লাল শাড়ি
লাল শাড়িতে জড়িয়ে ওই মনোরম দেহবল্লরী,
আজও সাজে নবীনা তরুণীবধূ বাংলার নারী।
লাল শাড়ি, চিরকালের সেই সুতি লাল শাড়ি,
যার রঙের চটকে ঋদ্ধ হৃদয় নয়ন মুগ্ধ করি।
ফেলে আসা কত শত সুখময় আচার–অনুষ্ঠানে,
মালতীও পরেছে সেদিন লাল শাড়ি অতি যতনে।
তবে, কেন আজ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এই আলমারিতে—
একটি সুতি লাল শাড়ি আবারও এ দেহে জড়াতে।
বৈশাখে চলেছে আজ দারুণ উৎসবের ঘটা আয়োজন,
গগনতলে বইছে হাওয়া চনমন, হবে যে নতুন বর্ষ বরণ!
এল বৈশাখ, এল যে লয়ে, রাঙা আবিরের ডালা,
চারদিকে সাজ, উৎসব আর বৈশাখী মেলা।
ভাবছে মালতী মেঘে মেঘে হয়ে গেল যে অনেক বেলা,
হারিয়ে গেল আরও একটি বছর, উঁকি দিল বুঝি পড়ন্তবেলা।
পান্তা-ইলিশ আর দই-মিষ্টির মধুর আমন্ত্রণে,
ভরে ওঠে মন এক অপূর্ব আনন্দ শিহরণে!
মুখর হলো বাতাস আজ খিলখিল হাসি আর কলকাকলিতে,
পরবে ওরা লাল শাড়ি, জড়াবে কুসুমমালা ওই কবরীতে।
শুনতে পেয়ে মিষ্টি হেসে বলল মেয়েটি কাছে এসে,
তোমরা যে একেবারেই তরুণী, জীবনকে ভালোবেসে।
নাড়া দিয়ে গেল সেই কথাটি সুপ্ত মনের বাসনার একটি কোণে,
কিন্তু দাঁড়িয়ে সে তো আজ জীবনের ঢলে পড়া গোধূলি লগনে।
তবু হারিয়ে যেতে কেন চায় মন, আবার সেই সে রঙিন দিনে—
নববধূর মতো লাল শাড়িতে জড়াতে চায় এ অঙ্গ কেন অকারণে?
ভাবতে গিয়ে অনুরাগের আবিরে রাঙা হলো মালতীর মন,
প্রথম প্রেমের মধুর স্মৃতিগুলো দোলা দিয়ে গেল অনুক্ষণ।
ভাবনার ঢেউ সেদিনের সেই আবেশের চঞ্চলতায়,
মনের দুয়ারে আছড়ে পড়ে ফিরে পাবার আশায়।
নিশিতে নিভৃতে স্বামীর পাশে শুয়ে,
নিবিড় বাহুডোরে বুকেতে তারে জড়িয়ে
ষোড়শী বধূর মতো সোহাগে বলল কানে কানে,
ওগো, আমায় একটা লাল শাড়ি দেবে কিনে?