শেষের পথে টরন্টোতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষাসৌধের কাজ

অবশেষে পূর্ণতা পাচ্ছে কানাডাপ্রবাসী বাংলাদেশিদের দীর্ঘকালের লালিত স্বপ্নের। টরন্টো শহরে নির্মিত হলো স্থায়ী শহীদ মিনার কিংবা সৌধ। বাংলাদেশের শহীদ মিনারের আদলে টরন্টোর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষাসৌধের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ।

হুইলচেয়ারে শহীদ বেদিতে যাওয়ার সুবিধা তৈরিসহ অল্প কিছু কাজ সম্পন্ন হলেই এটি সিটি অব টরন্টোর কাছে হস্তান্তর করা হবে। এর মধ্য দিয়ে টরন্টোয় বসবাসরত বাংলাদেশিদের শহীদ মিনার নির্মাণের দুই দশকের বেশি সময়ের স্বপ্ন এবং প্রচেষ্টার বাস্তবায়ন ঘটতে যাচ্ছে।

সিটি অব টরন্টোর সহায়তায় অর্গানাইজেশন ফর টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাংগুয়েজ ডে মনুমেন্ট ইনক (ওটিআইএমএলডি) এই ভাষাসৌধ নির্মাণের দেখভাল করে এবং সাফল্যের সঙ্গে এর নির্মাণকাজ পরিচালনা করে। গত ৭ নভেম্বর টরন্টোর মেয়র জন টরি, কাউন্সিলর ব্রাড ব্রাডফোর্ড, এম পি ন্যাথানিয়াল আরস্কীন, এম পি ডলি বেগম ও রীমা ম্যাকগুয়ান এবং ওটিআইএমএলডির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ভূমি খননের মাধ্যমে ভাষা স্মৃতিসৌধের নির্মাণকাজ শুরু হয়।

বরফ ও ঠান্ডার কারণে এত দিন আবৃত থাকলেও সম্প্রতি ভাষাসৌধটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বাঙালির প্রাণকেন্দ্র ডেনফোর্থের লাগোয়া ডেনটনিয়া পার্কে দৃশ্যমান শহীদ মিনার প্রবাসী বাংলাদেশিদের আপ্লুত করে তোলে। ওটিআইএমএলডি এবং তাদের পরিচালকদের সফল নেতৃত্বে টরন্টোয় ভাষাসৌধ নির্মিত হওয়ায় কমিউনিটির বিভিন্ন স্তরের মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেন।

ওটিআইএমএলডির চেয়ারম্যান হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনকারী ব্যারিস্টার চয়নিকা দত্ত বলেন, কানাডার বাংলাদেশি কমিউনিটির ঐক্যবদ্ধ অবস্থান এবং সহযোগিতার কারনেই দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। তিনি কমিউনিটির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ভবিষ্যতেও কমিউনিটির ঐক্যবদ্ধ এবং সহযোগিতার অবস্থানই ভাষাসৌধকে কানাডার মূলধারায় বাঙালির ঐতিহ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।

তিনি বলেন, ‘একদল স্বপ্নবান মানুষ ওটিআইএমএলডির ব্যানারে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন ভাষাসৌধ নির্মাণের জন্য। তাঁদের পরিশ্রম আর কমিউনিটির সহযোগিতায় মিলেমিশেই আজকের জায়গায় আমরা পৌঁছেছি।’

সিটি অব টরন্টোর সূত্রে জানা গেছে, সিটি কর্তৃপক্ষ ভাষাসৌধটি সরেজমিনে পরীক্ষা করতে এসে শহীদবেদিতে হুইলচেয়ারে যাওয়া–আসার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি বিষয়ে সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছে। এই কাজগুলো শেষ হলে সিটি পুনরায় পরীক্ষা–নিরীক্ষা শেষে কাজের সন্তষ্টি সাপেক্ষে এটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেবে।

সিটি অব টরন্টো সূত্র জানায়, বাংলাদেশি কমিউনিটি নির্মান করলেও আন্তর্জাতিক ভাষা স্মৃতিসৌধটি টরন্টো সিটির ব্যবস্থাপনায় থাকবে। এটি হবে সিটির সম্পত্তি। এখানে যেকোনো ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সিটি কর্তৃপক্ষের শর্ত মেনে আবেদন করে সিটির অনুমোদন সাপেক্ষেই করতে হবে। সিটির সম্পত্তি হিসেবে সব দেশের নাগরিকদেরই এই ভাষা স্মৃতিসৌধ ব্যবহারের অধিকার থাকবে বলে ওই সূত্রটি জানায়।

সিটি অব টরন্টোর সূত্র জানায়, ভাষা স্মৃতিসৌধ নির্মাণের তদারকির দায়িত্বে থাকা ওটিআইএমএলডি এবং টরন্টো সিটির মধ্যকার চুক্তি অনুসারে, হস্তান্তরের পর এক বছর পর্যন্ত এর যেকোনো রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্কারের প্রয়োজন হলে সেটি ওটিআইএমএলডিকে করে দিতে হবে।

এদিকে নতুন নির্মিত ভাষা স্মৃতিসৌধ টরন্টো সিটির কাছে হস্তান্তর পূর্ববর্তী আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে ওটিআইএমএলডির পরিচালনা পরিষদের পরিধি কমিয়ে সাত সদস্যের করা হয়েছে। এই কমিটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সৌধটি সিটির কাছে হস্তান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় বাকি কাজ করবে। হস্তান্তরের জন্য বর্তমান সংক্ষিপ্ত কমিটির সদস্যরা হলেন ব্যারিস্টার চয়নিকা দত্ত, সৈয়দ আবদুল গফফার, মির্জা শাহীদুর রহমান, জামাল হোসেন, মনির ইসলাম, আবুল আজাদ ও ম্যাক আজাদ।

বিবৃতিতে ওটিআইএমএলডি বলেছে, এই সাতজনের কমিটিই ওটিআইএমএলডিকে প্রতিনিধিত্ব করবে। তার বাইরে কারও ওটিআইএমএলডির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নাই। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার বা লুটপাটের অভিযোগ আছে এমন বা বিতর্কিত কেউই এই কমিটিতে নেই।