আত্মহত্যা হতাশার চূড়ান্ত প্রকাশ হিসেবে স্বীকৃত। যদিও মৃত্যুর সিদ্ধান্ত নেওয়া ব্যক্তিটি কিছুটা হলেও হয়তো শান্তির অনুভূতি পেতে পারে, তবুও পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের জন্য তা খুবই বেদনার এবং সর্বনাশের।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর এক মিলিয়নেরও বেশি সফল আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষ আত্মহত্যা করে।
হাস্যকর বিষয় হলো আত্মধ্বংসের এই মরিয়া কাজগুলো করতে আত্মহত্যাকারীরা প্রায়ই সুন্দর স্থান বেছে নেয়। ব্রিজ, পাহাড়ি ক্লিফ ও ঝরনা আত্মহত্যার স্থানের মধ্যে অন্যতম।
আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোর গোল্ডেন গেট ব্রিজ এ পর্যন্ত আত্মহত্যার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান। ১৯৩৭ সালে নির্মাণের পর এ পর্যন্ত দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে এই ব্রিজ থেকে লাফ দিয়ে। অন্যান্য সুইসাইড ব্রিজের মধ্যে রয়েছে চীনের নানজিং ইয়াংজে রিভার ব্রিজ, অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্ট গেট ব্রিজ, আমেরিকার সানশাইন স্কাইওয়ে ব্রিজ, ইংল্যান্ডের হামবার ব্রিজ, আমেরিকার করোনেডো ব্রিজ উল্লেখ্য।
তবে লন্ডন শহরের প্রাণকেন্দ্রে ছোট্ট সুন্দর একটি সুইসাইড ব্রিজ রয়েছে, যা দিয়ে আমি নিজে প্রায়ই যাতায়াত করি এবং শেষমেশ ২০১৯ সালেও এই ব্রিজ থেকে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। ব্রিজটি হচ্ছে উত্তর লন্ডনের আর্চওয়ে ব্রিজ, যেটি হর্নসি লেনের ওপর অবস্থিত।
ব্রিজটি ১৮৯৭ সালে নির্মিত হয়েছিল, যার নিচ দিয়ে ব্যস্ত সড়ক আর্চওয়ে চলে গিয়েছে। নির্মিত হওয়ার পর থেকে এটি স্থানীয়ভাবে ‘সুইসাইড ব্রিজ’ নামে পরিচিতি লাভ করে। কার্যত, প্রতিবছরই সেখানে একটি বা দুটি আত্মহত্যা বা আত্মহত্যার চেষ্টা করা হতো। প্রায় সময়ই পুলিশ ও ফায়ার ব্রিগেড আসত খবর পেয়ে। ব্রিজের রেলিংয়ে চড়া অনেককেই পুলিশ উদ্ধার করত আবার দুর্ভাগা অনেকেই পুলিশ আসার আগেই লাফ দিয়ে দিত। আর্চওয়ে ব্রিজের মূল সমস্যাটি ছিল আত্মহত্যাচেষ্টা করা একজন ব্যক্তি অন্যের জীবনকেও বিপদে ফেলে দিত। ব্রিজের রেলিং থেকে নিচের আর্চওয়ে পর্যন্ত প্রায় ৪০ ফুটের একটি ড্রপ।
বেশির ভাগ মানুষ ব্রিজ থেকে লাফ দিয়ে গিয়ে পড়ত আর্চওয়ের চলন্ত সব গাড়ির ওপর। কেউ কারের সামনে, কেউবা বাসের সামনে পড়ে নিজের সঙ্গে সঙ্গে সেসব গাড়ির চালক ও যাত্রীদের আহত বা নিহত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াত। গাড়িচালকদের ইমার্জেন্সি ব্রেক করতে গিয়ে অনেক দুর্ঘটনাও ঘটেছে।
শুরু থেকেই স্থানীয় অধিবাসীরা এই ব্রিজের ব্যাপারে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল। বছরের পর বছর ধরে জনসংযোগ, ক্যাম্পেইন, লেখালেখি করতে করতে অবশেষে ২০১৯ সালে এসে অথোরিটির টনক নড়ে। ব্রিজের দুপাশে উঁচু বেড়া দিয়ে রেলিংকে ঢেকে দেওয়া হয়। সেই বেড়া টপকে এখন আর কারও লাফ দিয়ে আত্মহত্যার সুযোগ নেই; যদিও অভিযোগ উঠেছে অতিরিক্ত বেড়া ব্রিজের সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দিয়েছে।
এই বেড়া বদলিয়ে আকর্ষণীয় বেড়া দিয়ে ব্রিজের সৌন্দর্য পুনরুদ্ধারের জন্য আবারও লেখালেখি ও ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় জনগণ। আত্মহত্যা হয়তো বন্ধ হয়েছে, কিন্তু ব্রিজের নামের সঙ্গে ‘সুইসাইড’ শব্দটি জড়িয়ে থাকবে সব সময়। ব্রিজটি দেখতে পর্যটকেরা এখনো ভিড় জমান।