অজ্ঞাত কারণে সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে। আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে চায়। এতে নিজেকে এতই ভাগ্যবান মনে করি যে চাকরির বাইরেও প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০টা ইমেইল বা মেসেজের উত্তর দিই। আট থেকে ১০টা কল করি। আশ্চর্যজনকভাবে লক্ষ্য করলাম, এর প্রায় ৯০ শতাংশ কারণ হলো হতাশা। হ্যাঁ, সবাই যেন হতাশায় ভুগছে।
কেউ চাকরি না পাওয়ার হতাশায়, কেউ ভালোবাসার মানুষকে না পাওয়ার হতাশায়, কেউ তাঁর স্বপ্নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে না পারার হতাশায়, কেউ বিদেশ যেতে না পারার হতাশায়, কেউ বা তাঁর জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারার হতাশায়, আবার কারও জীবনে হঠাৎ করে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসার হতাশায়। এসব বিষয়ে যখনই কিছু বলতে চাই, তখনই মনে হয় নিজেও এই হতাশার বাইরে ছিলাম না। আজ হয়তো জানি কীভাবে হতাশার মধ্যেও আশার আলো দেখা যায়।
আপনি যদি একজন হতাশাগ্রস্ত মানুষ হন, তবে আপনার জন্য কিছু সুখবর আছে। সুখবরগুলো হলো—
১. এখন পর্যন্ত পরিচিত যত মানুষ জয়ী হয়েছেন, তার অধিকাংশ মানুষই হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। হতাশাগ্রস্ত থেকে উত্তরণের চেষ্টাই আজ তারা জয়ী। বিশ্বাস না হলে আশপাশের বিজয়ী মানুষদের ইতিহাস জেনে দেখুন।
২. যখনই দেখি কোনো মানুষ হতাশায় ভুগছেন, তাঁর প্রতি একটা শ্রদ্ধাবোধ জাগে। কারণ তিনি অনেক চেষ্টা করেছেন। আর চেষ্টা করেও লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারায় আজ তিনি হতাশাগ্রস্ত।
৩. এই পৃথিবীতে যেমন দিনের পর রাত আসে তেমনি হতাশার পর আশার আলো উঁকি দেয়।
হতাশা থেকে মুক্তির উপায়
২০১৬ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সহকর্মী অতনু, তাঁর স্ত্রী মউ ও এক বছর বয়সী মেয়ে তাই’কে নিয়ে লাসভেগাস থেকে গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়নে ভ্রমণে যাচ্ছিলেন। উল্টো দিক থেকে একটা গাড়ি এসে ধাক্কা দিয়ে তাঁদের সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দেয় মুহূর্তের মধ্যে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উড়োজাহাজে করে জরুরি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। জ্ঞান ফিরলে অতনু জানতে পারেন তাঁর হাতে অস্ত্রোপচার করতে হবে, স্ত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক আর মেয়ে অন্য একটা শিশু হাসপাতালে ভর্তি। দুটি অস্ত্রোপচার শেষে ১৫ দিন পর তাঁর স্ত্রী কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। আর মেয়ের সুস্থ হতে সময় লাগে প্রায় ৬ মাস। অন্যদিকে হাসপাতালে বিল প্রায় ১ লাখ ডলার (প্রায় ৮০ লাখ টাকা) হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
যে ব্যক্তি অতনুদের গাড়িতে ধাক্কা দিয়েছিল তাঁর কোনো ইনস্যুরেন্স ছিল না। তাই তাঁরা মামলা করলেও লাভবান হবে বলে মনে করা হচ্ছিল না। এই ঘটনাতে অতনু হতাশায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেছিলেন, পৃথিবীতে এমন কোনো শক্তি নাই যে তিনি সেই শক্তিতে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারেন।
এমন পরিস্থিতিতে তাঁদের সব বিপদ কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করছিলেন সুমনা। সুমনা চিন্তা করেছিলেন এমন কী করলে তাঁদের সামান্যতম সাহায্য হবে। তিনি নিজে কী কী করতে পারবেন তার একটা তালিকা তৈরি করছিলেন। সেই তালিকা থেকে যেটি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছিল তা হলো ক্রাউডরাইজ নামক ওয়েবসাইটে ঘটনার বিস্তারিত লিখে সাহায্য চাওয়া। সেই লেখা থেকে তিনি ৯৯ হাজার ৯৩২ ডলার দান পেয়েছিলেন। যার পুরোটাই তিনি অতনুকে দিয়েছিলেন। সুমনা সেই চিন্তা না করলে আজ অতনু তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে কী সমস্যায় না পড়তেন।
আপনি যদি হতাশাগ্রস্ত হন, তবে একটা কাজ করে দেখতে পারেন। এটা খুবই সহজ কাজ। এতে অন্তত হারানোর কিছু নেই। এ জন্য আপনাকে নিজের মতো করে একটা ফরম পূরণ করতে হবে। ফরমটা হলো—
আমি হতাশ, কারণ: .... .
যদি এমন হতো, তা হলে খুবই ভালো হতো: .......
আমি এতে বাস্তবে যা করতে পারি: .... .
চলুন দেখা যাক, এই ফরমটা কীভাবে আমাকে প্রায় ৩ মাসের হতাশা থেকে বাঁচিয়েছিল।
আমি হতাশ, কারণ:
১. চার মাস থেকে চাকরির খোঁজে, ইন্টারভিউ দিয়েও কোনো চাকরি পাচ্ছি না
২. আমার হাতে কোনো টাকা নেই
৩. আমার বন্ধু অদিত আমাকে তাঁর বাসায় থাকতে ও খেতে দিয়েছিল, সেই শেষ সম্বলও শেষ হয়ে যাচ্ছে ১০ দিনের মধ্যে।
যদি এমন হতো, তা হলে খুবই ভালো হতো:
১. এক সপ্তাহের মধ্যেই যদি চাকরি পেতাম
২. হাতে যদি কিছু টাকা থাকতো
আমি এতে বাস্তবে যা করতে পারি:
১. যে ইন্টারভিউগুলো দিয়েছিলাম, সেগুলোর খবর নিতে পারি
২. কারও কাছে কিছু টাকা ধার চাইতে পারি
৩. আরও বেশি চাকরির আবেদন করতে পারি
আমি এই তালিকা অনুযায়ী কাজ করি। আমার বন্ধু মিজানের কাছে টাকা চাই, আরও বেশি চাকরির আবেদন করি। আগের ইন্টারভিউ দেওয়া চাকরিগুলোর খবর নিই। পাঁচ দিনের মধ্যেই শিকাগোতে আগের ইন্টারভিউ দেওয়া চাকরির অফার লেটার পাই। এতে হতাশার মধ্যে আশার আলো দেখি।
হতাশাগ্রস্তদের জন্য
১. চিন্তা করবেন আপনি কী করতে পারছেন, কখনো চিন্তা করবেন না কী হারিয়েছেন
২. মনে রাখবেন, আপনার হতাশার জন্য অন্যরা দোষী হলেও তাদের দোষারোপ করে হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না
৩. হতাশা আপনাকে চেষ্টা থেকে বিরত রাখতে পারবে না; আপনার চেষ্টার একটা না একটা পথ খোলা আছেই
৪. নিজের ওপর বিশ্বাস রাখবেন
৫. ব্যস্ত থাকলে হতাশা আপনার মনে স্থান পাবে না
৬. হতাশাগ্রস্ত হয়ে ওপরে বর্ণিত উপায়ে চেষ্টা করেও যদি আপনি জয়ী হতে না পারেন, অন্তত বলতে পারবেন যে এই পদ্ধতি কাজ করে না।