হয়ে একটি একক ও সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করবে। অনুরূপভাবে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ বা বাণিজ্য অনুষদ, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এবং আইন অনুষদগুলো আলাদাভাবে একক ও সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করবে;
ঘ. কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও একত্র হয়ে একক ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করবে।
৩.দেশব্যাপী ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষার্থীরা নিকটস্থ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন।
৪. ভর্তি ফরম পূরণের জন্য একটি অভিন্ন ‘অনলাইন পোর্টাল’ তৈরি করতে হবে। শিক্ষার্থীরা সেই পোর্টালে লগইন করে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কেবল একটি ফরম পূরণ করবেন।
৫. এক সপ্তাহে কেবল একটা অনুষদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ ক্ষেত্রে শুক্রবার দিনটিকে নির্দিষ্ট করা যায়। প্রয়োজনে দুটি শিফটে পরীক্ষা নেওয়া যায়।
পরিশেষে বলব, শিক্ষার্থীরা আমাদেরই সন্তান। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যাঁরা নীতিনির্ধারক পর্যায়ে আছেন, তাঁদের অনেকের সন্তানও ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তাই পরীক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা, অভিভাবকদের আর্থিক সামর্থ্য ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিপ্রক্রিয়া ঢেলে সাজানোর অনুরোধ করছি। ভর্তি পরীক্ষার স্মৃতি শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দময় হয়ে থাকুক, ভর্তিযুদ্ধের দুঃস্বপ্ন শিক্ষার্থীদের অন্তর থেকে মুছে যাক।
*লেখক: শারমিন আফরোজা সুলতানা, একজন অভিভাবক, ঢাকা
*নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]