কংগ্রেসে ইলেকটোরাল কলেজের প্রত্যয়নের জন্য ৬ জানুয়ারি অধিবেশন চলাকালে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থেকরা সহিংস বিক্ষোভ করেছে। এদিন জো বাইডেনের জয়কে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে কংগ্রেস।
ইলেকটোরাল কলেজের প্রত্যয়নের জন্য কংগ্রেসের অধিবেশন ঘিরে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে জড়ো হয় কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বলেন, কংগ্রেস যদি জো বাইডেনকে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রত্যয়ন করে, তিনি তা মানবেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের ললাটে যুক্ত হলো কালো একটি দিন। আগ্রাসী বিক্ষোভের তাণ্ডবে ক্যাপিটাল ভবন, সত্যি দুঃখজনক। যারা পুরো পৃথিবীকে দেখায়, তারাই জড়িয়েছে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে। একদিকে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে জো বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতির প্রক্রিয়া চলছিল। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের আগ্রাসনে লন্ডভন্ড ক্যাপিটালহিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাপিটল হিল অবরুদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
ক্ষমতার লোভ মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়, তা বোঝা গেল এদিন। পৃথিবীর সভ্য দেশে যেন অসভ্য বর্বরতা নেমে এসেছিল, হতবাক হতে হয়েছে টেলিভিশনে চোখ রেখে।
কংগ্রেস অধিবেশনের বিরোধিতা করে ওয়াশিংটনে হাজার হাজার ট্রাম্প সমর্থক আর উগ্রপন্থী জড়িয়েছে দাঙ্গায়, তারাও এই নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয় মেনে নেবে না। ক্যাপিটাল ভবনের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে পুলিশের সঙ্গে মারমুখী হয়ে ওঠে এসব মানুষ। হঠাৎ দেখা গেল, কংগ্রেসের অধিবেশন চলার মধ্যেই পুলিশের বাধা ভেঙে ক্যাপিটাল ভবনে ঢুকে পড়েছে তারা। এই আগ্রাসন রুখে দিতে পুলিশকে বল প্রয়োগ করতে হয়েছে।
ক্ষমতার লোভে একদল মানুষ অন্ধ হলেও এবার মার্কিন নাগরিকেরা সিদ্ধান্ত দিতে ভুল করেনি। তবে সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হলো। আশা করি, অপরাধীরা শাস্তি পাবে। যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে যাবে সত্য আর সুন্দরের পথে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ডিসি মেয়র মুরিয়েল বাউজার অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছেন। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে সান্ধ্য আইন জারি করেছেন তিনি।
খবরে বলা হয়, ওয়াশিংটন ডিসিতে জড়ো হওয়া প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা রক্ষীদের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে। ক্যাপিটল হিলে আইন প্রণেতাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ট্রাম্প একের পর এক টুইট করে সমর্থকদের ধন্যবাদ দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিনি অত্যাচারীকে উসকে দেওয়া ও বিদ্রোহী গুন্ডাদের উৎসাহিত করেছেন।
আইনবিদরা বলছেন, আত্মবিশ্বাসী সাহসী, বিবেকবান মার্কিন জনগণ এই গুন্ডাদের পরাজিত করে আমাদের সংবিধান ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করবে।
জর্জিয়ার সাহসী মানুষ স্বৈরাচারী ট্রাম্পের মুখে উপযুক্ত সময়ে থাপ্পড় দিয়েছেন। গণতান্ত্রিক নিয়মে সিনেটে দুটি আসন নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। ট্রাম্প প্রলাপ বকছেন ও মোহাচ্ছন্ন আছেন, এটি তাঁর শেষ ও চূড়ান্ত সময়।
যুক্তরাষ্ট্রে এ রকম ঘটনা? কল্পনাও করা যায়! শত শত ট্রাম্প সমর্থক নির্বাচনে কারচুপির প্রতিবাদে ক্যাপিটাল ভবন ঘিরে ফেলেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে, দরজা–জানালা ভেঙে হাউসের সদস্যদের চেয়ারে দখল করেছে! ২০ জানুয়ারি বাইডেন যেখানে শপথ নেবে, সেখানে শত শত বিক্ষোভকারী! সিনেটর ও সদস্যদের গ্যাস মাস্ক দিয়ে যার যার কক্ষে থাকতে বলা হয়েছে। ডিসির মেয়র নিরাপত্তা গার্ডের সাহায্য চেয়ে কারফিউ জারি করেছেন।
তৃতীয় বিশ্বের মতো ক্যাপিটল হিলে ট্রাম সমর্থকদের অবিশ্বাস্য ও নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা। আইনপ্রণেতাদের চাপে ফেলে অবৈধ দাবি আদায়ের এ এক হীন চেষ্টা। দায়িত্বজ্ঞানহীন জুলিয়ানি ও ট্রাম্পের অনুপ্রেরণায় এ রকম অকল্পনীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ট্রাম্পের আচার–আচরণ অনেকটা রাস্তার গুন্ডা, মূর্খ, অশিক্ষিত, বর্বর, মিথ্যুক, অসভ্য মানুষের মতো। তাঁর সমর্থকেরা হচ্ছে আরও বেশি মূর্খ, অশিক্ষিত, বর্বর, অসভ্য।
ট্রাম্প সমর্থকেরা ক্যাপিটল হিল অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। সারা দিন ট্রাম্প কিছু বলেননি। এখন যখন দেখছেন, এ রকম চলতে থাকলে, আজকেই হোয়াইট হাউসে তার শেষদিন হতে পারে, তখনই পাবলিকলি এসে বলছেন, ‘তোমারা, গুড পিপল! তোমাদের ভালোবাসি। কিন্তু এখন বাড়ি যাও!’
তবে ভালো খবর হচ্ছে, ডেমোক্র্যাটদের দখলে এখন প্রেসিডেন্সি, হাউস ও সিনেট। জর্জিয়ার দুই সিনেট আসনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা জিতেছে।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে হাউস, সিনেট দুটিই রিপাবলিকানদের দখলে ছিল। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথমে হাউস হারিয়েছে, পরে প্রেসিডেন্সি হারিয়েছে। এবার সিনেটও হারাল রিপাবলিকানরা। আজকের পর ট্রাম্পের দল থেকেও বাদ পড়ার সম্ভাবনা পরিষ্কার।
ট্রাম্প রিপাবলিকান দলের যে ক্ষতি করেছে, তার খেসারত তাদের দিতে হচ্ছে। হয়তো ভবিষ্যতেও দিতে হবে। ট্রাম্প কিছু রিপাবলিকান রাজনীতিকদের কবর খুঁড়ে দিয়ে যাচ্ছে। আগামী সিনেট নির্বাচনে তারা সেই কবরে ঢুকবে।