সিডনিতে আমাদের একটি ইতিবাচক আত্মপ্রকাশ হয়েছে

কনসাল জেনারেল খন্দকার মাসুদুল আলম
ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্যিক রাজধানী সিডনিতে চালু রয়েছে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল। ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর থেকে নতুন করে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে এ কার্যালয়টি। সিডনির এই মিশনে কনসাল জেনারেল হিসেবে ২৩ মার্চ ২০১৯ থেকে দায়িত্ব পালন করছেন খন্দকার মাসুদুল আলম। এর আগে তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন শাখাসহ সুইডেন এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত ছিলেন। সিডনিতে পরিচালিত কনস্যুলেট জেনারেলের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। এরই একটি অংশ থাকছে এখানে।

প্রশ্ন :

সিডনিপ্রবাসী বাংলাদেশিরা কেন এখনো সরাসরি ই-পাসপোর্ট পাচ্ছেন না?

খন্দকার মাসুদুল আলম: বাংলাদেশের বাইরে অন্য দেশে দূতাবাসের মাধ্যমে ই-পাসপোর্ট প্রদান করার প্রক্রিয়া কয়েকটি ধাপে শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে কানাডাসহ কয়েকটি দেশে এ সেবা প্রদান করা হচ্ছে। করোনাকালে অস্ট্রেলিয়ার সীমান্ত বন্ধের কারণে এ দেশে সেবাটি চালু করা সম্ভব হয়নি। এ মুহূর্তে দ্বিতীয় ধাপ চলছে, তবে এ ধাপেও অস্ট্রেলিয়ায় এ সেবা চালু হচ্ছে না। অস্ট্রেলিয়াকে তৃতীয় ধাপের জন্য রাখা হয়েছে, তবে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় দ্বিতীয় ধাপে এগিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। প্রথম থেকেই মিশনকে কারিগরিভাবে পুরোপুরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পরে এ বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত পর্যায়ে দেখা এবং কথা হয়েছে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ূব চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, সীমান্তে সমস্যা না থাকলে এ প্রকল্প চালু করতে তাঁদের কোনো জটিলতা নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে দ্বিতীয় ধাপেও চালু করা সম্ভব হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন। তাই ধারণা করছি আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা সিডনি মিশন থেকে ই-পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।

সিডনিতে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের গভর্নরের সঙ্গে কনসাল জেনারেল
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

ঢাকা-সিডনি সরাসরি বিমান চলাচলের কাজ তো এগিয়ে ছিল, এখন কী অবস্থা?

খন্দকার মাসুদুল আলম: দুই দেশের মধ্যকার সরাসরি বিমান চলাচলে এয়ার সার্ভিস চুক্তির প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে এমন কোনো চুক্তি চূড়ান্ত হয়নি। তবে চুক্তি সম্পাদন করার প্রক্রিয়ায় দুই পক্ষের সম্মতি রয়েছে এবং এ বিষয়ে ক্যানবেরার বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে সব করণীয় সম্পন্ন করা হয়েছে। বিমান চলাচল নিয়ে বেশ কয়েক বছর আগেই একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরও করা হয়েছে, যার ভিত্তিতে বিমান সংস্থাগুলো চাইলে এবং বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর লাভজনক মনে করলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই বিমান চলাচল শুরু করা সম্ভব।

প্রশ্ন :

এখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা কবে থেকে সিডনি কনস্যুলেট থেকে জাতীয় পরিচয় পাবেন?

খন্দকার মাসুদুল আলম: বাংলাদেশ সরকারের একটি সিদ্ধান্ত হলো প্রবাসীরা জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে পারবেন। তবে এ প্রকল্পের প্রক্রিয়া এখনো নিশ্চিত হয়নি। লন্ডনসহ আরেকটি মিশনে দুটি পাইলট প্রকল্প করা হয়েছিল। তবে করোনাকালীন সংকটের কারণে সে প্রকল্পটি সম্ভবত সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে। পরে কী হবে এ নিয়ে সরকারি কোনো পরিকল্পনার কথা আমাদের কাছে এখনো আসেনি।

প্রশ্ন :

জন্মনিবন্ধনের আবেদনে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ শোনা যায়। এ বিষয়ে কনস্যুলেটের ব্যাখ্যা কী?

খন্দকার মাসুদুল আলম: জন্মনিবন্ধনের আবেদন প্রক্রিয়াটি কেন্দ্রীয়ভাবে স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত এবং তাদের পরিচালিত অনলাইন নিবন্ধন সিস্টেমের মাধ্যমেই দূতাবাসগুলো এ নিবন্ধন সম্পন্ন করে। অনলাইন নিবন্ধনে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষাতেই ফরম পূরণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যা অনেক আবেদনকারীর কাছে বেশ জটিল মনে হয়। এ কারণে আমরা কনস্যুলেটের পক্ষ থেকে একটি সহায়তামূলক ভিডিও ক্লিপও তৈরি করেছি সবার সহায়তার জন্য। কিন্তু এরপরও প্রায়ই অসম্পূর্ণ আবেদন জমা পড়ে। যেহেতু অনলাইন সিস্টেমটিতে আবেদনকারীর দেওয়া তথ্য নিবন্ধনকারী কর্মকর্তার পক্ষ থেকে সংশোধনের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি, সেহেতু, আবেদনকারীকে পুনরায় পরিপূর্ণ আবেদন জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা ছাড়া কনস্যুলেটের অন্য কোনো উপায় থাকে না। এ জাতীয় ক্ষেত্রে নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি দীর্ঘতর হয়। তবে যাঁরা পরিপূর্ণ আবেদন জমা দেন, তাঁদের ক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেবাটি প্রদান করা হয়।

প্রশ্ন :

অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরায় স্থায়ী বাংলাদেশি দূতাবাস কার্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে। একইভাবে কি সিডনিতে স্থায়ী কনস্যুলেট কার্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে?

খন্দকার মাসুদুল আলম: সিডনি অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্যিক রাজধানী। তাই এখানকার প্রায় সব কনস্যুলেট কার্যালয়গুলোই শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত, যেখানে প্রায় সব ভবনই বাণিজ্যিক ভবন। ফলে সিডনিতে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের ৫৪টি কনস্যুলেট কার্যালয়ের মধ্যে প্রায় ৪৩টি কার্যালয়ই বিভিন্ন বাণিজ্যিক ভবন থেকে পরিচালিত হচ্ছে। সিডনির বাংলাদেশ কনস্যুলেটটিও বর্তমানে এমনই একটি বাণিজ্যিক ভবনে স্থাপিত। আমরা যেহেতু কার্যক্রমের প্রাথমিক পর্যায়ে আছি, তাই শুরুতেই আমরা স্থায়ীভাবে কার্যালয় স্থাপন করতে পারব না। তবে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে ধাপে ধাপে সম্ভাব্য সব দূতাবাস ও কনস্যুলেট কার্যালয়গুলোকে নিজস্ব ভবন থেকে পরিচালনা করার।

প্রশ্ন :

সিডনি কনস্যুলেট জেনারেল কার্যালয়ের কার্যক্রমের এমন কোনো সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা কাটিয়ে উঠলে সেবার মান আরও বাড়বে বলে আপনি মনে করেন?

খন্দকার মাসুদুল আলম: পৃথক ও স্বতন্ত্র কোনো ভবনে কার্যালয়টি থাকলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবসে পতাকা উত্তোলনের একটি কার্যক্রম থাকে, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম থাকে, যা প্রবাসী ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় করার একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এমনটা বাণিজ্যিক ভবনে আয়োজন করা কঠিন। এটা আমাদের একটি সীমাবদ্ধতা। আর লোকবলগত একটি সীমাবদ্ধতা আসলে সব কার্যালয়েরই থাকে। এ চ্যালেঞ্জ নিয়েই আমাদের কাজ করতে হয়। আমরা আমাদের কার্যক্ষমতার মধ্য থেকে সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। এর মধ্যে কারও অভিযোগ থাকলে সেটাও আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।

প্রশ্ন :

সিডনিতে বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেল কার্যালয় হওয়ায় এখানকার মূলধারায় বাংলাদেশিদের পরিচয় কি বেড়েছে?

খন্দকার মাসুদুল আলম: জাতি হিসেবে আমাদের তুলে ধরার কাজটি একটি সম্মিলিত প্রয়াস। আমরা আসলে বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি অংশ মাত্র। তবে সাংস্কৃতিক বহিঃপ্রকাশের দিক দিয়ে আমাদের দূতাবাস প্রথম সারিতে রয়েছে বলে আমি মনে করি। এ দেশের মূলধারার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিদের কাছে আমাদের কার্যক্রম তুলে ধরা, বিভিন্ন দিবসের আয়োজনে তাঁদের অংশগ্রহণ, এ সবই আসলে আমাদের পরিচয় তুলে ধরে। যেমন আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের গভর্নর উপস্থিত ছিলেন, যিনি সাধারণত এমন অনুষ্ঠানে খুব কমই অংশগ্রহণ করেন। এ বছরও আমাদের জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানটিতে পার্লামেন্টের স্পিকার, সরকারের মন্ত্রী, বিরোধী দলের প্রধান, কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী ছাড়াও আরও কয়েকজন সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সবকিছু মিলিয়ে সিডনিতে আমরা একটি ইতিবাচক আত্মপ্রকাশ করতে পারছি বলে আমি বিশ্বাস করি।