হু মহাপরিচালকের সঙ্গে বিদায়ী স্থায়ী প্রতিনিধির সাক্ষাৎ

বিদায়ী রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসানের হাতে বিশেষ সম্মাননা স্মারক তুলে দিচ্ছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুসছবি: বাংলাদেশ দুতাবাস, জেনেভা, সুইজারল্যান্ড

‘কোভিড-১৯ নির্মূলে নিরাপদ ভ্যাকসিনের সর্বজনীন, সময়োপযোগী, সুষ্ঠু ও ন্যায়সংগত বণ্টন এবং সুষম অধিগম্যতা নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দৃশ্যমান ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।’ জেনেভাস্থ জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের বিদায়ী স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান ২৭ আগস্ট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুসের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎকালে এসব কথা বলেন।

কোভিড-১৯ নির্মূলে নিরাপদ ভ্যাকসিনের সর্বজনীন, সময়োপযোগী, সুষ্ঠু ও ন্যায়সংগত বণ্টন এবং সুষম অধিগম্যতা নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দৃশ্যমান ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান

রাষ্ট্রদূত আহসান কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃস্থানীয় ভূমিকার প্রশংসা করে চলমান বৈশ্বিক মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও কোভিডপরবর্তী পরিস্থিতিতে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে অধিকতর সহায়তা প্রদানের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতি আহ্বান জানান। বাংলাদেশের কোভিড পরিস্থিতি তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত আহসান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োচিত ও সঠিক সিদ্ধান্ত এবং যথাযথ দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ সফলতার সঙ্গে করোনা সংকট মোকাবিলা করছে।’ তিনি করোনা ভ্যাকসিনের উৎপাদন, সুষম বণ্টন ও সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ–সংক্রান্ত তহবিলে বাংলাদেশের ৫০ হাজার মার্কিন ডলার প্রদানের বিষয়টিও উল্লেখ করেন।

রাষ্ট্রদূত আহসান বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে বর্তমান সরকারের এক যুগের নানামুখী সাফল্যের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সারা দেশে তৃণমূল পর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার রোধ, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, পুষ্টি নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন ফলপ্রসূ উদ্যোগ সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালককে অবহিত করেন।

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োচিত ও সঠিক সিদ্ধান্ত এবং যথাযথ দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ সফলতার সঙ্গে করোনা সংকট মোকাবিলা করছে।’
রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান

তিনি মানসিক স্বাস্থ্য, অটিজম, বুদ্ধি ও অন্য স্নায়বিক প্রতিবন্ধীদের যথাযথ যত্ন ও সেবার বিষয়টিকে স্বাস্থ্যসেবা খাতের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে বাংলাদেশের অটিজমবিষয়ক জাতীয় কমিটির সভাপতি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা প্যানেলের সদস্য সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের ব্যক্তিগত প্রয়াস ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন। এ ছাড়া, তিনি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার স্বাস্থ্যসংক্রান্ত লক্ষ্য বাস্তবায়নে, বিশেষ করে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকারের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

মহাপরিচালক গেব্রেয়াসুস বিদায়ী স্থায়ী প্রতিনিধিকে সফলভাবে তাঁর মেয়াদ সম্পন্ন করার জন্য অভিনন্দন জানান। তিনি স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। ড. গেব্রেয়াসুস কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকারের চলমান কার্যক্রম ও নানাবিধ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান এবং বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভকারী এই সংক্রমণ মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সমর্থন দান ও সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান। বিশেষ করে তিনি জনবহুল রোহিঙ্গা শিবিরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখায় বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেন।

বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভকারী করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সমর্থন দান ও সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জ্ঞাপানের পাশাপাশি জনবহুল রোহিঙ্গা শিবিরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখায় বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক।

ড. গেব্রেয়াসুস জেনেভায় কর্মরত অবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য–সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় রাষ্ট্রদূত আহসানের হাতে বিশেষ সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। তিনি বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের অবসরপরবর্তী জীবনের সুস্থতা, দীর্ঘায়ু ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।

রাষ্ট্রদূত আহসান বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তাঁকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করার জন্য মহাপরিচালক গেব্রেয়াসুস ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

জেনেভায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে প্রায় ছয় বছর দায়িত্ব পালন করে রাষ্ট্রদূত আহসান তাঁর সুদীর্ঘ ৩৫ বছরের কূটনৈতিক কর্মজীবন শেষে বাংলাদেশে ফিরে যাচ্ছেন।