নিউইয়র্কের প্রকৃতিতে বসন্ত এসেছে। বাঙালি-অবাঙালি মিলিয়ে বেশির ভাগ বাড়ির মালিকই আঙিনায় নানা বাহারি ফুলের পাশাপাশি সবজির চাষ করে থাকেন। তবে এশীয়দের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে নানা জাতের শাক-সবজি তোলা যায় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রবাসে বসে দেশি সবজি খেতে চাইলে ভরসা করতে হয় দেশ থেকে যাওয়া বাসি সবজির ওপর। কিন্তু বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করলে, একদম টাটকা অরগানিক সবজি খাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে বিদেশে বসে দেশি সতেজ সবজির স্বাদ পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, নিজেরা খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশী-স্বজন ও ভাড়াটেদের দিতে পারেন এই সবজি। এ ক্ষেত্রে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগটাও অটুট থাকে। বিদেশ বিভুঁইয়ে এই পুরো বিষয়টি জরুরি বলে মনে হয়। আবার চাইলে কেউ বাণিজ্যিকভাবেও করতে পারেন, যাতে কিছু আয়ও হতে পারে।
নিউইয়র্কে বাঙালি মালিকানাধীন স্টোরগুলোতে এখন দেশি সবজির বীজ ও চারা বিক্রি করা হচ্ছে। আঙিনায় গ্রীষ্মকালীন সবজির আবাদ নিয়ে নিউইয়র্কের বাঙালি গৃহস্থরা (বাড়ির মালিক) এখন ব্যস্ত উর্বর মাটি কিনে জমি (বেড) তৈরি, বীজতলা তৈরি কিংবা চারা সংগ্রহে।
হোম ডিপো ছাড়াও এলাকায় এলাকায় গ্রোসারিগুলোতে মিলছে উর্বর মাটির বস্তা। নানা জাতের শাক-সবজির বীজও বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে এলাকার গ্রোসারিগুলোতে বিক্রি হচ্ছে নানা সবজির চারা। মৌসুমি ব্যবসা হিসেবে এখন স্থানীয় বাঙালি গ্রোসারিগুলোও এই সুযোগ লুফে নিচ্ছে। বিপুলসংখ্যক চারার পসরায় সবুজ হয়ে উঠছে কোনো কোনো গ্রোসারি। গাছ লাগানোর পাশাপাশি অতিপ্রয়োজনীয় সারও বিক্রি করছেন দোকানিরা।
এতে একদিকে যেমন মৌসুমি ব্যবসা হচ্ছে, কিছু আয়ও হচ্ছে। তেমনি অন্যদিকে মানুষও সবজির বীজ, চারা, মাটি বা সার পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন। শখের বশে সবজি চাষ করলেও, শেষমেশ দেশি সতেজ সবজি তো পাওয়া যাচ্ছে। বিদেশের মাটিতে এটাই বা কম কীসে। আর সবজি চাষে তো বিশাল জমির প্রয়োজন হয় না। বিদেশে বাসার আঙিনা, ব্যাকইয়ার্ড বা টবেও এই সবজি লাগানো যায়। আর এতে সবুজ থাকছে বাসার চারপাশ।
নিউইয়র্ক নগরের জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, সাউথ জ্যামাইকা, এল্মহার্স্ট, এস্টোরিয়া, ওজোন পার্ক, চার্চ ম্যাকডোনাল্ড, ইস্ট নিউইয়র্ক, পার্কচেস্টারসহ বাঙালি অধ্যুষিত এলাকাগুলোর গ্রোসারিগুলোতে সবজির চারা পাওয়া যাচ্ছে। দেশি লাউ, শিম, বিভিন্ন জাতের বেগুন, টমেটো, বরবটি, মরিচ, সিলেটী নাগা মরিচ, শসা, শজনে, করলা, চিচিঙ্গাসহ বিভিন্ন জাতের সবজির চারা বিক্রি হচ্ছে ২ থেকে ৫ ডলার দামে। বিক্রি হচ্ছে দেশীয় সবজির বীজও। মাটির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৬ ডলারে।
শুধু সবজি নয়, ঔষধি গাছ হিসেবে তুলসীও লাগানো যেতে পারে। তুলসীতে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ফাংগাল উপাদান। এ ছাড়া নানা ঔষধি গুণের কারণে তুলসী গাছের পাতা, বীজ ও বাকলের ব্যবহার সর্বজনবিদিত। কাশি, শ্বাসকষ্ট, সর্দিজ্বর, হাঁপানি, ফুসফুসের দুর্বলতার মতো করোনা উপসর্গ মোকাবিলায় প্রাথমিকভাবে এই ভেষজের ব্যবহার জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাই, ক্রেতা বেড়েছে তুলসীর চারারও।
তাই বাড়ির আশপাশ বা টব ফেলে না রেখে, সবজির চাষ করুন কিংবা ঔষধি গাছ লাগান। এতে যেমন সতেজ দেশি সবজি খাওয়া যাবে তেমনি তা পরিচর্যায় কাটবে অবসর সময়।