লন্ডনে আনন্দধারা আর্টসের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন
আনন্দধারা আর্টস ইউকের আয়োজনে গত ২০ ফেব্রুয়ারি পালিত হয়েছে মহান একুশে। বরাবরের মতো আনন্দধারা আর্টসের সুন্দর এ আয়োজনে ভিন্ন ধারার পরিবেশনায় দর্শক শ্রোতারা মুগ্ধ হয়েছেন। আনন্দধারা আর্টসের ছোটদের দলটির ‘মোদের গরব মোদের আশা’ গানটির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। তারপরই আনন্দধারা আর্টসের কর্ণধার ইমতিয়াজ আহমেদ ছোট একটি প্রাক্–আলোচনা করেন শিশুদের পরিবেশনা নিয়ে।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ভাষা কেবল মুখের ভাষায় বাঁচে না, ভাষা সাহিত্য, সংগীতের মধ্য দিয়েও কালাতিক্রম করে। আর তাই তিনি একুশের আয়োজনে ছোটদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বেছে নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান। বাংলায় ছোট ছোট পাঠ এবং রবীন্দ্রনাথের গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে ছোটরা তাদের মায়ের ভাষার প্রতি এবং একুশের শহীদদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। ছোটদের মুগ্ধ করা পরিবেশনা শেষে মঞ্চে এসেছে বড়দের দল। তার আগে আবার অল্প কথায় বড়দের পরিবেশনা নিয়ে বলেন ইমতিয়াজ আহমেদ।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এবারের এ আয়োজনে তাঁর চেষ্টা ছিল সাধারণত যে গণসংগীতগুলো আমরা গেয়ে থাকি। এ আয়োজনে তার সঙ্গে এমন কিছু গান পরিবেশন করতে, যেগুলো চর্চার অভাবে বাংলাদেশেও হারিয়ে যেতে বসেছে। তেমনি কিছু গান তিনি বেছে নিয়েছেন সন্দীপন সংগঠনটির গান থেকে। তিনি বলেন, নাজিম মাহমুদের কথায়, সাধন সরকারের সুরে এ গানগুলো একসময় বাংলাদেশের আনাচকানাচে গাওয়া হয়েছে। এ গানগুলো প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, দাবি আদায়ের নানা লড়াইয়ে আমাদের উদ্দীপিত করেছে, শক্তি জুগিয়েছে। কিন্তু চর্চার অভাবে সেসব গান এখন প্রায় হারিয়ে গিয়েছে। একুশের শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজনে তাই তিনি সন্দীপনের সেই সব গানের বেশ কয়েকটি গান তুলে দিয়েছেন আনন্দধারা আর্টসের সদস্যদের। লন্ডনের মাটিতে এই প্রথমবারের মতো সন্দীপনের এ গানগুলো পরিবেশনা মাতৃভাষা দিবসে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। নতুন শ্রোতাদের সন্দীপনের এ গানগুলো যেমন মুগ্ধ করেছে, তেমনি পুরোনো শ্রোতারা এ গানগুলোর ভেতর দিয়ে ফিরে গেছেন উত্তাল দিনে রাজপথের সঙ্গী হওয়া গানের স্মৃতিতে। বড়দের অনবদ্য পরিবেশনাটির সঙ্গে কবিতা ও পাঠের সমন্বয়ে সুন্দর গ্রন্থনা করেছেন আবৃত্তিশিল্পী সমর সাহা এবং কবিতা পাঠ করেছেন ইয়াসমিন মাহমুদ পলিন, সিন্থিয়া দাস, সুনিতা চৌধুরী ও সমর সাহা। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আনন্দধারা আর্টসের এই পরিবেশনা নিঃসন্দেহে ভিন্নমাত্রা যুক্ত করেছে।
আয়োজন শেষে আনন্দধারা আর্টসের কর্ণধার ইমতিয়াজ আহমেদ ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আনন্দধারা আর্টস চেষ্টা করে চলেছে বিদেশের মাটিতে মাতৃভাষা, সংস্কৃতির চর্চার এবং নতুন প্রজন্মের সঙ্গে আমাদের দেশীয় ভাষা সংস্কৃতির যোগসূত্র নির্মাণ করতে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষাসহ পৃথিবীর সব মানুষের ভাষা তাদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে বাঁচুক—এমন শুভকামনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই চমৎকার আয়োজন। এ আয়োজনের পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিলেন ইমতিয়াজ আহমেদ। চমৎকার সংগীত আয়োজনে তবলায় ছিলেন পিয়াস বড়ুয়া, গিটারে তানজিল তাহমিদ ও মিলন বিশ্বাস, অক্টোপ্যাড বাজিয়েছেন ফয়সাল এবং কিবোর্ডে ছিলেন হাসান। অতিমারি পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসা এই সময়ে এমন একটি আয়োজন আমাদের নতুন আশায় উজ্জীবিত করেছে।