রোহিঙ্গা গণহত্যার ন্যায়বিচারে গাম্বিয়াকে সমর্থনের আহ্বান

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অতিথিরা। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অতিথিরা। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত গণহত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিতের জন্য গাম্বিয়াকে সহায়তা ও সমর্থন দেওয়ার জন্য সব দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানানো হয়েছে।

নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল আবুবকর তামবাদু এবং মিয়ানমার বিষয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত বব রের সম্মানে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানানো হয়।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আবুবকর মারি তামবাদু, বব রে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. শহিদুল হক, ওআইসির পরিচালক ড. হাসান আহমেদ আবেদীন, দেশটিতে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ড. হিসা আবদুল্লাহ আলোতায়েবা, সৌদি দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স নাসের এ আলগানম ও মালয়েশিয়া দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ড. মোহাম্মদ নুরহিসাম ইউসুফ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

গত মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দেশটির বাংলাদেশ দূতাবাস, সৌদি দূতাবাস, সংযুক্ত আরব আমিরাত দূতাবাস ও মালয়েশিয়া দূতাবাস যৌথভাবে এ সংবর্ধনার আয়োজন করে।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন মো. শহিদুল হক। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন মো. শহিদুল হক। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহিদুল হক তাঁর বক্তব্যে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত পরিকল্পিত নিধনযজ্ঞের পরিপ্রেক্ষিতে কীভাবে বাংলাদেশ যুগ যুগ ধরে তার দায় বহন করে চলেছে তার ইতিবৃত্ত তুলে ধরেন।

তিনি ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার ভয়াবহতা তুলে ধরে বাংলাদেশের নানাবিধ সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক নির্দেশনায় নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়ে তাদের আশ্রয় প্রদানের ওপর বিশেষভাবে আলোকপাত করেন।

২০১৮ সালে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে এই নৃশংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের প্রতিও তিনি আলোকপাত করেন।

রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য পররাষ্ট্রসচিব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের ন্যায়বিচার নিশ্চিতের লক্ষ্যে তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনের অধীনে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনের জন্য তিনি গাম্বিয়ার প্রশংসা এবং এর পেছনে সহায়তা প্রদানের জন্য ওআইসিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

আবুবকর তামবাদু তাঁর বক্তব্যে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনীত মামলায় গাম্বিয়াকে সমর্থন ও সহমত পোষণের জন্য তিনি ওআইসির প্রতি গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার এই যুদ্ধ কেবল দুটি দেশের একে অপরের বিরুদ্ধে নয়, এটা মানবতার পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যুদ্ধ।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন আবুবকর তামবাদু। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন আবুবকর তামবাদু। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস

আবুবকর তামবাদু রোহিঙ্গা গণহত্যার ন্যায়বিচারের স্বার্থে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও নৈতিক সমর্থন অব্যাহত রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান।

বব রে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার মামলায় গাম্বিয়াকে সম্ভাব্য সব সহায়তা প্রদানের বিষয়ে ৯ ডিসেম্বর কানাডা ও নেদারল্যান্ডস সরকারের যৌথ বিবৃতির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি সব রাষ্ট্রের সরকারকে গাম্বিয়ার সমর্থনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত, সৌদি ও মালয়েশিয়া দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এবং ওআইসির প্রতিনিধি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও সব রকম সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার মামলায় গাম্বিয়ার প্রতি তাঁদের সমর্থনের নিশ্চয়তা প্রদান করেন।

সংবর্ধনার আয়োজক দেশগুলোর পক্ষে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল অতিথিদের স্বাগত জানান।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন বব রে। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন বব রে। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস

সংবর্ধনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রেসিডেন্ট, রাসায়নিক অস্ত্র নিরোধ সংস্থার (ওপিসিডব্লিউ) মহাপরিচালক, গাম্বিয়ার আইনি সহায়তা দলের সদস্য, ডাচ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধি, দ্য হেগের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, ওআইসি সচিবালয়ের প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন স্তরের অতিথিরা অংশ নেন।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের ১০ ডিসেম্বরের শুনানিতে গাম্বিয়া তাদের মৌখিক অভিযোগ পেশ করে। যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা অর্জন করেছে। বিজ্ঞপ্তি