'সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক'-এর ৮৯তম মাসিক আসর অনুষ্ঠিত
‘কবিতার মাস এপ্রিলেই আমরা হারালাম সাম্প্রতিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি বেলাল চৌধুরীকে। বৈশাখের উৎসবের মাঝেও তাই আমাদের মন বেদনায় ভারাক্রান্ত।’ গত ২৭ এপ্রিল এভাবেই ‘সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক’-এর ৮৯তম আসরটি শুরু করেন একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন। উৎসবের মাস বৈশাখে আয়োজিত সাহিত্য একাডেমির এবারের আসরটিতে বেলাল চৌধুরীর মৃত্যু শোকের আবহ নিয়ে আসে।
আসরের শুরুতেই কবির মৃত্যুতে সংগঠনের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়। পরে সবাইকে বৈশাখী শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ছড়াকার মনজুর কাদের। তিনি বলেন, ‘ইংরেজি নতুন বছরের চেয়ে অনেক বেশি আন্তরিকতা নিয়ে আমরা একে অন্যের সঙ্গে বাংলা নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করি। বাঙালি হৃদয়ে বৈশাখের জন্য আলাদা জায়গা আছে।’ পরে স্বরচিত ছড়া পাঠের মধ্য দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর রানু ফেরদৌস পাঠ করেন বেলাল চৌধুরীর লেখা ‘স্বদেশ ভূমি’ কবিতাটি। এর পর ছোট্ট বন্ধু তামান্নার স্বরচিত কবিতা ‘ইনসাইড মি’ পাঠ ও নাহরীন ইসলামের কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ কবিতার আবৃত্তি আসরে উপস্থিত সবাইকে মোহিত করে। পরে একে একে নিজেদের লেখা কবিতা ও ছড়া পাঠ করেন কাজী আতিক, পলি শাহীনা, উইলি মুক্তি, ওয়াহেদ হোসেন, মনিজা রহমান, কামরুন নাহার রীতা, ইশতিয়াক রূপু, নুরুল মোস্তফা রইসী, খালেদ সরফুদ্দীন, আবু সাঈদ রতন, আহম্মেদ হোসেন বাবু, আবুল বাশার, আব্দুস শহীদ, লিয়াকত আলী, সীমু আফরোজা, সুরীত বড়ুয়া, শাহীন ইবনে দিলওয়ার, লুৎফা শাহানা, শামীম আহম্মেদ প্রমুখ। কবিতা আবৃত্তি করেন গোলাম মোস্তফা, মো. কবির কিরণ, সেলিম আফসারী প্রমুখ।
পরে শহীদ কাদরীর কবিতা পড়ে শোনান নীরা কাদরী। তিনি সদ্যপ্রয়াত কবি বেলাল চৌধুরীর স্মৃতিচারণ করে তাঁরও একটি কবিতা পাঠ করেন। এর আগে তিনি বৈশাখ সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন, ‘কবি শহীদ কাদরীর সঙ্গে আড্ডার সূচনা এই বৈশাখ মাসেই হয়েছিল। এটি শুরু হয় পরিচালক মোশাররফ হোসেনের উদ্যোগেই।’ তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে নীরা বলেন, ‘একটি কবিতা সন্ধ্যা’ ও ‘সাহিত্য একাডেমি’ অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে কাজ করেছে। এটা দারুণ ব্যাপার।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রাহাত কাজী শিউলি, রওশন হাসান, ফরিদা ইয়াসমীন, শাহ আলম দুলাল, কামাল হোসেন মিঠু, এইচ বি রিতা, তুহিন, মো. ফজলে আলী কচি, আলমগীর বাবুল, মোস্তাফিজ রহমান, রেশমা চৌধুরী প্রমুখ।
আমেরিকায় এপ্রিল মাস কবিতার উল্লেখ করে কবি তমিজ উদ্দীন লোদী বলেন, ‘কবিতার নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই। কবিতা হলো স্রোতবাহী নদীর মতো।’ গুণীজনদের নানা উদ্ধৃতি টেনে তিনি বলেন, ‘কবিতা লিখতে প্রয়োজন কল্পনা প্রতিভা। কবির হৃদয়ে গোপন রহস্য আছে। সে রহস্যই কবিকে কাব্য চর্চায় এগিয়ে নিয়ে যায়।’
কবি বেলাল চৌধুরী স্মরণে প্রাবন্ধিক হাসান ফেরদৌস আসরের সবার উদ্দেশে তাঁর লেখা ‘একজন ভালো মানুষ চলে গেলেন’ নামের রচনাটি পড়ে শোনান। তাঁর লেখায় কবির মানবিক গুণাবলি ও চারিত্রিক মহৎ বৈশিষ্ট্যগুলোর অন্তরঙ্গ ছবি ফুটে ওঠে।
কথাসাহিত্যিক ফেরদৌস সাজেদীন সাহিত্য একাডেমির অন্যতম নীতিনির্ধারক ডাক্তার মনসুর আলীর সঙ্গে প্রথম দেখার স্মৃতিচারণ করে তাঁকে ও সাহিত্য একাডেমির সবাইকে উৎসর্গ করে নিজের লেখা প্রথম কবিতা ‘আমারও ছিল এইসব’ পাঠ করেন। আবেগময় এই সময়ে সাহিত্য একাডেমির আসর উপলক্ষে মনসুর আলীর পাঠানো ম্যাসেজ সবার সামনে পড়ে শোনান মোশাররফ হোসেন।
কবি সোনিয়া কাদের বৈশাখী আয়োজনে ২৫ জন পথশিশুকে হিমি’র বিরিয়ানি খাওয়ানোর কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘অন্যের মুখের হাসি ফোটানো গেলেই তা পরিতৃপ্তির হাসি আনে।’
প্রবীণ সাংবাদিক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তবারক হোসেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে আফসোস করে বলেন, ‘সাহিত্যের এমন প্রাঞ্জল অনুষ্ঠানটির কথা আগে জানলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থেকে যেতাম। অন্য আরেকটি জায়গায় কথা দেওয়ায় সাহিত্য একাডেমির পুরো অনুষ্ঠানটিতে থাকতে পারলাম না।’
সব শেষে উপস্থিত সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং আগামী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আসরের সমাপ্তি টানেন পরিচালক মোশাররফ হোসেন।