লড়াকু মেয়ের গল্প

রহমান সাহেব আজও পার্কের বেঞ্চিতে অনেকক্ষণ বসে থাকলেন, একা। বিকেলের আলো কমতেই বন্ধুরা যে যার মতো ঘরে ফিরে গেছে। হেমন্তের বিকেলে আলোটা সহসা নিভে গিয়ে দুম করে সন্ধ্যা নামে। হালকা কুয়াশার চাদর ঢেকে দেয় প্রকৃতিকে। ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে পার্কের বেঞ্চিতে বসে রহমান সাহেব দেখছিলেন মানুষের ঘরে ফেরা। শহরের কাজ শেষ করে মানুষ নৌকায় নদী পার হয়ে ঘরে ফিরছে। নদীর অপর পাড়ে দিনমজুর, মাঝি এ রকম খেটে খাওয়া মানুষ জেগে ওঠা চড়ে ঘর বেঁধেছে। মানুষের বসতিতে একে একে জ্বলে উঠছে আলো। ঠিক যেমন রাতের আকাশে একটা একটা করে নক্ষত্র স্পষ্ট হয়। সেই সব গৃহে আলো জ্বালিয়ে কেউ অপেক্ষা করছে প্রিয়জনের ফিরে আসার জন্য। ঘরে যাওয়া আর ফিরে আসার মধ্যে যে কী পার্থক্য পত্নী বিয়োগের পর রহমান সাহেব তা বুঝতে পারছেন। আরেকটু রাত হলে তাঁকেও ঘরে যেতে হবে প্রতিদিনের মতো।

রহমান সাহেব আকাশের দিকে তাকালেন। আকাশটাকে একটা একটা করে তারা সাজিয়ে দিচ্ছে, দূরে এক ফালি চাঁদ উঠেছে, খণ্ড খণ্ড সাদা মেঘের আড়ালে সেই চাঁদ মাঝে মাঝে ঢেকে যাচ্ছে। সামনে ব্রহ্মপুত্রের স্থির জল। নদীর পাড়ে সারি সারি বেঞ্চ। আশপাশে যত্ন করে লাগানো নানা রকমের বৃক্ষরাজি। পাতাবাহার আর ফুলের গাছ দিয়ে ছোট ছোট ঝোপ তৈরি করা হয়েছে। মানুষ নিজের মনের দুঃখ-যন্ত্রণা ভুলতে সব সময়ই প্রকৃতির কাছে আসে। প্রকৃতি যেন শান্ত হয়ে মানুষের কথা শোনে। এই প্রকৃতির সান্নিধ্যে তাঁর মন হালকা হয়ে উঠে। তবে প্রকৃতি মানুষের দুঃখ-বেদনার ভাগ নিতে পারে না। তা নিতে পারে শুধু মানুষ। রহমান সাহেব বুকের গভীর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, যা মিশে গেল নদী থেকে ধেয়ে আসা হেমন্ত বাতাসে।

চারদিকে গাঢ় অন্ধকারে পর্দা নেমে আসছে। তিনি উঠতে যাবেন, এমন সময় মনে হলো কেউ যেন পাশে এসে বসল, পরিচিতজনের সঙ্গে যেমন ঘনিষ্ঠ হয়ে বসা যায় তেমনি—তিনি কিছু বলার আগেই মেয়েটি কথা বলে উঠল। আংকেল আজ এত তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছেন যে! রহমান সাহেব আগেও মেয়েটিকে দেখেছেন। প্রায়ই সন্ধ্যায় পার্কের মধ্য দিয়ে হেঁটে যায়। কাঁধে ঝোলানো থাকে র‍্যাকসিনের একটা কম্পিউটার ব্যাগ। মাঝে মাঝে কলেজের ইউনিফর্মটা গায়ে থাকে। বোঝা যায়, স্থানীয় সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রী। মেয়েটির গায়ে পরে কথা বলাটা রহমান সাহেবর মোটেও ভালো লাগল না।

মেয়েটা গলার স্বর নিচু করে বলল, ‘আংকেল আমাকে কয়েকটা ছেলে ফলো করছে তাই আপনার কাছে বসেছি। আমি আপনার সঙ্গে পার্কের গেট পর্যন্ত যাব, সেখান থেকে রিকশা নেব। আপনি একটু হেল্প করেন, প্লিজ।’

রহমান সাহেবের আরও কিছুক্ষণ পার্কের ঝিরঝিরে হাওয়ায় বসে থাকতে ইচ্ছা করছিল। কিন্তু মেয়েটিকে এগিয়ে দিতে তাঁকে উঠতে হলো।

—‘চলো তোমাকে এগিয়ে দিই’। হাঁটতে হাঁটতে মেয়েটা রহমান সাহেবের সঙ্গে কথা বলল।

—এই সন্ধ্যায় তুমি কোথা থেকে আসছ?

—এখন স্কুলে তো কম্পিউটার বিজ্ঞান সাবজেক্ট হয়েছে, আমি বাসায় গিয়ে বাচ্চাদের কম্পিউটার শেখাই—মানে প্রাইভেট টিউশনি করি। আজ ফিরতে একটু দেরি হলো কারণ যে বাচ্চাটাকে পড়াই তার আজ জন্মদিন ছিল। ওদের বাসায় একটা ছোট পার্টি ছিল। সন্ধ্যায় পার্কের মধ্য দিয়ে আসতে চাইনি, তবুও সময় বাঁচাতে এই পথেই আসছিলাম আর কয়েকটা ছেলে পেছন পেছন আজে বাজে কথা বলতে বলতে আসছিল। ভয় পেয়ে গেলাম, তাই আপনার হেল্প নিলাম।

—নাম কী তোমার? কোথায় থাকো?

—শিলা, আপনার বাড়ির কাছেই, ক্যান্টনমেন্ট পার হয়ে শেষ মোড় থেকে যে মাটির রাস্তাটা শুরু হয়েছে, সেই রাস্তা দিয়ে কিছুটা গেলেই আমাদের বাসা।

রহমান সাহেব জায়গাটা চিনতে পারলেন। ওই এলাকায় মূলত দিনমজুর ও রিকশা চালকদের বাসা। অনেক সময় বাসায় কাজের জন্য রাজমিস্ত্রির প্রয়োজনে তিনি সেখানে গেছেন মিস্ত্রির খোঁজে।

—তুমি কি আমার বাসা চেনো?

—চিনব না কেন—আমরা তো অনেকটা এক পাড়াতেই থাকি। আপনাকে তো সব সময়ই দেখি।

গল্প করতে করতে পার্কের গেটের কাছে চলে এল। রহমান সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাকে রিকশা করে দেব?’

—না, এখান থেকে বাসা বেশি দূরে না, হেঁটেই যাব।

—চল তাহলে হেঁটে গল্প করতে করতে যাই—আমি আসলে বাসা থেকে পার্কে হেঁটেই আসি।

—তুমি যেহেতু কম্পিউটার শেখাও তাহলে নিশ্চয়ই টাইপও করতে পারো। আমি আমার একটা আত্মজীবনী লিখছি। ভাবছিলাম সেটা আমাদের পাড়ার মোড়ে যে কম্পিউটারের দোকান থেকে টাইপ করাব। সরাসরি বলি, তুমি কি আমার কাজটা করবে?

—কী বলেন, করব না কেন, নিশ্চয়ই করব।

—তবে তোমাকে কিন্তু টাকা নিতে হবে।

—সে দেখা যাবে।

—সে দেখা যাবে না—টাকা না নিলে করাব না।

—আচ্ছা টাকা দিয়েন।

তাঁরা গল্প করতে করতে রহমান সাহেবের বাসার সামনে পৌঁছাল। রহমান সাহেব দেখালেন—এটাই আমার বাসা। তিনি দোতলায় থাকেন, নিচতলা ভাড়া দেওয়া। কয়েকটা কলেজের কয়েকটা ছেলে মেস করে থাকে।

বাসার সামনে এসে রহমান সাহেব বললেন—আজ তো রাত হয়ে গেছে, কাল সকালে যদি আসো তবে লেখাগুলো বুঝিয়ে দেব।

—ঠিক আছে কাল বেলা ১১টার দিকে চলে আসব।

রহমান সাহেব একজন ছিমছাম, ফিটফাট মানুষ। দামি পোশাক পরেন। হাতে ছড়িসহ শ্মশ্রুমণ্ডিত মানুষটির চলাফেরায় আভিজাত্যের ছাপ স্পষ্ট। বিপত্নীক। তিন বছর আগে স্ত্রী ক্যানসারে মারা গেছেন। দুই সন্তান। বড় ছেলে আমেরিকায় আর মেয়ে থাকে অস্ট্রেলিয়ায়, পুত্র-কন্যা নিয়ে তাঁর সুখের সংসার। রহমান সাহেব অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা দুই দেশেই বেড়িয়ে এসেছেন। তাঁর শখ ছিল অলিম্পিক দেখবেন, মেয়ে খুব দাম দিয়ে টিকিট কেটে জিমন্যাস্টিকস দেখিয়েছে। ছেলে আমেরিকার সোনার হরিণ গ্রিন কার্ডের আবেদন করে তাঁকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল। আমেরিকায় ছয় মাস থেকে দেশের জন্য তাঁর মন উতলা হয়ে উঠল। তিনি চলে এলেন। গ্রিন কার্ড নিয়ে এক বছরের বেশি আমেরিকার বাইরে থাকলে তা বাতিল হয়ে যায়। এক বছর শেষ হওয়ার আগে ছেলে বারবার বললেও তিনি আর যেতে রাজি হলেন না। এই নিয়ে ছেলে অনেক দিন মন খারাপ করে ছিল। তিনি ছেলেকে বোঝালেন, দেশ যদি আমার কাছে ভালো লাগে তবে গ্রিন কার্ড দিয়ে কী করব? চাকরি করার সময়ই চাকরির ফান্ড আর গৃহনির্মাণ ঋণ নিয়ে বাসাটি বানিয়েছিলেন। এখন সকাল বেলা তিনি বাসার ঝুল বারান্দায় বসে লেখালেখিতে করে কাটান। নিজের আত্মকাহিনি ছাড়াও তিনি আমেরিকা আর অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ নিয়ে দুটি বই লিখছেন। রহমান সাহেবের গ্রামের একটা ছেলে তাঁর কাছে থেকে স্কুলে পড়ে। আসলে ছেলেটি তাঁর দূর সম্পর্কের আত্মীয়। আরেকজন বুয়া আছে, রান্না করে। শিলা প্রায়ই সকালে এসে লেখা বুঝে নেয় আবার আগের লেখার প্রুফ দেখা হলে নতুন করে টাইপ করে দেয়। ছেলে আমেরিকা থেকে প্রায় প্রতিদিন ফোনে বাবার খোঁজ-খবর নেয়।

রহমান সাহেব শিলার সম্পর্কেও ছেলেকে বলেছেন। ছেলে শুনে একদিন বলেই ফেলল, ‘আব্বা এই সব মেয়েদের এত প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। এরা সুযোগ পেলেই আনডিউ অ্যাডভান্টেজ নেবে।’

রহমান সাহেব রাগ করে টেলিফোন রেখে দিলেন। শুধু রাগ করেননি ছেলের এমন ব্যবহার তাঁর আত্মসম্মানে লেগেছে। সেদিন শিলা এসে দেখল রহমান সাহেবের মন খারাপ। শিলা জানতে চাইলে রহমান সাহেব বললেন, ‘জানো আমার ছেলেটা খুবই ট্যালেন্ট ছিল, বোর্ডের সব পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেছে। তবে আমি ওকে ভালো মানুষ করতে পারিনি। সে খুবই উচ্চাকাঙ্ক্ষী। দেশে ভালো চাকরি ছেড়ে আমেরিকায় চলে গেল। দেশে থাকতেই লেখালেখি করত। আমেরিকা থেকেও দেশের পত্রিকায় নিয়মিত লেখে। ভালো কবিতা লেখে, কয়েকটি বইও বেড়িয়েছে। আমি নিশ্চিত দেশে ও অনেক ভালো করত। কিন্তু ওর ধারণা, দেশে ও কিছু করতে পারত না। সব ছেড়ে এখন ছুটছে শুধু ডলারের পেছনে।’

পর দিন খুব সকালে রহমান সাহেবের বাসায় যে ছেলেটা থাকে সে শিলাদের বাসায় গিয়ে বলল—‘চাচা খুব অসুস্থ, জ্বর আসছে, রাতে বমি হইছে।’

শিলা ছেলেটার সঙ্গেই রহমান সাহেবের বাসায় গেল। ছেলেটা বলল, কাল রাতে আমেরিকা থাইকা ভাইজান ফোন করলে চাচা খুব রাগারাগি করছেন।

শিলা গিয়ে দেখল, রহমান সাহেব বিছানায় শুয়ে আছেন, অনেকটা যেন অচেতন। অ্যাম্বুলেন্স ডাকলে দেরি হবে এই ভেবে শিলা ছেলেটাকে বলল, ‘একটা অটো নিয়ে আয়, হাসপাতালে যেতে হবে। এরপর দুজন মিলে রহমান সাহেবকে মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেল। ডিউটি ডাক্তার অনেকক্ষণ চেক করে বললেন, ওনার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। আমরা ভর্তি করে নিচ্ছি। অনেকগুলো ইনজেকশন লাগবে, বাইরে থেকে কিনতে হবে।

ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন কে হয়? শিলা বলল, প্রতিবেশী। শিলা হাসপাতালের সামনে ওষুধের দোকান থেকে ইনজেকশনসহ ওষুধ কিনল। হাতে নগদ টাকা ছিল না তাই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করল। আংকেলের আত্মীয়স্বজন এখানে কেউ আছে কিনা, যাকে খবর দেওয়া যায় শিলা তা জানে না। শিলা চিন্তা করল, এখন আংকেলের ছেলেকে ফোন করে জানাতে হবে। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় শিলা রহমান সাহেবের সেল ফোনটা নিয়ে এসেছিল। সেটা খুলে সেভ নম্বরগুলোর প্রথমেই যে নম্বরটি পেল, আংকেলের মুখে অনেক শোনা—হৃদয়। নম্বরটি দেখেই বোঝা যায় বিদেশি। শিলা ভাবল, আংকেলের ফোন থেকে করা ঠিক হবে না। তবে সন্দেহ ছিল অপরিচিত নম্বর দেখে আংকেলের ছেলে ফোনটা না-ও ধরতে পারেন, আর হলো-ও তাই। অনেকবার রিং হলো কিন্তু হৃদয় রহমান ফোন ধরলেন না। এবার শিলা আংকেলের ফোন থেকে করলে সঙ্গে সঙ্গে অপর প্রান্তে ফোন ধরেই, ‘বাবা—এত সকালে, তুমি ঠিক আছ তো?’

শিলা একটু নার্ভাস গলায় যতটা সম্ভব সব গুছিয়ে বলল, ‘না, আমি শিলা, হঠাৎ আংকেলের শরীর খুব খারাপ করেছে। আমি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ডাক্তার বলেছেন তাঁর হার্ট অ্যাটাক করেছে।’

হৃদয় কিছুক্ষণ বাকরুদ্ধ থেকে বলল, ‘প্লিজ স্টে উইথ মাই ড্যাড, আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আসতে চেষ্টা করব। তবুও দুই-তিন দিন লেগেই যাবে। ওনাকে কোনো একটা ভালো ক্লিনিকে নিলে ভালো হতো।’

শিলা জড়তা কাটিয়ে বলল, ‘আগে অবস্থা আরও স্থিতিশীল হোক, তারপর নেওয়া যাবে।’

হৃদয় বললেন, ‘আমি বাবার কাছে তোমার কথা শুনেছি, তুমি তোমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরটা টেক্সট করে পাঠাও। আমি আজই সেখানে টাকা পাঠাচ্ছি, তুমি সেখান থেকে খরচ করো।’

শিলা বলল, এখন টাকা পাঠানোর দরকার নেই, আমার কাছ থেকেই খরচ করি, আপনি বরং তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করেন।

পরদিন খুব ভোরে ম্যাসেজ এল, হৃদয় কাল রাত তিনটায় ঢাকা পৌঁছাবে, সকালে ময়মনসিংহ। শিলা সোজা হয়ে বসল। কাল আসছে আংকেলের ছেলে। এই কয়েক দিন তার ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। অনেক ক্রিটিক্যাল সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। টিউশনিতেও যেতে পারেনি। ওর হাতে সব দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত হবে শিলা। শিলা ওর ছবি দেখেছে। আংকেলের কাছ থেকে নিয়ে তাঁর গল্প আর কবিতার বই পড়েছে। কবিতাগুলো দারুণ। রোমান্টিক কবিতাগুলো শিলার খুব ভালো লেগেছে।

তিন দিনে আংকেলের অবস্থা অনেক ভালো হয়েছে। তাঁকে ভালো একটা কেবিনে দেওয়া হয়েছে। ডাক্তার বললেন, বড় ধরনের বিপদ থেকে এ যাত্রায় রক্ষা পেয়েছেন। দুই-এক দিনেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

এরপর তিন সপ্তাহ কেটে গেছে। আংকেল সুস্থ হয়ে বাড়িতে এসেছেন। শিলা মাঝে মাঝে আংকেলকে দেখে আসে। হৃদয় এক কথায় সুদর্শন। অকৃতদার। ফিট শরীর, দেখলে বোঝাই যায় না তাঁর বয়স প্রায় ৪০। হৃদয়ের সঙ্গেও তাঁর টুকটাক কথা হয়। এক সুযোগে তাঁর কবিতার প্রশংসা করল। সেদিন বাসার বেল টিপতে হৃদয় নিজেই দরজা খুলে ভেতরে আসতে বলল। এই কয়েক সপ্তাহে হৃদয়ের সঙ্গে ওর সম্পর্কটা স্বাভাবিক হয়েছে। হৃদয় ভণিতা না করেই বললেন—‘আমি কাল চলে যাচ্ছি। এখানকার পর্ব চুকিয়ে বাবাকে আমার সঙ্গে যেতে বললাম। বাবা রাজি হলেন না। ভবিষ্যতে হয়তো আমাকেই চলে আসতে হবে। আমি তোমার সম্পর্কে ভুল ভেবেছিলাম। সে জন্য আমি দুঃখিত। তোমাকে একটা চেক দিচ্ছি, তোমার যা খরচ হয়েছে তা বসিয়ে নিয়ো। তুমি একজন লড়াকু মেয়ে, যদি তুমি এমন একটা অ্যামাউন্ট বসাও যা দিয়ে একটা কম্পিউটার শেখানোর স্কুল দেওয়া যায় তবে খুব খুশি হব। তার চেয়েও খুশি হব আমি ফোন করলে যদি তুমি আমার ফোন ধরো। এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি বলতে পারছি না।’

শিলা কাঁপা কাঁপা হাতে চেকটা নিয়ে অস্ফুটে বলল, ধরব। আর মনে মনে বলল, কবি তোমাকে আমার খুব ভালো লেগেছে...