রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিশ্ব সাংবাদিক ফোরাম ও নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হেনস্তা, মামলা করে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে ও তাঁর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ভার্চ্যুয়াল প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিশ্ব সাংবাদিক ফোরাম ও নাগরিক সমাজ।
গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা লেখক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে প্রবাসী সাংবাদিক বাকি উল্লাহ রিপন ও সুলতানা খানের পরিচালনায় জার্মান বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি খান লিটন এবং পর্তুগালের প্রবাসী সাংবাদিক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় অনলাইনে এ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব ফজলুর রহমান বাবু। তিনি বলেন, রোজিনা ইসলাম অনুসন্ধানীমূলক সংবাদ সংগ্রহের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করে তাঁর সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি নিশ্চিত যে রোজিনা ইসলাম ইতিপূর্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির বিষয়ে বেশ কয়েকটি রিপোর্ট করেছিলেন, যা তাদের ক্ষুব্ধ করতে পারে। তবে আমরা সবাই জানি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বড় দুর্নীতির ঝামেলা রয়েছে, সুতরাং সরকারকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে এবং সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনের জন্য সুযোগ করে দিতে হবে, কারণ সংবাদমাধ্যম সরকারের প্রতিপক্ষ নয়।
উপস্থিত বক্তারা বলেন, সহকর্মী রোজিনা ইসলাম কোনোভাবেই তথ্য অধিকার ক্ষুণ্ন করেননি বরং তাঁকে তাঁর পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তাঁর বাক্স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, এমনকি তাঁকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করা হয়েছে। এভাবে যদি একজন সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হন এবং পরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত লোকের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য আইনের মারপ্যাঁচে অন্যায়ভাবে কারাবরণ করেন, তাহলে সাংবাদিকতা চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়াবে। তার জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাষ্ট্র ও জনগণ।
রোজিনা ইসলাম একজন দেশের স্বনামধন্য সংবাদমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক। তিনি সাংবাদিকতার সীমা–পরিসীমা ভালোমতোই বোঝেন এবং ইতিপূর্বে তিনি এমন কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন জনগণের মাঝে, যা রাষ্ট্র ও জনগণের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। সুতরাং তাঁর প্রতি এ ধরনের আচরণ করে বাংলাদেশের সুষ্ঠু সাংবাদিকতায় পরিবেশ নষ্ট করার পাশাপাশি দুর্নীতিগ্রস্ত অপরাধীদের সাহস বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা কোনোভাবেই আইন বা রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী সাংবাদিক লন্ডন থেকে সারোয়ার আলম, এম এ জামান, মস্কো থেকে সৌরব এলাহী, মালয়েশিয়া থেকে আহমেদুল কবির ও মো, মনিরুজ্জান, তুরস্ক থেকে সারোয়ার জান, জার্মানি থেকে হাবিব বাবুল ও হাবিবুল্লাহ আল বাহার, গ্রিস থেকে প্রদীপ কুমার সরকার ও কানাডা থেকে উজ্জ্বল দাশ, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে অসীম বিকাশ বড়ুয়া, অস্ট্রেলিয়া থেকে নির্ঝর মজুমদার, ফ্রান্স থেকে ফেরদৌস করিম আকঞ্জী, লুৎফর রহমান বাবু ও শাহ সোহেল, ইতালি থেকে আখি, সীমা কাউসার, জমির হোসেন, শাহিন, খালিদ কাউসার, সোহেল মজুমদার শিপন, আলামিন হোসেন, স্পেন থেকে মিরন, নাজমুল ও কবির আল মাহমুদ, অস্ট্রিয়া থেকে হাসান তানিম, সুইজারল্যান্ড থেকে রহমান খলিলুর, কাজী আসাদুজ্জামান ও অরুণসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুণী সাংবাদিকেরা ও প্রবাসী শীর্ষস্থানীয় সামাজিক ব্যক্তিরা।
সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহের স্বাধীনতা এবং ইতিপূর্বে যেসব সাংবাদিক যাদের মাধ্যমে নির্যাতিত হয়েছিলেন, তাদের খুঁজে বের করে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করতে হবে, তাহলেই বাক্স্বাধীনতা ও একটি সুন্দর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।