লকডাউন নয়, তৈরি হোক সচেতনতা

প্রথম আলো ফাইল ছবি

লকডাউন নিয়ে ইউরোপের সঙ্গে আমাদের দেশের রয়েছে ব্যাপক পার্থক্য। টানা ছয় মাস ধরে এখন পর্যন্ত জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লকডাউন চলছে। কিন্তু নিয়মকানুন ও প্রয়োগের ক্ষেত্র আমাদের দেশের সঙ্গে ইউরোপের রয়েছে ব্যাপক পার্থক্য। জার্মানিতে লকডাউনে প্রায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা। যেমন ধরুন রেস্তোরাঁ খোলা, রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়া যাবে না, পার্সেল করে খাবার নিয়ে খেতে হবে বাসায় গিয়ে বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে।

মার্কেট খোলা, এর মানে হলো ধরুন আপনি কিছু কিনবেন আপনাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে শপিংয়ে ঢুকতে হবে। লকডাউন মানে সবকিছু বন্ধ নয়, দেড় থেকে দুই মিটার দূরত্ব বজায় রেখে সব কাজ করা। প্রায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় অনলাইনে ক্লাস হলেও হলরুমে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এখানে লকডাউনে মানুষে জীবন–জীবিকার কথা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বিকল্প চিন্তা করা হচ্ছে। সরকারি সব প্রতিষ্ঠান খোলা। কিন্তু সেবা নেওয়ার আগে সবাইকে মেইলে বা ফোন করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে সেবা নিতে হচ্ছে। সবকিছুতে সেবা দেওয়া ও নেওয়ার ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে। কাছের বা দূরপাল্লার সব বাস-ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক। সামাজিক দূরত্ব বাজায় রেখে মানুষ বাস বা ট্রেনের সিট গ্রহণ করেন। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীসংখ্যা কমিয়ে এনেছে। কিন্তু যাঁরা করোনার কারণ চাকরি হারিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের ৬০ শতাংশ করে বেতন দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ নাগরিক ও শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা সুদে লোনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে যেন জার্মানি এক মানবিক ও জনকল্যাণের দেশ।

তবে সরকারে পক্ষ থেকে জনসমাগমের ব্যাপারে রয়েছে ব্যাপক বিধিনিষেধ। যেমন ধরুন পার্টি করা যাবে না। কেউ করলে গুনতে হচ্ছে জরিমানা এবং মাস্ক ছাড়া কোথাও প্রবেশের অনুমতি নেই। রাস্তায় মাস্ক ছাড়া পুলিশ কাউকে পেলে সঙ্গে সঙ্গে ৫০ ইউরো জরিমানা করা হচ্ছে।

জনকল্যাণে সবাইকে নিরাপদ রাখতে আমাদের দেশে লকডাউন পক্ষে আমারও মত রয়েছে। কিন্তু একেবারে সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে নয়। লকডাউন দিয়ে সবকিছু বন্ধ রাখলে দেশের অর্থনীতি একেবারে ভেঙে পড়বে। আমাদের দেশের অসহায় মানুষ খাবে কী? তাদের পরিবার চলবে কেমনে? মানুষের কথা ভেবে আমাদের দেশেও লকডাউন ইউরোপ-আমেরিকার সঙ্গে মিল রেখে শিথিল করা দরকার এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার, মাস্ক পরার দিকে জোর দেওয়া দরকার। দূতাবাসের মাধ্যমে উন্নত দেশগুলোর নিয়মকানুন, সিস্টেম ও অন্য বিষয়গুলো জানা দরকার এবং সেই সঙ্গে পর্যালোচনা করে ভালো দিকগুলো আমাদের দেশে প্রয়োগ করা দরকার।

আমাদের দেশে লকডাউনের চেয়ে সচেতনতা তৈরি করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যার সঞ্চয় নেই, যে দিনে আনে দিনে খায়, সে–ই বলতে পারবে কর্মহীন হয়ে বসে থাকার নিদারুণ কষ্ট। তাই আমাদের দেশে উচিত হবে লকডাউন নয়, তৈরি করতে হবে সচেতনতা। চালু রাখতে হচ্ছে মানুষের জীবন–জীবিকার পথ।

*লেখক: এম এ হাসান, শিক্ষার্থী, ফিলিপস ইউনিভার্সিটি, জার্মানি