গ্রামবাংলা বেঁচে থাকুক আবহমান সাংস্কৃতিক বন্ধনে

মাটির তৈরি দোতলা ঘর। সম্প্রতি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার খাজুর ইউনিয়নের বনগ্রামে
ছবি: সংগৃহীত

গ্রামের নাম বনগ্রাম। ছবির মতো সুন্দর। রাস্তার দুই পাশে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। সেই মাঠ পেরিয়ে গ্রামটির দেখা পেলাম। ঘরগুলো মাটির তৈরি। কোনটা একতলা, আবার কোনটা দোতলা। নানা রং আর আকৃতির ঘরগুলো আবহমান গ্রামবাংলার চিরায়ত রূপ ফুটিয়ে তুলেছে। জনবসতি কম।

এখানকার বেশির ভাগ মানুষের জীবিকা কৃষি। বরেন্দ্র অঞ্চল বলে এখানকার মাটি অতি রুক্ষ। দিন দিন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। তবু প্রকৃতি যেন দুই হাতভরে এই রুক্ষতা পুষিয়ে দিয়েছে। ফল-ফসলে ভরিয়ে রেখেছে। এখানকার মানুষ বড় মায়াময়। মাটির বৈশিষ্ট্য ধারণ করে আছে। বনগ্রামটি নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার খাজুর ইউনিয়নে অবস্থিত।

গ্রামের দৃশ্য। সম্প্রতি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার খাজুর ইউনিয়নের বনগ্রামে
ছবি: সংগৃহীত

এ গ্রামে রাস্তার ধারে বা মোড়ে কোনো চা-সিগারেটের দোকান দেখতে না পেয়ে বিস্মিত হলাম। কোথাও আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসন খুঁজে পেলাম না। চা-সিগারেটের দোকানে টেলিভিশন চলার দৃশ্যও চোখে পড়ল না। গাছতলায় বসে মানুষ আড্ডা দিচ্ছে। মাঠে খেলাধুলা করছে কিশোরের দল। গ্রামটি দেখে সুখী গ্রাম বলে মনে হলো। অথচ আজকাল আমাদের গ্রামবাংলার রাস্তার মোড়ে মোড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা চায়ের দোকানগুলোতে সংস্কৃতির দুর্ভিক্ষ চলছে।

ভোর হতেই কৃষক ধান নিয়ে ছাতুনতলীর হাটে যাচ্ছে। সাইকেল, ভ্যান, অটোরিকশা, ট্রলি-ট্রাক্টর, যে যেভাবে পারছে, হাটের দিকে ছুটছে। দুলাল নামের একজন হাটুরের সঙ্গে কথা হলো। বড়ই সাদাসিধে মানুষ। হাটের দিকে যেতে যেতেই তাঁর সংসার নিয়ে কথা হলো। ভালোই আছেন। তবে ধানের বাজার নিয়ে জিজ্ঞেস করতেই বিরক্তির সুরে দুলাল বলে উঠলেন, ‘প্রথমদিকি দাম ভালোই আছলো, অ্যাখন কমা গ্যাছে। চিকন ধান অ্যাখন বিকরি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১১৫০ টাকা।’

ছাতুনতলীর হাটে কামার, কুমার, মুচি, দরজিসহ সব পেশার মানুষ আছে। ছোট ছোট খাবারের দোকান, ফলের দোকান, নার্সারি, ধানের আড়তসহ হরেক রকম দোকানের পসরা বসেছে।

মানুষের আনাগোনা আর বিকিকিনি চলছে উৎসবের আমেজে। মাটির মেঝে আর বাঁশের চালার রুটির দোকানে খেতে গিয়ে আরেকবার মুগ্ধ হলাম। সারা হাট ঘুরে নানা কিসিমের মানুষের সঙ্গে কথা বলে মাটির গন্ধ আর সততায় প্রাণ খুঁজে পেলাম। আহা...! চারদিকে সবাই যখন গ্রামকে শহর বানানোর স্বপ্নে দেখছে, তখন এই গ্রামের রূপে হারানো ধন খুঁজে পেলাম। এভাবেই আমাদের গ্রামবাংলা বেঁচে থাকুক, আবহমান সাংস্কৃতিক বন্ধনে।

  • লেখক: আজাদ খান ভাসানী, প্রকল্প সমন্বয়ক, ভাসানী গবেষণা প্রকল্প ও সদস্যসচিব, ভাসানী পরিষদ

  • নাগরিক সংবাদে লেখা ও ছবি পাঠাতে পারবেন [email protected]