সিডনিতে লকডাউন বাড়ল, কয়েক কারণে মিলবে ঘরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি

সিডনির লকডাউনে আবারও টয়লেট পেপার কেনার ধুম।
ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির চার এলাকার বাসিন্দার গতকাল শনিবার ঘুম ভেঙেছে অন্য সব সাধারণ ছুটির দিনের মতো নয়। জনবহুল অস্ট্রেলিয়ার প্রাণকেন্দ্র সিডনিতে গতকালও ছিল থমথমে পরিবেশ। ঠিক যেন ২০২০ সালের মার্চ মাস। আকস্মিক লকডাউনে ব্যস্ত মানুষগুলো হঠাৎই গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে। জনসমাগমের প্রায় সব জায়গাতেই এখন সুনসান নীরবতা। সিডনিতে করোনাভাইরাসের আকস্মিক সংক্রমণ বাড়ায় গত শুক্রবার থেকে লকডাউন ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। শুক্রবার এক সপ্তাহ এবং সিডনির চার এলাকায় লকডাউন দেওয়া হয়েছিল। তবে শনিবার আক্রান্তের সংখ্যা ২২ থেকে বেড়ে ৫১-তে দাঁড়ালে নতুন নীতিমালা প্রকাশ করে রাজ্য সরকার।

আগামী ২ জুলাইয়ের পরিবর্তে ৯ জুলাই অর্থাৎ মোট ২ সপ্তাহের লকডাউন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া লকডাউনে থাকা সিডনির চার এলাকা সিডনি সিটি কাউন্সিল, রেন্ডউইক, ওয়েভারলি ও উলারা এর সঙ্গে আরও নতুন এলাকা লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে বৃহত্তর সিডনিসহ ব্লু মাউন্টেনস, সেন্ট্রাল কোস্ট, ওলংগং এবং শেলহারবারও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ সময় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

লকডাউনে ভুতুড়ে নগরে পরিণত হয়েছে সিডনি।
ছবি: রয়টার্স

যেসব কারণে ঘরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে, সেগুলো হলো—

*নিজ এবং পরিবারের সদস্য এবং পোষা প্রাণীর খাবার কিনতে।
*ঘরে বসে করা যাবে না এমন পেশার কর্ম সম্পাদনের জন্য।
*চাইল্ডকেয়ারে আসা-যাওয়ার জন্য।
*এমন শিক্ষা গ্রহণের জন্য, যা ঘরে বসে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।
*শরীরচর্চার জন্য, তবে সেটা বসবাসের এলাকাতেই হতে হবে।
*টিকা, ওষুধ বা যেকোনো চিকিৎসা গ্রহণ, রক্তদানের জন্য।
*২৭ জুন পর্যন্ত বিয়ের অনুষ্ঠানে এবং লকডাউনজুড়ে মৃত ব্যক্তির শেষক্রিয়ায় যাওয়া যাবে, তবে ১০০ জনের বেশি মানুষের একত্র হওয়া নিষিদ্ধ।
*নতুন বাড়ি ও ব্যবসার জায়গায় স্থানান্তর এবং পর্যবেক্ষণ করতে।
*জরুরি সহযোগিতা এবং বয়স্কদের সেবা দেওয়ার জন্য।
*কোনো আইনি বাধ্যতা থাকলে।
*কোনো জনসেবামূলক কর্মকাণ্ডে।
*বাবা-মা ও ভাইবোনদের দেখতে যাওয়া।
*কোনো হুমকি এবং ক্ষতির আশঙ্কা থেকে বাঁচতে।
*পরিচিত এমন ব্যক্তির সঙ্গে যৌক্তিক কারণে দেখা করা।

এদিকে লকডাউনের খবরে নিত্যসামগ্রী কিনতে প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে সিডনিবাসী। শহরের আলদি, কোলস কিংবা উলওর্থস থেকে শুরু করে ছোট-বড় প্রায় সব শপিং মলেই নিত্যসামগ্রীর শেলফ খালি করে ফেলেছেন স্থানীয়রা। তবে আবারও সবচেয়ে বেশি হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ টয়লেট টিস্যু পেপার কেনার জন্য। চাহিদার চেয়ে মজুতের উদ্দেশ্যে প্রচুর পরিমাণ টয়লেট টিস্যু কিনছে বাসিন্দারা। তবে আতঙ্কিত হয়ে কেনাকাটা না করার কথা জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গ্ল্যাডিস বেরেজিক্লিয়ান। তিনি বলেন, ‘এটা কোনো কারফিউ না, আপনার প্রয়োজনীয় যেকোনো জিনিস কেনার জন্য আপনি যেকোনো পর্যায়ে আপনার বাড়ির বাইরে আসতে পারবেন। আর দয়া করে আপনার প্রতিবেশীদের কথাও বিবেচনায় রেখে কিনুন।’

লকডাউনে সুনসান সিডনির ডার্লি হারবার।
ছবি: কাউসার খান

সিডনির প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভালো আছেন। কোনো বাংলাদেশিরও আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির যাতায়াত হয়েছে বলে শনাক্ত করা গেছে। তাই এসব এলাকায় কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বলেছেন প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকেরা। করোনাভাইরাসের বাড়তি সংক্রমণ নিয়ে উদ্বিগ্ন অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশের সংবাদপত্র আজকের কাগজ–এর সাবেক বার্তা সম্পাদক আবু রেজা আরেফিন বলেন, ‘গত বছরের সেই করোনার প্রথম দিনগুলো আবার ফিরে আসছে মনে হয়। বাংলাদেশের জন্য বেশি চিন্তা হয়। বাংলাদেশে হঠাৎ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শাটডাউনের পরামর্শ আর ও অস্ট্রেলিয়া লকডাউনে পড়ছে। পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হবে এ কামনায় করি এখন। তবে আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে কঠোরভাবে।’