ফুটবল বিশ্বকাপ ও আমাদের আচরণ

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিল নানা ধর্ম, বর্ণের মানুষের প্রতিনিধিত্বের উপস্থাপনছবি: রয়টার্স

আমরা জাতি হিসেবে কেমন, সেই প্রশ্নের রৈখিক হিসেবে ভালো কি মন্দ, এমন কিছু নিকাশের নিমিত্তে এ লেখা নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে ভালনারেবল চরিত্রের কোনো লাইনে দাঁড়াতে ভীষণ রকম অনাগ্রহী মানুষ।

বাঙালি জাতির খেলাধুলার দর্শক হিসেবে যে সত্তা, সেখানে প্রায় গোটা জাতিকেই আমি ভীষণ রকম ভালনারেবল লাইনের চরিত্রদের মতো দেখতে পাই।

বুঝতে পারছেন, ভীষণ সহজাত কারণে ক্রিকেটের ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব, ফুটবলের আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল দ্বৈরথ, কোনোটাতেই আমার কোনোকালে খুব একটা ভ্রুক্ষেপ ছিল না। সাধারণত আশি অথবা নব্বই দশকের মানুষের ক্ষেত্রে তাদের পূর্বাপরদের থেকে কোনো দলকে সমর্থন করার বিষয়টা আসে। সাধারণত কারোর পারিপার্শ্বিকে যদি আর্জেন্টিনার বাতাবরণ থেকে থাকে, তিনি ঘুরেফিরে দিন শেষে আর্জেন্টিনার ফ্যানই হন। এটা নিঃসন্দেহে আমার সমস্যা বলেই আমি মনে করি। যে বিষয়টাতে আমি দেখি সবার অতি আগ্রহ কাজ করছে, আমি ক্রমে সে বিষয়ের প্রতি আগ্রহ হারাতে থাকি।

ফলাফল, আমি ভারত অথবা পাকিস্তান, আর্জেন্টিনা কিংবা ব্রাজিল কারোরই সমর্থক হয়ে উঠতে পারিনি। আপনি হয়তো ভাবছেন, তাহলে এত বুলি কপচানোর প্রয়োজনটা কী? বিষয়টা হলো আশপাশের সবার অতি আগ্রহের কারণে একটা উপযুক্ত দল তার সম্ভাব্য একজন সমর্থক হলেও তো হারাল!

এই যে আমাদের অতি আগ্রহ এবং তার চর্চা, এর কারণে আমরা আমাদের কৃতকর্মকে ভ্যালিডেট করতে চাই প্রাণপণ। আমরা অসংখ্যবার আমাদের অতি চর্চার বিরূপ প্রক্ষেপণ দেখার পরও তাকে সযত্নে ঢেকে রাখার চেষ্টা করি। বিশ্বকাপ নিয়ে আমাদের অযাচিত এবং অতিচর্চাকে আমরা উন্মাদনা, ভালোবাসা নাম দিয়ে রোমান্টিসাইজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি অবিরত।

আমরা কি আরও সংবেদনশীলতার সঙ্গে যার যার দলকে সমর্থন করে বিশ্বকাপ ফুটবলটা উপভোগ করতে পারি না? আমার মনে হয়, এটা এখনই ভাবা খুব প্রয়োজন।
*লেখক: ফারহান আবিদ, শিক্ষক