‘বাংলাদেশ-তুরস্ক সম্পর্ক: সুফিবাদ কানেক্ট’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করেন বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল ইস্তাম্বুল। ১৪ অক্টোবরের এই আলোচনা সভায় তুরস্কের মিডিয়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব ও সুশীল সমাজের সদস্যরা ছাড়াও তুরস্কের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক, কলামিস্ট ও চলচ্চিত্র পরিচালক শাহরিয়ার কবির।
কনস্যুলেটে নির্মিত বঙ্গবন্ধু গ্যালারি পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম সূচনা বক্তব্যে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুত্থানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্ব ও অবদানের কথা স্মরণ করেন। কনসাল জেনারেল আরও উল্লেখ করেন যে এ বছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী (মুজিব বর্ষ) পালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর জীবন, আদর্শ, সংগ্রাম ও কর্মের ওপর কনস্যুলেট জেনারেল নানামুখী কার্যক্রম ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন।
কনসাল জেনারেল আরও যোগ করেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি এ মহান নেতা শুধু আমাদের একটি দেশই উপহার দেননি, দিয়েছিলেন একটি সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তর করে চলেছে। আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ সরকার করোনা মহামারির ফলে উদ্ভূত স্বাস্থ্য খাত ও অর্থনৈতিক প্রভাব কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশ-তুরস্কের মধ্যেকার বিরাজমান ধর্মীয় সম্প্রীতির কথা উল্লেখ করে কনসাল জেনারেল মাওলানা জালালউদ্দিন রুমি (রহ.) এবং শাহজালালের মধ্যকার ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক বন্ধনের কথা অতিথিদের অবহিত করেন। সুফিবাদের মধ্য দিয়ে দুই দেশের জনগণের মধ্যকার সাংস্কৃতিক বন্ধনই শুধু শক্তিশালী হবে না, বরং উভয়ের বোঝাপড়া ও যোগাযোগকে আরও সহজ, ঘনিষ্ঠ ও দৃঢ় করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ আজ একটি উদার মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিত এবং ধর্মীয় সম্প্রীতির ক্ষেত্রে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
বিশেষ অতিথি ইস্তাম্বুল বার কাউন্সিলের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান মেথিন উরাচিন এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ কনস্যুলেটকে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। বিশ্বশান্তি ও কল্যাণার্থে তিনি সুফিবাদের প্রচার ও প্রসারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এই ধরনের অনুষ্ঠান বাংলাদেশ এবং তুরস্কের জনগণের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও গভীর ও প্রসারিত করবে বলে মতামত ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে প্রথিতযশা নির্মাতা শাহরিয়ার কবির নির্মিত ‘হাকানের শান্তিযাত্রা’′ প্রামাণ্যচিত্রটি প্রদর্শিত হয়। নির্মাতা শাহরিয়ার কবির প্রামাণ্যচিত্রটির প্রেক্ষাপট এবং বর্তমান সমাজে এর প্রভাবসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি উপস্থিত অতিথিদের সঙ্গে সুফিবাদের বিভিন্ন দিক নিয়ে মতবিনিময় করেন। মুসলিম রাষ্ট্রের তরুণসমাজকে তিনি আরও গভীরভাবে সুফিবাদকে ধারণ করার আহ্বান জানান।
বর্তমানে বিশ্বে বিরাজমান জঙ্গিবাদ নির্মূল এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য ‘হাকানের শান্তিযাত্রা’′ প্রামাণ্যচিত্রটি একটি প্রয়াস হিসেবে উল্লেখ করেন। মাওলানা জালালউদ্দিন রুমির ওপর নির্মিত তাঁর প্রথম প্রামাণ্যচিত্র ‘মিথাথের স্বপ্ন’-এর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ′‘হাকানের শান্তিযাত্রা’ মূলত প্রথমটির ধারাবাহিকতায় নির্মিত তাঁর দ্বিতীয় প্রয়াস। তিনি শরণার্থীদের নিয়ে আরও একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন, যেখানে সিরিয়ান শরণার্থী ও রোহিঙ্গা ইস্যুর বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হবে।
নিজের অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে ‘হাকানের শান্তিযাত্রা’ প্রামাণ্যচিত্রের মূল অভিনেতা এবং তুরস্কের খ্যাতনামা সুফি শিল্পী ও লেখক হাকান মেনজুচ দক্ষিণ এশিয়ার সুফিবাদ বিশেষ করে বাংলাদেশের লালনসংগীতের প্রতি তাঁর অনুরাগ ও ভালোবাসার কথা ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশেষ অতিথিদের′মুজিব বর্ষ-এর লোগো খচিত উপহারসামগ্রী প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে আমন্ত্রিত অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারে।
তথ্য: বাংলাদেশ কনসুলেট জেনারেল, ইস্তাম্বুল, তুরস্ক