অমর একুশে সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে

নয়াদিল্লিতে রয়েছি কিছুদিন হলো। বাংলা অনুষ্ঠান দেখা আর বাংলাভাষী মানুষের সঙ্গে কথা বলার তাগিদ মন থেকে। নয়াদিল্লিতে একুশে অনুষ্ঠানমালা কেমন হয়, তা দেখার আগ্রহ ছিল। অবশেষে নয়াদিল্লি প্রথম আলো প্রতিনিধি সৌম্য বন্দোপাধ্যায় দাদা ব্যবস্থা করে দিলেন। বাংলাদেশ হাইকমিশনার মিনিস্টার (প্রেস) শাবান মাহমুদ ভাইয়ের মাধ্যমে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করলাম ভারতের নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন অফিসে। এর আগে চেষ্টা করলাম আর কোথাও অমর একুশে অনুষ্ঠান হয় কি না, তা জানার।

যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলাদেশ হাইকমিশন, নয়াদিল্লি, ভারতে ‘মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালিত হয়েছে। আমি সন্ধ্যায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে প্রবেশ করার মুহূর্তে হাইকমিশনার মো. মুস্তাফিজুর রহমান বক্তব্য দিচ্ছিলেন। অন্য রাষ্ট্রদূতেরাও বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁরা নিজ দেশ, ভাষা ও সংস্কৃতি তুলে ধরেন। বসনিয়া হার্জেগোভিনার রাষ্ট্রদূতের লেখা কবিতা বাংলায় আবৃত্তি করে শোনানো হয়। বিষয়টি আমার কাছে ভালো লেগেছে।

কথার ফাঁকে ফাঁকে চলে গান, নাচ ও অন্যান্য পরিবেশনা। প্রথমেই বাংলাদেশের পরিবেশনা ছিল। দেশের বিভিন্ন ধরনের বাংলা গানের তালে বাংলাদেশের নৃত্যশিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন। এরপর কিরগিস্তান দলের তাদের নিজস্ব ভাষার গান-নাচও ছিল উপভোগ করার মতোই। কিরগিস্তানের একটি মেয়ে তাঁদের আঞ্চলিক বিভিন্ন ধরনের খাবার দিয়ে সবাইকে আপ্যায়িত করেন। কয়েক দশক ধরে জাপানের জনপ্রিয় ডুয়েট গান পরিবেশন করেন জাপানি শিল্পীরা। হাঙ্গেরির পাপেট শো ও পাপেট ড্রামা পরিবেশনার মধ্যে দিয়ে শেষ হয় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানমালা। অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের সৌজন্যে রাতে ডিনার আয়োজন করে বাংলাদেশ হাইকমিশন।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আকর্ষণ ছিল ভিন্ন ভাষাভাষীর মনোজ্ঞ পরিবেশনা। সবাই তাদের নিজ নিজ দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা—নৃত্য, সংগীত ও আবৃত্তির মধ্য দিয়ে তুলে ধরেন। অন্তত চার থেকে পাঁচ ভাষায় পরিবেশনাগুলো সাজানো ছিল। সবার পরিবেশনাই দর্শকের মধ্যে ভীষণভাবে প্রশংসিত হয়। নয়াদিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা ছিল বিশ্বজনীন, যেখানে বাংলাদেশ নিজ সংস্কৃতি বিশ্বের দরবারে সফলভাবে তুলে ধরে।

লেখক: ব্যাংকার