শিক্ষকের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে

ফাইল ছবি: প্রথম আলো

বাংলা ভাষার খুবই পরিচিত দুটি বাক্য—‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’ ও ‘শিক্ষকেরা হলেন এই মেরুদণ্ড গড়ার কারিগর’। কথাগুলো বোঝা ও সংজ্ঞায়ন জানা খুবই জরুরি। প্রথমেই এ সম্পর্কে ভূমিকা ও মেরুদণ্ডের উদাহরণ সম্পর্কে জানা দরকার। পরে জাতির উন্নয়নে শিক্ষকের নানা অবদান। সর্বশেষ জাতির মেরুদণ্ড তৈরির কারিগর শিক্ষক ও তাঁদের পাণ্ডিত্যের দিক সম্পর্কে জ্ঞান রাখা আবশ্যক।

প্রথমেই বলা যায়, কোনো মানুষ বা জাতি শিক্ষা ছাড়া নিজে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারে না। তাই শিক্ষার গুরুত্ব মানুষের জীবনে অসামান্য। শিক্ষার এই বিশাল ভূমিকা জীবনে অনুভব করা যায় বলে একটি বাক্যে প্রবাদ প্রচলিত—‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো একটি পবিত্র অঙ্গন। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্রের ঊর্ধ্বে রাখা উচিত। এই জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষকেরা নিয়ন্ত্রণ করেন বলে শিক্ষকেরা শিক্ষার মেরুদণ্ড বলাই যায়।

প্রতিটি মানবশিশুর বেড়ে ওঠার সব পদক্ষেপে যেমন মা–বাবার ভালোবাসা পর্যাপ্ত, তেমনি শিক্ষকেরা শিক্ষার প্রজ্বলিত অগ্নিশিখা হৃদয়ে গেথে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে ভবিষ্যৎ গড়তে আপ্রাণ প্রচেষ্টা করে যান। শুধু একটি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমেই শিক্ষার সম্পূর্ণ জ্ঞান আয়ত্ত করা সম্ভব নয়। বাস্তবমুখী ও নীতিনৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৎ, সুশৃঙ্খল, সাহসী ও পরিশ্রমী সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন শিক্ষকেরা।

তাঁরা অভিভাবকতুল্য স্নেহ, মমতা, আদর, শাসন ও ভালোবাসার গঠনমূলক পরিকল্পিত পরিচর্যার মাধ্যমে ওপরের উল্লিখিত সৎ, সুশৃঙ্খল, সাহসী ও পরিশ্রমী সঠিক মানুষ গড়ে তোলেন। এ সমাজ-জাতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, ভাগ্য উন্নয়ন, গৌরব, অবস্থান তৈরি—সবকিছুর জন্য একজন আদর্শ শিক্ষক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সে জন্য বলা যায়, শিক্ষকতা সব পেশার ঊর্ধ্বে।

শিক্ষকেরা একটি জাতি গড়তে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন বলে তাঁদের মর্যাদা অনেক ঊর্ধ্বে। শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশের জন্য যতটুকু কষ্ট করা দরকার, তা শিক্ষার্থীরাই করে কিন্তু অবহেলিত মননে কিছু সুন্দর কথা গেথে দিতে শিক্ষকেরা সর্বোচ্চটুকু প্রচেষ্টা রাখেন। অতীতের শিক্ষাব্যবস্থায় কোনো গুরুতর সমস্যা না থাকলেও বর্তমানে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা সমস্যায় ভরপুর।

এ সমাজে শিক্ষকেরা অবহেলিত। পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অসদুপায়ে কোনো কাজে শিক্ষকেরা বাধা দিলে তাঁদের লাঞ্ছিত হতে হয় উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রদের হাতে। তখন শিক্ষকেরা শ্রদ্ধা পাওয়ার আশা হারিয়ে ফেলেন। নিজেদের যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের এসব বিষয়ে খেলায় রাখা উচিত। শিক্ষকদের মর্যাদা ও তাঁদের অবস্থান ঊর্ধ্বে রেখে চলা উচিত।

যুগান্তরের কালবেলায় বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়ে শিক্ষকেরা বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছেন। তাঁরা যত বেশি সুদক্ষ ও যোগ্য হবেন, তত বেশি দেশ পাবে সচেতন নাগরিক। যেখানে আমাদের জাতির অধঃপতন খুব নিকটে, সেখানে মেধাবী, পরিশ্রমী ও তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ শিক্ষকেরা সে অধঃপতন থেকে মুক্ত করতে পারেন। এ ছাড়া নৈতিকতাচর্চা তাঁদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। জাতির কর্ণধার শিক্ষকেরা সব লোভ ও মায়ার ঊর্ধ্বে থেকেই হয়ে উঠুন আলোকবর্তিকা।

শিক্ষকেরা যুগান্তকারী ঘটনার সাক্ষী রেখে মানুষের প্রতিভা বিকাশ করে পথভ্রষ্ট জাতিকে আলোর পথে ফিরিয়ে এনেছেন, এমন উদাহরণ রয়েছে। ইসলাম ধর্মের মহামানব ও নবীদের শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করে সেই উত্তর পার্থিবে রেখেছেন সৃষ্টিকর্তা। তবে শিক্ষকদের অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষা করে জীবনের মান উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি, এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। আদর্শ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুন্দর ও সুসম্পর্ক রাখা উচিত।

শিক্ষাঙ্গনে ভালো শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করতে সবার এগিয়ে আসা প্রয়োজন। জাতি গড়ার শ্রেষ্ঠ কারিগর শিক্ষকদের সব ক্ষেত্রে মূল্যায়ন জরুরি। একটি জাতির উন্নয়নে শিক্ষককে মূল্যায়ন ছাড়া সুশিক্ষিত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তাই শিক্ষকদের সার্বিক বিষয়ে সবার খেয়াল রাখা উচিত। শুধু শিক্ষক বাঁচলেই বলা যায় বাঁচবে দেশ। কারণ, দেশের মেরুদণ্ড তৈরির কারিগর একমাত্র শিক্ষকেরা।

লেখক: রানা আহম্মেদ অভি, শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়