সাম্রাজ্যবাদ ও মৌলবাদবিরোধী গণসাংস্কৃতিক আন্দোলনে সোচ্চার উদীচী
লন্ডনে উদীচীর অনুষ্ঠানে কামাল লোহানী
উদীচী মানুষের কথা বলে। মানুষকে মানুষ হতে বলে ও মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলে। তাই বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী সাম্রাজ্যবাদ ও মৌলবাদবিরোধী গণসাংস্কৃতিক আন্দোলনে শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্বব্যাপী সোচ্চার। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, যুক্তরাজ্য সংসদ আয়োজিত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উদীচীর কেন্দ্রীয় সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক কামাল লোহানী এ কথা বলেন।
১৮ অক্টোবর পূর্ব লন্ডনের সেন্ট হালডাজ সেন্টারে অনুষ্ঠিত উদীচীর ৪৭তম ও যুক্তরাজ্য উদীচীর ২৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিক উদ্যাপন অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় যুক্তরাজ্য সংসদের সভাপতি হারুন-অর-রশিদ সভাপতিত্ব করেন। সভায় কামাল লোহানী আরও বলেন, গণসাংস্কৃতিক আন্দোলনের মহান পুরোধা ব্যক্তিত্ব শিল্পী সংগ্রামী সত্যেন সেন ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসন ও শোষণ-বঞ্চনাকে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে বাঙালিকে জাগ্রত করার লক্ষ্যে প্রগতিশীল লেখক ও সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে উদীচী প্রতিষ্ঠা করেন। উদীচী জন্মলগ্ন থেকে উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশে সাম্রাজ্যবাদ ও মৌলবাদ বিরোধী প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিদেশে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ফ্রান্সে প্রায় সাড়ে তিন শ শাখা সক্রিয় রয়েছে। তিনি বলেন, উদীচী শোষণমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক সাম্যবাদী সমাজ কায়েম সর্বোপরি সর্বক্ষেত্রে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই করছে। এই আদর্শ লালন ও প্রসারে উদীচীর প্রতিটি কর্মী একেকজন যোদ্ধা। তিনি বলেন, উদীচীর কর্মীরা মহান মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে, এখনো মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। যিনি এই আদর্শ লালন করেন না তিনি উদীচীর কর্মী হতে পারেন না। তিনি বলেন, কেউ কেউ উদীচীকে ব্যবহার করে ফায়দা হাসিল করতে চায়। উদীচী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়। উদীচী একটি আদর্শের নাম, গণমুক্তির সংগঠন। তিনি আগামী এক বছরের গণসাংস্কৃতিক বিকাশে উদীচীর কর্মসূচি তুলে ধরে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু। কিন্তু স্বাধীনতা লাভের পরও তা বাস্তবায়ন হয়নি। সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালুর দাবিতে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে উদীচীর উদ্যোগে সমগ্র বাংলাদেশে পদযাত্রা আয়োজনসহ নানা কর্মসূচির বর্ণনা দেন তিনি।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের কণ্ঠসৈনিক কামাল লোহানী। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের বার্তার লেখক তিনি। তার কণ্ঠেই স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে বিশ্বে বিজয়ের সংবাদ প্রচারিত হয়েছিল। এই অকুতোভয় কণ্ঠসৈনিক আজীবন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক যোদ্ধার স্বীকৃতি হিসেবে একুশে পদকে ভূষিত হন তিনি।
আজন্ম আদর্শবাদী ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী লন্ডনে আসার সংবাদে প্রবাসী সংস্কৃতিকর্মী ও লেখক শ্রোতার মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি এবং উদ্যাপন অনুষ্ঠানে ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
উদ্যাপন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন ডা. রফিকুল হাসান খান, ডা. আহমেদ জামান, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পিকার আবদুল মুকিত এমবিই, সাবেক মেয়র গোলাম মুর্তজা, গণসংগীত শিল্পী লুসি রহমান, জেসিডব্লিউর পরিচালক হাবিব রহমান, উদীচীর উপদেষ্টা হামিদ মোহাম্মদ, সৈয়দ রকিব আহমেদ, সৈয়দ এনামুল ইসলাম ও উদীচীর সদস্য সেলিনা শফি। সংস্কৃতিকর্মী আমিনা আলীর উপস্থাপনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদীচী যুক্তরাজ্য সংসদের সম্পাদক নুরুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন কবি শামীম আজাদ, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ডেপুটি স্পিকার রাজীব আহমেদ, ডেপুটি মেয়র সিরাজুল ইসলাম, মন্টিফিউরি সেন্টারের পরিচালক আজিজ চৌধুরী, সাবেক কাউন্সিলর মতিনুজ্জামান, ডা. বিবি চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল কামাল, লোকমান আহমেদ, আমান উদ্দিন, সংহতি সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি ইকবাল হোসেনসহ বিশিষ্টজন।
পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে উদীচী ও সত্যেন সেন স্কুল অব পারফর্মিং আটর্সের শিক্ষার্থীরা গণসংগীত, দেশাত্মবোধক গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন। আবৃত্তি করেন আবৃত্তিশিল্পী সালাউদ্দিন শাহীন, মুনিরা পারভীন ও শিশু আবৃত্তিকার নাহিয়ান কাদরী। বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন সাহাব আহমেদ ও আমিনা আলী।