সুইজারল্যান্ডে ভিন্নভাবে ঈদুল ফিতর উদযাপন
গত বৃহস্পতিবার (১৩ মে) উৎসবমুখর পরিবেশে সুইজারল্যান্ডে পালিত হলো পবিত্র ঈদুল ফিতর। অতিমারির এই দুঃসময়ে গত বছর সুইজারল্যান্ডের কোথাও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। সেখানে এ বছর দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর সীমিত আকারে মসজিদে দুই থেকে তিনবারে নির্দিষ্ট সংখ্যক এবং নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে ঈদের জামাতের অনুমতি দেওয়া হয়।
ঈদের আগের দিন ছিল জামাতে নাম নিবন্ধন করার জন্য অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া। ছিল কিছু নিয়মকানুন, যেমন: ঘর থেকে অজু করে যাওয়া, জায়নামাজ নিয়ে যাওয়া, মোবাইল দিয়ে ছবি বা ভিডিও না করা, মাস্ক পরিধান করা ছিল বাধ্যতামূলক, নারী ও ১২ বছরের নিচে শিশুদের জামাতে অংশগ্রহণ করাকে নিরুৎসাহিত করা হয়। গত বছর যেখানে সব রকম জমায়েত ছিল নিষিদ্ধ, সেখানে এ বছর অনেকটাই ছিল শিথিল।
নিজের ঘরে ১০ জন এবং বাইরে ১৫ জনের অতিরিক্ত লোকজনের জমায়েতের নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল আছে। আর ইনডোর অনুষ্ঠানের জন্য আছে ১০০ জনের অনুমতি, অবশ্যই তা সামাজিক দূরত্ব মেনে নিয়ে। তাই প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনেকটা খাঁচার আগল ভেঙে ঈদ আনন্দ উপভোগ করেছেন। গত বছর কারও সঙ্গে তেমন একটা দেখা–সাক্ষাৎ, যোগাযোগ হয়নি, সে ক্ষেত্রে এবারের ঈদুল ফিতর সবার জন্য ছিল বহু কাঙ্ক্ষিত ও আনন্দের।
জুরিখ বাংলা স্কুল এক বছর ধরে তাদের কার্যক্রম অনলাইনভিত্তিক চালিয়ে আসছিল। এবারের ঈদুল ফিতরে তাদের একটি ব্যতিক্রমধর্মী কার্যক্রম বেশ প্রশংসিত হয়েছে। মূলত স্কুলের বাচ্চাদের জন্যই তারা ঈদ আনন্দ উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ঈদের পরে গত শনিবার (১৫ মে) স্থানীয় দুটো হলরুমে আলাদাভাবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে, র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করে স্কুলের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক, পরিচালনা পর্ষদের উপদেষ্টামণ্ডলী অংশগ্রহণ করেন বাংলা স্কুল জুরিখের ঈদ আনন্দ উৎসবে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল খান, আনিস খান, সোহেল আজাদ, জাকির হোসেন প্রমুখ।
স্কুলের ছোট ছোট সোনামণিদের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ এবং তাদের কোলাহল মুখরিত স্বতঃস্ফূর্ত গান, কবিতা, কৌতুক বলা ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। ‘নতুন প্রজন্মের মাঝে ঈদের পবিত্রতায় ত্যাগ ও মহিমা শিক্ষা দিতেই বাংলা স্কুলের এই প্রচেষ্টা। প্রবাসে ঈদকে পৌঁছে দিতে হবে মেইন স্ট্রিমের কাছে এবং সে কাজটি করবে আমাদের নতুন প্রজন্ম’—তেমনটাই জানালেন বাংলা স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাংবাদিক বাকী উল্লাহ খান।
বিদেশ বিভুঁইয়ে ভিন্ন পরিবেশ এবং সংস্কৃতিতে এভাবেই আমরা উপস্থাপন করব আমাদের ধর্মীয় উৎসব এবং আবহমান বাঙালির কৃষ্টি-কালচারকে। বিদেশের মাটিতে সেটা কেবলই সম্ভব নিজের দেশপ্রেম, ভাষা প্রেম এবং সংস্কৃতি শিক্ষা ও চর্চা দিয়ে এবং জাত-পাত, গোত্র, বর্ণ, রাজনীতি পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে এক এবং অভিন্ন বাঙালি হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে।
*লেখক: রাওদাতুল জান্নাত, জেনেভা, সুইজারল্যান্ড