শ্রমিক

প্রবাসে থেকেও দেশ

বিশ্বের শ্রমিকশ্রেণির মধ্যে ভাষা-সংস্কৃতি, ইচ্ছাশক্তি ও মনোগত পার্থক্য থাকলেও, কায়িক ও মানসিক শ্রমের বেলায় তেমন কোনো পার্থক্য নেই। ঢাকা শহরের বাসচালকের সহকারীরা বিভিন্ন স্টেশনের নাম ডাকতে ডাকতে মুখ দিয়ে ফেনা বের করে ফেলেন। তাঁরা মানুষকে দিনরাত সেবা দিচ্ছেন। অভিজ্ঞতায় দেখেছি, কিছু ভদ্রলোক ভাল-মন্দ যাচাই না করেই তাঁদের কটুবাক্যে অপমান করেন। আবার ডাকেন বখাটে। যদিও মুহূর্তক্ষণে বখাটেপনার কিছুই করেননি।

মানুষের তরে আগে নিজেকে সমঝদার হওয়া চাই, তাই না? তা না করে কিছু তরুণ ভাড়া অজুহাতের কথা–কাটাকাটিতে এ শ্রমিকদের গালি দেন। কিছু ছাত্র বুঝিয়ে দেন, থাপ্পড় মারাই এর শিক্ষা ও বিদ্যালয়ের আদর্শ। থাপ্পড়ের আগে নিজের বিবেককে প্রশ্ন করার ছিল, আমি ভদ্রলোকের ছেলে সমাজের মানুষকে কতটুকু সেবা দিই বা দিচ্ছি? বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা, চায়ের টেবিলে বসে থাকা, অকারণে সময় নষ্ট ও অর্থহীন গল্পগুজব করাই যেন নিত্যদিনের রুটিন।

ফাইল ছবি

অপরাধ যা-ই হোক, মানবাধিকারের বিধিতে কারও ওপর হাত তোলার অনুমোদন নেই, অনুমতি দেয় না। আমরা অপরাধীকে আইনের হাতে তুলে দিয়ে আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই, হতে শিখি। ক্ষমতার পেশিশক্তিতে আইনকে হাতে তুলে না নিই। শ্রমিকের ওপরও অত্যাচার-অবিচার না করি।

সমস্যা ছিল, আছে এবং থাকবে...। ধনীর দুলাল নিচ্ছেন শুধু সেবা। কেউ আবার নিজেকে ‘বাবা’ নামের ইয়াবার পেছনে বিকোচ্ছেন। দলবলে সময় কাটাচ্ছেন ক্যাসিনো বা ডিসকোতে। ধবংস হচ্ছেন ও করছেন। অভিনয়ের বেলায় সভ্য সমাজের বাহক ও আগামীর বুদ্ধিজীবী। ডিসকোর মতো আধুনিক প্রযুক্তিকে তো আর বাদ দেওয়া যায় না।
যে শ্রমিক জীবনেও ডিসকোতে যাননি, এমনকি ডিসকোর সঙ্গে পরিচয়ও নেই, তাঁরাই অপরাধ ও অপবাদের বোঝা বইছেন। সমাজের অগ্রগতি করেও শ্রমিকেরা পাচ্ছেন না নিজ অধিকারের ন্যায্য পাওনা। অর্থনীতিবিদেরা বলেছেন, ‘একটি দেশের যত বেশি অর্থই থাকুক, দেশের নীতিনির্ধারক যতক্ষণ তাঁর স্ট্রিট ক্লিনারের অধিকার নিশ্চিত করেননি, ততক্ষণ পর্যন্ত সেই দেশ উন্নত হতে পারেনি।’

আমি মানসিক শ্রম বিক্রি করতে গিয়ে সয়ে গেলাম হাজার যন্ত্রণা। শত চেষ্টায় পদবির পরিবর্তন আনলেও সঠিক মূল্যায়ন পাইনি, দেয়নি। এ যেন শ্রমিকের রক্ত চুষে না নিলে কোম্পানিগুলো কিছুতেই টিকছে না। ব্যবস্থাপকেরাও লোভের বশে চোখে দিয়েছেন পর্দা। শ্রমিকের প্রতি নেই সুনজর। ইদানীং আবার করোনা মহামারির দোহাই দিয়ে অরাজকতা চলছে। কোনো শ্রমিক মারা গেলে লাশটাও তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে না।

খেটে খাওয়া শ্রমিকদের খুব বেশি চাওয়া-পাওয়া নেই, নেই উচ্চাভিলাষিতার তীব্র হাহাকার। মহাজনেরা দরিদ্র শ্রমিকের যথার্থ মূল্য দেওয়ার চেষ্টা করলেই তাঁর ঘামের সঠিক মূল্য পরিশোধ হতে পারত।