হ্যালোইনের রাতে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা

সেই রাতে আমি যেন গভীর অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছিলাম।
বেশ কয়েক বছর আগের কথা। তখন স্ত্রী ও পুত্র-কন্যা নিয়ে টরন্টোর পূর্ব অংশ স্কারবোরো উপশহরে ছিলাম। চাকরি করতাম ওয়ালমার্টে নাইট ক্রু হিসেবে। কর্মস্থল ছিল বাসা থেকে প্রায় ৫০ মিনিটের ড্রাইভ দূরত্বে, টরন্টোর উত্তর-পশ্চিমে ভন সিটির বিশাল ওয়ালমার্ট সুপার স্টোরে। নাইট ক্রুরা রাতজাগা পাখির মতো, রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত কাজ করে। নিশাচর প্রাণিকুলের মতো রাতজাগা মানুষেরও স্বভাব বদলায়। খাওয়া-ঘুম সব কিছুই বদলে যায়।
অক্টোবর মাসে এ রকম হালকা শীত পড়া এক রাতে পরিবারের সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাত ১০টায় রাতজাগা কাজে ওয়ালমার্ট ভন সুপার স্টোরের উদ্দেশে রওনা হচ্ছিলাম। গাড়ি বের করতে গ্যারেজে ঢুকতেই একটা কালো বস্তু পায়ের সম্মুখ দিয়ে দৌড়ে পালালো। চকিত হলাম, কী গেল এমন করে? চোখটা একটু কচলে ভালো করে দেখার চেষ্টা করলাম। কিন্তু না, কোনো কিছুই দেখতে পেলাম না।
এই গ্যারেজের মধ্যে কী আর ঢুকবে। রিমোট কন্ট্রোলের ডোরটা সব সময় বন্ধ থাকে। মনে মনে ভাবলাম, চোখের বা মনের ভুল হতে পারে। আবার এ-ও চিন্তা করলাম, দলছুট কোনো রেকুন ঢুকে পড়েনি তো? কোথাও বের হওয়ার আগে এ রকম কিছু দর্শন কি অশুভ? পথে কিছু হবে নাতো?
ধ্যুত, এসব কুসংস্কার। মনে শুধু শুধু উদ্ভট চিন্তা কেন আসে।

মন থেকে ওসব ঝেড়ে ফেলে গাড়িটা বের করার জন্যে স্টার্ট দিতে গেলাম। চাবি ঘুরাতেই ক্রিক ক্রিক করে দুবার শব্দ হয়ে ইঞ্জিন স্টার্ট নিল না। আমার ১৯৯৬ সালের পুরোনো ক্যাডিল্যাক ডেভিল মাঝেমধ্যেই এ রকম সমস্যায় ফেলে। গাড়ি থেকে বের হয়ে হুড উঁচু করে ব্যাটারির কানেকশনটা একটু নাড়াচাড়া করে স্টার্ট দিলাম। এবার ইঞ্জিন চালু হলো। হেড লাইটস বিম সামনে পড়তেই দেখলাম কালো কুচকুচে একটা বিড়াল। চোখ বড় বড় করে সামনে বসে আছে আর ঘুল ঘুল করে আমাকে তাকিয়ে দেখছে। অবাক কাণ্ড! ভালো করে দেখতে লাগলাম। সত্যিকারের ভয়ংকর চেহারার মিশকালো একটা বিড়াল। হাতে একদম সময় না থাকায় বিড়ালটিকে না তাড়িয়েই কাজে রওনা হয়ে পড়লাম।
আমি নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী হওয়ায় ফ্রিওয়ে পরিহার করে লোকাল রোডে কাজের জায়গায় যাতায়াত করতাম। তাই প্রতি রাতের মতো ফ্রিওয়ে ৪০১-এর বদলে কেনেডি রোড ধরে নর্থ বাউন্ড অভিমুখে যাত্রা শুরু করলাম। সোজা মার্কহামের ভেতর দিয়ে টোল রোড ৪০৭ পার হয়ে হাইওয়ে ৭ থেকে ওয়েস্ট বাউন্ডে লেফট টার্ন নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।
কিন্তু কী জানি কীভাবে হাইওয়ে সাতের সাইন চোখে না পড়ায় লেফট টার্ন মিস করলাম। কেনেডি রোড ধরেই সোজা নর্থ বাউন্ড যেতে লাগলাম। কিন্তু যাচ্ছি তো যাচ্ছিই। ভাবলাম, এই সামনে বোধ হয় হাইওয়ে ৭ পাব, কিন্তু না। একে একে সিক্সটিন্থ অ্যাভিনিউ, মেজর ম্যাকেঞ্জি পার হলাম। পার হয়ে এলাম এল্গিন মিলস, হলবর্ন রোড, রাভেনশু রোড ও ওল্ড হমেসটিড রোড। শেষ পর্যন্ত থামলাম এসে লকসাইড রোডে। টরন্টো শহরের অনেক বাইরে এক গেঁয়ো রাস্তায়। বোকার মতো কেন এত দূর চলে এলাম, তা-ও বুঝতে পারলাম না। মনে হলো নিয়তিই কি টেনে আনল এখানে। তবে বুঝতে বাকি রইল না যে, ভুল করে ভুল পথে ভুল জায়গায় চলে এসেছি।
ঘড়িতে সময় দেখে অনুমান করলাম, এতক্ষণ আমার সুপার স্টোরে উপস্থিত থাকার কথা।
ও মাই গড। কী করি, নার্ভাস হয়ে পড়লাম।
ফিরে যাব। তাই গাড়িটা ইউ টার্ন করতে গিয়েও পারলাম না, খুব সরু রাস্তার জন্যে।
তাড়াহুড়ো করে থ্রি-পয়েন্ট টার্ন নিতে গিয়ে যেই না পেছনে গেলাম, আর অমনি গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেল। গাড়িটা মাঝে মাঝে ডিস্টার্ব দিলেও আজই যেন বেশি ভোগাচ্ছে। ভাবলাম আবার সেই ব্যাটারির সমস্যা হয়তো। দেখি তো কী হলো।
গাড়ির দরজা খুলে বের হতে গিয়ে ঘাড় ঘোরাতেই দেখলাম সেই কালো বিড়ালটা পেছনের সিটে ঘাপটি মেরে বসে আছে। আমাকে তাকিয়ে দেখছে। বড় বড় চোখ দুটো জ্বল জ্বল করে জ্বলছে। যেন ঠিকরে বের হয়ে আসবে এক্ষুনি। এবার আমি সত্যিই ঘাবড়ে গেলাম এবং ভয়ও পেলাম। গা আমার শিউরে উঠল, গায়ের লোম খাড়া হলো। ভয়ে আমি প্রায় চিৎকার করে উঠলাম।
‘এই, তুই এখানে কী করিস? আমার পিছু নিয়েছিস কেন? যাহ, দূর হ!’
চটজলদি গাড়ির দরজা খুলে গেলে ডোর লাইট জ্বলে উঠল। কিন্তু কিছুই আর দেখতে পেলাম না। বিড়ালটা নেই, কিচ্ছু নেই পিছনের সিটে। আশ্চর্য, জলজ্যান্ত একটা বিড়াল দেখলাম, আর নিমিষেই উধাও। তাহলে কি নেমে ভেগে গেল, নাকি কোথাও লুকিয়ে রইল। বুঝে উঠতে পারলাম না।
আবারও গাড়ির হুড খুলে ব্যাটারির সংযোগটা পরীক্ষা করে হাত দিয়ে স্ক্রু টাইট করার চেষ্টা করলাম। ফিরে স্টার্ট দিতে গেলাম কিন্তু স্টার্ট নিল না। কয়েকবার চেষ্টার পরও কাজ হলো না।
ভীষণ বেকায়দায় পড়লাম এই রাতদুপুরে এক অজানা অচেনা নির্জন জায়গায়।
বুঝতে চেষ্টা করলাম এলাকায় কোনো দোকানপাট বা গ্যাস স্টেশন আছে কি না। গাড়ি থেকে নামতেও ভয় লাগছিল। কী করব, ভেবে পাচ্ছি না। তবুও বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়ালাম। আশপাশে কোনো লোকালয় বা জনবসতি চোখে পড়ল না। খানিক দূরে খোলা মাঠে ছোট্ট একটা হাউসের মতো মনে হচ্ছিল। টিমটিমে বাতি জ্বলছিল সেখানে। হয়তো ফার্ম হাউস হবে। রাস্তার ধারে কাছে শুধু জঙ্গল আর গাছগাছালি। অদূরে একটা ম্যাপল বন মনে হচ্ছিল। এ ছাড়া চারিদিকে শুধু ধু ধু মাঠ আর মাঠ। অন্ধকারে ভালো করে কিছু দেখা বা বোঝার উপায় ছিল না।
হঠাৎ এর মধ্যে মনে হলো মাথার ওপর দিয়ে কী যেন শো শো করে উড়ে গেল। ক্ষণিক পরেই বুঝলাম, সেটা আবার মাথার ওপর উড়ে উড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। আমার মাথায় বা গায়ের ওপর সেটা বসতে চেষ্টা করছে। বড় কোনো পাখির ডানার ঝাপটার শব্দ মনে হলো। একটা দমকা হাওয়া চোখে মুখে লাগল। কিন্তু কিছুই দেখতে পেলাম না।
গা-টা ছম ছম করে উঠল। ছোটোবেলায় গল্প শুনেছিলাম ভূতপ্রেত ও জিন পরীরা গায়ে এসে ভর করে, তাই ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি গাড়ির ভেতরে এসে বসলাম। উইন্ডো গ্লাস উঠিয়ে ডোর লক করে দিলাম। সেল ফোনটা কাছে নিয়ে বাটন টেপার চেষ্টা করলাম কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় কি না, এই ভেবে। কিন্তু নেটওয়ার্ক পাওয়া গেল না।
খুব ভীত হয়ে পড়লাম। কী করা যায়, ভেবে কোনো কূলকিনারা করতে পারলাম না। এলাকায় জনবসতি নেই এবং সড়কটাও ব্যস্ত নয় বলে কোনো একটা গাড়িও চলাচল করতে দেখা গেল না। সুতরাং কোনো ধরনের সাহায্য পাওয়ার আশা পুরোপুরি ত্যাগ করলাম।
গাড়ির ভেতরে বসে বসে ছেলেমেয়ের কথা ভাবছিলাম আর দূরে তাকিয়ে দেখছিলাম, লাইট পোস্টের আলোগুলো কেমন যেন নিবু নিবু হয়ে জ্বলছে। দিগন্ত বিস্তৃত কালো অন্ধকার মাটি ছুঁয়ে গেছে। আকাশের তারাগুলো বহু দূর হতে মিট মিট করে জ্বলে পৃথিবীর দিকে নির্লিপ্ত চোখে চেয়ে আছে। রাস্তার ধারে বুড়ো একটা উইলো গাছ দেখতে পেলাম, যার পাতাগুলি ঝির ঝির করে কাঁপছিল মৃদুমন্দ ঠান্ডা বাতাসে। উইলোর সরু সরু ঝুলন্ত ডালগুলি এমন করে নড়ছিল, মনে হচ্ছিল দলহারা ডিমনরা ডাল ধরে ঝুলাঝুলি খেলছে।
দূরের ওই খোলা মাঠের হাউসটায় হঠাৎ একটা কালচে আলখেল্লা পরা একজন লম্বা মানুষকে হেঁটে যেতে দেখলাম। ভাবলাম, এই রাতদুপুরে যদি একটু সাহায্য পাওয়া যায় তো মন্দ কী। গাড়ি থেকে বের হয়ে এক দৌড়ে ছুটে গেলাম ঘরটার কাছে। ঘরের দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ। দরজার ওপরে ক্রুশিফাইড যিশুর একপ্রস্থ প্রতিকৃতি সাঁটানো।
দরজায় নক করলাম। কোনো সাড়া মিলল না।
জোর গলায় ডাক দিলাম, এনি বডি ইন হোম?
কোনো জবাব এল না, কোনো শব্দ বা আওয়াজ কিছুই শোনা গেল না।
বরং আমার গলার আওয়াজ শুনে কয়েকটা ছোট চামচিকা উড়ে পালাল। জানালার ফোকর গলে ভেতরটা দেখার চেষ্টা করলাম। কয়েকটা জরাজীর্ণ ভাঙা কফিন পরে থাকতে দেখলাম। বাইরে ঝুলন্ত একটা সাইন দেখে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। সাইনে সিমেট্রি অফিস আওয়ার লেখা আর সুলভে মানুষ দাফনের যোগাযোগের টোল ফ্রি একটা ফোন নম্বর। ঘাড় ঘুরিয়ে পাশের মাঠের দিকে তাকিয়ে দেখলাম খাড়া হওয়া কতকগুলো টম্বস্টোন। তাহলে কি আমি কোনো কবরস্থানে এসে পড়েছি? ভীষণ ভয় পেলাম।
এরই মধ্যে কারও অস্পষ্ট কণ্ঠস্বর যেন শোনা গেল। একদম নাকি নাকি সুর করে- ‘হুঁ ইঁজ দিঁস? ডিঁড ইঁউ বিঁরিং ইঁয়র ডেঁথ সাঁরটিফিকেট?’
বলে কী? শির শির করে উঠল শরীরের মধ্যে, ভয়ে পা দুটো অবশ হয়ে অসাড় হয়ে গেল। এক দৌড়ে গাড়ির কাছে যেতে চাইলাম কিন্তু মনে হচ্ছিল পারছিলাম না। পা যেন চলছিল না। হাউসটার সামনে একটা কাঠের লেটার বক্স দেখতে পেলাম। দেখি ওটার ওপর একটা ধূসর রঙের শিংওয়ালা প্যাঁচা তীক্ষ্ণ ঠোট বাগিয়ে আমাকে পর্যবেক্ষণ করছে। ভয়ে শরীরের মধ্যে শিহরণ বয়ে গেল।
ওই অবস্থায় দিলাম এক ভোঁ দৌড়। প্রাণপণে ছুটলাম আমার গাড়িটার দিকে।
গাড়িটা কোথায় রাখা তা-ও ঠাওর করতে পারছিলাম না অন্ধকারে। গাড়িটাতে যখন উঠতে যাব, সেই মুহূর্তে দেখি কালো ওই বিড়ালটা পিঠ উঁচু করে লেজ নাড়াচ্ছে, আর রুদ্র মূর্তিতে ঘোঁত ঘোঁত করছে যেন কামড় বসাবে আমাকে।
ভীষণ রাগ হলো। রাগ আর ভয়

মিশিয়ে চোখ বন্ধ করে দিলাম এক লাথি। ও তো নিমিষেই উধাও হয়ে গেল, কিন্তু পা গিয়ে প্রচণ্ড জোরে বাড়ি খেলো গাড়ির গায়ে। খুব ব্যথা পেলাম পায়ে।
কপাল দিয়ে দর দর করে ঘাম ঝরতে লাগল। তাড়াতাড়ি গাড়ির ভেতরে গিয়ে বসলাম।
ক্ষণিক পর লক্ষ করলাম রাস্তা দিয়ে এক জোড়া আলো এদিকটাই আসছে। আরেকটু কাছে এলে বুঝলাম সেটা একটা মোটর যান।একটু সাহস সঞ্চার হলো। একটা নীল রঙের ডজ রাম পিকআপ ট্রাক এসে দাঁড়াল আমার গাড়ির পাশে। পিকআপটার গায়ে লেখা, ‘না ফেরার দেশ ল্যান্ডস্কেপিং লি.’।
অদ্ভুত নাম দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম। ভাবলাম, এ আবার কী এসে হাজির হলো।
চালক নেমে এল আমার গাড়িটার দিকে। তাঁর পরনে ছিল ক্যামফ্লাশ হুডি জাকেট, কালো ট্রাউজার, আর পায়ে নাইকি সাদা কেডস। হাতে ছিল লোহার একটা শক্ত বেলচা।
সাহায্য চাওয়া তো দূরের কথা, ভীষণ ভয় হতে লাগল। এবার বোধহয় জীবন শেষ। সাহস করে ডোর গ্লাসটা একটু ফাঁক করলাম।
সে কাছে এসে কর্কশ গলায় জিজ্ঞাসা করল, ‘হেই বাডি হোয়াটস আপ’।
উত্তরে বললাম, ‘আই ওয়াজ লস্ট অ্যান্ড ওয়াজ স্টাক হিয়ার টুনাইট’।
ও বললো, ‘ডোন্ট ওরি, ইউ উইল বি ফাইন। লেটস সি’।
ওর নাক মুখ চোখ কিছুই স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিল না। অন্ধকারে তাঁর মুখাকৃতিও বোঝা গেল না, আর সে সব সময় হুডি দিয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করে যাচ্ছিল।
আমার গাড়ির চারদিকে একটা চক্কর মেরে হঠাৎ বেলচাটা ডোর গ্লাসের ফাঁকে ঢুকিয়ে আমাকে খোঁচা দিতে শুরু করল। আর চিৎকার করতে লাগল, ‘গেট আউট অফ দ্যা কার’।
সজোরে একটা আঘাত করল গাড়ির রুফে। আমিও রেহাই পেতে মরণপণ যুদ্ধ আরম্ভ করলাম। শেষ পর্যন্ত না পেরে হাতের কাছে সিগারেট লাইটারটা ছিল, এক হাতে তা জ্বালালাম ওর চেহারা দেখার জন্যে। দেখি আগুন দেখেই ও লাফ মেরে সরে পড়ল।
আর হেঁড়ে গলায় বলল, ‘বাডি, আই গট টু গো। ইউ নিড অ্যা টো ট্রাক’।
বলেই নিজের পিকআপে গিয়ে বসল। ওদিকে পুব আকাশে ভোরের আলো দেখা দেওয়ায় ও পিকআপ নিয়ে তাড়াতাড়িই সটকে পড়ল ওই কবরস্থানের দিকে।
ক্লান্তি শ্রান্তিতে কখন যে চোখ বুজে শরীরটা এলিয়ে পড়েছে তা জানি না। চোখ মেলে দেখি, আমার গাড়িটা রাস্তা ব্লক করে ফেলায় ছোটখাট একটা জ্যাম বেধে গেছে।
একজন চালকের সহায়তায় ব্যাটারি জাম্পিং করে আমার গাড়িটা স্টার্ট নিলে সোজা বাড়িতে রওনা হলাম। বাড়ির কাছের প্রতিবেশীদের বাড়িগুলোর সামনে রাখা বিভিন্ন সাইজের ক্যারভিং করা পামকিনগুলো এতদিন চোখেই পড়েনি যেন। এই শুভ সকালে ক্যারভ করা পামকিনগুলো মনে হচ্ছে দাঁত খিঁচিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
ঘরে ঢুকেই কাজের জায়গায় ফোন করলাম। সুপারভাইজার আজকে কাজে হাজির থাকতে পরামর্শ দিলেন।
ছেলেমেয়ে দুটো দেখি গতকালের ‘ট্রিক অর ট্রিট’ এ পাওয়া দুই ঝোলা ভরা ক্যান্ডি ও চকলেট নিয়ে হাসাহাসি আর বলাবলি করছে, ‘ইট ওয়াজ অ্যা ফান হ্যালোইন ইয়েসটারডে, উই হ্যাড অ্যা গুড কালেকশন’।
শুনে আমি সম্বিৎ ফিরে পেলাম, মনে মনে জিজ্ঞাসা করলাম, তাহলে কি গতরাতটা হ্যালোইনের রাত ছিল?
রানা টাইগেরিনা
টরন্টো, কানাডা