‘বাড়ি’ শব্দটি প্রবাসীদের কাছে বেশ আবেগের। এতে জড়িয়ে আছে শৈশবের স্মৃতি, পরিবার-পরিজন আর নিজের শিকড়ের প্রতি তীব্র ভালোবাসার টান। আবেগ–জাগানিয়া সেই বাড়িকে উপজীব্য করে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের এক ব্যতিক্রমী আয়োজন। ‘মাই হোম মাই বাড়ি’ শীর্ষক এ আয়োজনে বাংলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে প্রদর্শিত হয় একটি ঘর। পাশাপাশি ছিল লন্ডনের কারি ক্যাপিটালখ্যাত ব্রিকলেনের ব্যবসায়ীদের মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতি তুলে ধরে চিত্র প্রদর্শনী।
গত বৃহস্পতিবার পূর্ব লন্ডনের বাংলা টাউন এলাকার কবি নজরুল সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় এ আয়োজন। বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে বছরব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করছে। ‘মাই হোম মাই বাড়ি’ ছিল ওই উদযাপনেরই অংশ। প্রদর্শনীটির অর্থায়ন করেছে আর্টস কাউন্সিল ইংল্যান্ড।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত উদীয়মান চারুশিল্পী রহিমুর রহমানের নেতৃত্বে টাওয়ার হ্যামলেটসের একদল তরুণ কয়েক মাসব্যাপী বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে অনুসন্ধান করেন। নিজেরা তৈরি করে ব্লক প্রিন্টের কাপড়। ওই কাপড়, সুতা আর চুড়ির গাঁথুনিতে তৈরি করা হয় ঘরটি।
মঞ্চের আলোচনা অনুষ্ঠানে শিল্পী রহিমুর রহমান বলেন, ‘বাড়ি বললেই প্রবাসী সকলের বাংলাদেশের কথা মনে পড়ে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাসংগ্রামের স্মৃতি স্মরণ করার জন্য “বাড়ি” শব্দটি খুবই শক্তিশালী। যে কারণে আয়োজনটির কেন্দ্রে রাখা হয়েছে একটি বাড়ি।’ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ও স্বাধীনতাসংগ্রাম নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পিকার আহবাব হোসেন, শিল্প, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াবিষয়ক কেবিনেট সদস্য কাউন্সিলর সাবিনা আক্তার। আলোচনা সঞ্চালনায় ছিলেন কাউন্সিলের আর্টস ডেভেলপমেন্ট অফিসার রুকসানা বেগম।
ব্রিকলেনের যেসব ব্যবসায়ীর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে, তার মধ্যে প্রেম প্রীতি রেঁস্তোরার মালিক আজমল হোসেন বলেছেন, তিনি নিজেই ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটকও হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি হয়ে আমরা গর্বিত’। মনসুন রেস্তোরাঁর মালিক শামসুদ্দিন শামস বলেন, মুক্তিসংগ্রামের সময় তাঁর বয়স ছিল ১২। মুক্তিবাহিনীকে নানাভাবে সহায়তা করেছেন। তাঁর কাছে পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের স্মৃতি এখনো দগদগে।
অনুষ্ঠানে অতিথিদের জন্য ছিল বাঙালির চানা, পেঁয়াজু, বেগুনি, পাকোড়াসহ নানা ঐতিহ্যবাহী নাশতার আয়োজন।