সিডনির বন্যায় বাড়ি ছেড়েছে ৪০০০০ মানুষ, নিরাপদে বাংলাদেশিরা

বন্যায় ডুবে আছে গাড়িছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় প্রায় অচল হয়ে পড়েছে দেশটির অন্যতম প্রধান শহর সিডনি। সপ্তাহব্যাপী ভারী বৃষ্টির কারণে এ বন্যা দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত বন্যার কবলে ২১ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে সিডনির প্রায় ৪০ হাজার মানুষ নিজেদের বাড়ি ছেড়েছে। যেকোনো সময় বাড়ি ছাড়ার সতর্কসীমায় রয়েছেন আরও ২০ হাজার মানুষ। এদিকে গত ৬৬ বছরের মধ্য রেকর্ড ভাঙা বৃষ্টি হয়েছে সিডনিতে। আজ মঙ্গলবার সিডনিতে প্রায় ৮২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর আগে ১৯৫৬ সালে এক দিনে প্রায় ৭৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল।

এদিকে বন্যায় সিডনির অনেক প্রধান সড়ক অচল হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এম–৫ মহাসড়ক, রোজভিল ব্রিজ, নর্থ রিচমন্ড ব্রিজ, ইয়ারামুন্ডি ব্রিজ, উইন্ডসর ব্রিজসহ আরও অনেক সড়ক। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বহু স্কুল-কলেজ। জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে রাজ্যজুড়ে ৭৬টি জরুরি অপসারণ আদেশ জারি রয়েছে, ২ লাখ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হবে। আর ১৮টি আদেশে সতর্ক করা হয়েছে আরও ৩ লাখ বাসিন্দাকে। অতিমাত্রার এ বৃষ্টিতে দেশটির প্রায় সব রাজ্য আক্রান্ত হলেও অতি ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া, ভিক্টোরিয়া, কুইন্সল্যান্ড ও নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য।

বন্যায় ডুবে গেছে সিডনির অনেক জায়গা
ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়াজুড়ে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত বন্যায় কারও সরাসরি আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এ প্রতিবেদক কথা বলেন স্থানীয় বাংলাদেশিদের সঙ্গে। সিডনির ক্যাম্পবেলটাউন সিটি কাউন্সিলের বারডিয়া এলাকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ আবু তারিক বলেন, প্রায় ২ দশক ধরে অস্ট্রেলিয়ায় আছি। কিন্তু কখনো এত বৃষ্টি দেখিনি। আষাঢ় মাসের মতো টানা বৃষ্টি আর বৃষ্টি। যাঁরা জরুরি প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যাবেন, তাঁরা সাবধানে গাড়ি চালাবেন, বৃষ্টির কারণে রাস্তায় গাড়ির চাকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা মুশকিল।

সিডনির বিখ্যাত এম–৫ টানেলে ঢুকে গেছে বন্যার পানি
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশি–অধ্যুষিত ল্যাকেম্বায় বসবাসরত সিডনির স্থানীয় পত্রিকা মুক্তমঞ্চের সম্পাদক ও সমাজকর্মী নোমান শামীম জানান, ‘আমাদের বাংলাদেশিদের মধ্যে এখনো কেউ বন্যার কবলে পড়েছেন বলে শোনা যায়নি। তবে অনেকেই জানিয়েছেন অতিবৃষ্টির কারণে বিভিন্ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এ সময় যাঁরাই সমস্যায় পড়বেন, তাঁরাই দ্রুত নিউ সাউথ ওয়েলস এসইএস সার্ভিসে যোগাযোগ করবেন।’

বৃষ্টির পানিতে সয়লাব সিডনির প্রাণকেন্দ্রের বিখ্যাত সেন্টিনিয়াল পার্ক
ছবি: সংগৃহীত

সিডনির বাংলাদেশি চিকিৎসক আসাদ শামস বলেন, ‘বাংলাদেশিদের মধ্যে এখনো কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও আমরা বিভিন্ন পেশাজীবী একত্র হয়ে পিটটাউনের পাঁচ একরের যে জায়গা বাংলাদেশের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহার করি, সেই নীপবন পল্লি বন্যার কবলে পড়েছে। ধারণা করছি, এবারও বেশ ক্ষয়ক্ষতি হবে।’ সিডনিপ্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক সাজিদুল ইসলাম জানান, তাঁর বাড়ি থেকে কর্মস্থল নর্থ রিচমন্ড ফ্যামিলি মেডিকেল প্র্যাকটিসে যাওয়ার পথের ব্রিজে পানি উঠে গেছে। ফলে তিনি কাজে যেতে পারছেন না।

সিডনির ম্যানলি এলাকা
ছবি: সংগৃহীত