হ্যালিফ্যাক্সের বুড়ি

আটলান্টিক মহাসাগরের পারে ছোট্ট সুন্দর একটা শহর ।
প্রতিদিন ভোরে এই শহরকে শুভেচ্ছা জানায় দূর সাগরের হিমেল হাওয়া । এই শহরের নাম হ্যালিফ্যাক্স। আটলান্টিক কানাডার সবচেয়ে বড় আর জনবহুল শহর হ্যালিফ্যাক্স নোভা স্কশিয়া প্রদেশের রাজধানী। এই শহরে আমাদের দুজনের ছোট্ট সংসার ।
একদিন ডিসেম্বরের সন্ধ্যায় গ্রসারি করে মামফোর্ড টার্মিনালে বাসের অপেক্ষায় বসেছিলাম। বাইরে তাপমাত্রা তখন হিমাঙ্কের নিচে পাঁচ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এমন সময় এক বৃদ্ধা লাঠিতে ভর করে পাশে এসে দাঁড়ালেন। বয়স ৭৫ কিংবা ৮০ও হতে পারে । দুটি পা যেন শরীরের ভার নিতে পারছে না। আমি আমার আসন ছেড়ে তাঁকে বসতে দিলাম । বুড়ি ‘গড ব্লেস ইউ, গড ব্লেস ইউ’ বলতে বলতে বসে পড়লেন।
এরপর কোনো ভূমিকা ছাড়াই তিনি তার ছেলেমেয়ের গল্প বলতে শুরু করলেন। আমাকে এক্ষুনি বাসায় ফিরতে হবে। আমার বাচ্চারা অপেক্ষা করছে। ওরা আমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারে না।
আমি বললাম, ‘লাকি ইউ, ইউ রিয়েলি হ্যাভ গট নাইস ফ্যামিলি।’
বৃদ্ধ বললেন, ‘আমি আমার বাচ্চাদের অনেক বেশি ভালোবাসি। আই হাভ ফাইভ কিডস, বাট অল অফ দেম আর ক্যাটস।’
শেষ কথাটা শুনে আমার বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠল। হাজার হাজার মাইল দূরের আমার বাবা-মার কথা মনে পড়ে গের।
বাংলাদেশের এক ছোট্ট গ্রামে আমার মা–বাবা থাকেন। আমার ছোট দুই বোনকে নিয়ে তাদের সংসার। একদিন বোনদেরও বিয়ে হয়ে যাবে। আমার মা–বাবা তখন একদম একা হয়ে যাবেন। হয়তো কোনোদিন কোন বাস স্ট্যান্ডে বা মুদি দোকানে কোন অচেনা পথচারীকে আমার বাবা তার ছেলেমেয়েদের গল্প শোনাবেন, হ্যালিফাক্সের বুড়ির মতো। ‘আমার পাঁচ ছেলেমেয়ে। পাঁচটাকেই মানুষ করেছি। কিন্তু আমাদের কাছে কেউ থাকে না, সবাই অনেক দূরে ...৷’
কামরুল হাসান খসরু
হ্যালিফ্যাক্স, নোভা স্কশিয়া, কানাডা