সময় তখন মধ্যরাত। ট্যাক্সিতে করে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে পুরোনো হাসপাতালে পৌঁছায় দুটি রক্তচোষা জোঁক। হাসপাতালের নার্সরা সেটি গ্রহণ করে বিদায় করেন ট্যাক্সিওয়ালাকে। তিনি তখনো জানতেন না যে চিকিৎসা খাতে ব্যবহৃত সিডনির সর্বশেষ দুটি জোঁককে তিনি ৪০ কিলোমিটার পথ পার করিয়ে এনেছেন। জোঁক দুটি ব্যবহার করা হবে ৩২ বছর বয়সী এক মুমূর্ষু রোগীর দুটি আঙুল বাঁচাতে।
সিডনি হাসপাতালে গত মঙ্গলবার রাতে চমকপ্রদ এ ঘটনা ঘটে। কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় ডান হাতের তিনটি আঙুল কাটা পড়ে রোগীটির। একটি আঙুল সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও দুটি আঙুল ঝুলে ছিল। জরুরি অস্ত্রোপচারে দুটি আঙুল জোড়া লাগলেও আঙুল দুটির টিস্যুতে রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হচ্ছিল না। এ নিয়ে চিন্তায় পড়েন সার্জন ডা. আনন্দ দেব। কারণ, রক্ত সঞ্চালন পর্যাপ্ত না হলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আঙুল দুটি নষ্ট হয়ে যাবে।
আর তখনই এক চমৎকার চিকিৎসাপদ্ধতির কথা মনে পড়ে ডাক্তার দেবের। ‘রিচার্ডসোনসিয়াস জোঁক’ নামের বিশেষ প্রজাতির জোঁক রয়েছে, যা জমে থাকা রক্তকোষ শোষণ করতে সক্ষম। তবে এমন জোঁক সিডনি হাসপাতাল থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে লিভারপুল হাসপাতালে কেবল দুটিই অবশিষ্ট ছিল। পরে তা জরুরি ভিত্তিতে ওই রাতেই স্থানান্তর করা হয় সিডনি হাসপাতালে। এ জোঁককে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে প্রায় ৩০ দিন অভুক্ত রাখা হয়। জোঁক দুটির কার্যক্ষমতায় রোগীর আঙুলে আবারও রক্ত সঞ্চালন শুরু হয়।
এর মধ্যে হাসপাতাল থেকে সফলভাবে আঙুল জোড়া লাগিয়ে রোগী কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাড়ি ফেরার সময় ফিশ ট্যাংকে রাখা জোঁক দুটি দেখিয়ে রোগীকে অধ্যাপক আনন্দ বলেন, ‘এই বিস্ময়কর ছোট প্রাণী দুটিই তোমার আঙুল দুটি বাঁচিয়েছে।’
অস্ট্রেলিয়ার প্রধান গণমাধ্যমগুলো এখন ঘটনার প্রশংসা করে সংবাদ করছে। আর অন্যদিকে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও চিকিৎসাশাস্ত্রের এক বিস্ময়কর সাফল্যের নজির মিলল সিডনিতে।