শিক্ষকদের চরণ নিমিত্তে

ফাইল ছবি: প্রথম আলো

এমন কিছু মানুষ আছে যারা হৃদয়ের মণিকোঠায় গেথে থাকে। ভাবনায়, কল্পনায়, মনের আঙিনায় অনেক কথা, অনেক আবেগ তাদের জন্য! এতো ভালোবাসা, এতো আবেগ কিন্তু মুখ ফুটে বলা যায়। কোথায় যেন আটকে যায়!

এত কথা মনে, কত কথা পেটে কিন্তু মুখে আসে না, যায় না বলা, হয়তো লজ্জায়, হয়তো ভালোবাসার তীব্রতা মুখে প্রকাশ করার নয়! এই ভালোবাসা শুধু কাছে থেকে নয়, দূর থেকেও ভালোবাসা যায়! সেই ভালোবাসার মানুষদের ঠোটের কোণে হাসি ফোটানো যায়। সেই হাসির মাঝে লুকিয়ে থাকে জনম জনমের চাওয়া ভালোবাসার ছোয়া!

জীবনে চলার পথে অনেক প্রিয় শিক্ষক আসে আমাদের। কিন্তু কেউ কেউ লেগে থাকে হৃদয়ে কিংবা মস্তিষ্কের থকথকে রক্তপিণ্ডে! হৃদপিণ্ডের সিস্টোল ডায়াস্টোলে।
ছোটবেলার মধুর কত কথাই তো মনে পড়ে। মনে পড়ে হাসি আবার ক্ষণে ক্ষণে কাঁদিও। এক শিক্ষক ছিলেন আমার ঘুম ভাঙাতেন এসে, কোলে বসিয়ে পড়াতেন।

আমাকে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিযোগিতায় নিয়ে যেতেন, আমার খেলা দেখতে যেতেন, এক টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আমাকে উপহার দিলেন, পরীক্ষার সময় কলম উপহার দিতেন, ঈদ পুজায় টাকা দিতেন, ঘুরতে নিয়ে যেতেন, মানুষটা সবচেয়ে যে কাজটা বেশি করেছেন তা হচ্ছে মানুষের জীবন গঠনে মৌলিক যেসব শিক্ষা থাকে সেগুলো শেখাতেন। জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক বোধহয় উনিই আমার। শ্রদ্ধা তাপস স্যার।
এমন আরো একজন শিক্ষাগুরু পেয়েছিলাম মাধ্যমিকের ঠিক আগেই। একদম শেষ হয়ে যাওয়া একটা ছাত্র থেকে দারুণ এক ফলাফলের পথে এক অনন্য সহযোগী হয়ে পাশে ছিলেন তিনি। শ্রী নির্মল কুমার বসু স্যার শ্রদ্ধা আজীবনের।

সব শিক্ষকেরা আমার মনে হৃদয় গেথে থাকেন না। কিন্তু কিন্তু শিক্ষক হৃদয়ের মানসপটে আজীবন লেগে মেখে থাকেন। তেমন অনেক শিক্ষক পেয়েছি জীবনে। এমন কিছু শিক্ষকও আমাদের দেশে আছেন যারা একটা ছাত্রের জীবন ধ্বংসের পথেও মূল কারণ হয়ে যান। শিক্ষক ছাত্রকে সঠিক না শিখিয়ে বেঠিক শিখান। শিক্ষক ছাত্রকে অন্যায়-দুর্নীতির পথে বাড়িয়ে দেন তাও আছে এদেশে। শিক্ষক হতে গিয়ে এখন করতে হয় সবচেয়ে বড় অনিয়ম। মানুষ গড়ার হাতিয়ার গড়তে আছে সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব।

জীবনে এমন শিক্ষকও যারা কিনা ব্যক্তিগত ক্রোধের বশবর্তী হয়ে ছাত্রকে ফেল পর্যন্ত করায়। আবার শিক্ষককে যথাযথ সম্মান করায়ও যথেষ্ট ঘাটতি আছে আমাদের।

শিক্ষাগুরুর মর্যাদা তো আমাদের শিক্ষকরাই আমাদের পড়িয়েছেন। হয়তো আমরা তা ঠিকভাবে পড়িনি। আজকাল ছাত্রের হাতে শিক্ষক খুনও হয়, অপমান অপদস্ত হওয়া তো অনেক স্বাভাবিক ব্যাপার।

শিক্ষক ছাত্রের সুমধুর সম্পর্ক থেকে এখন অনেক দূরে এসে পড়েছি আমরা। দূরত্ব দিনে দিনে বেড়েই চলছে তার। কিন্তু একটা জায়গায় গিয়ে থামতে হবে। না হয় মুখ থুবড়ে পড়বে দেশ ও জাতি।

শিক্ষকেরা ভূল করেন, করে ছাত্ররাও। আমাদের ভূল ক্ষমা করার বা শাস্তি দেওয়ার সকল অধিকার শিক্ষাগুরুর রয়েছে। কিন্তু তাদের ভূলের শাস্তি তো আমরা দিতে পারব না, তাই অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে বলছি পৃথিবীর সকল শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা। শত দুঃখের মাঝে যিনি ফেলেছিলেন, তাকেও......শিক্ষক দিবসের বিলম্বিত শুভেচ্ছা।