রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে কানাডায় ভার্চ্যুয়াল সভা
কানাডার ক্যালগেরিতে আলবার্টার প্রথম বাংলা অনলাইন পোর্টাল ‘প্রবাস বাংলা ভয়েস’–এর আয়োজনে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের গ্রেপ্তার এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসৌজন্যমূলক আচরণের ভার্চ্যুয়াল প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধান সম্পাদক আহসান রাজীবের সঞ্চালনায় আলোচনায় প্রধান অতিথি ও মূল বক্তা ছিলেন প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী। স্বাগত বক্তব্য দেন কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মো. মাহমুদ হাসান।
আলোচনায় বক্তারা সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের অসৌজন্যমূলক আচরণের তীব্র নিন্দা জানান। পরে তাঁকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করাকে আরও নিন্দনীয় বলে মনে করেন। পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের এ জঘন্যতম ঘটনাকে গণতন্ত্র, আইনের শাসনের প্রতিকূলতার পাশাপাশি গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার শামিল বলেই মনে করেন। আলোচনায় অংশ নেন ড. মোহাম্মদ বাতেন, মোহাম্মদ কাদির, আবদুল্লা রফিক, রূপক দত্ত এবং কিরণ বণিক শংকর।
প্রবাসী সাংবাদিক এবং নতুনদেশ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী বলেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে দীর্ঘ সময় সচিবালয়ে আটকে রেখে তাঁকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে সচিবালয়ের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা আইনের শাসনের প্রতি চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। তাৎক্ষণিক আইনি পথে না গিয়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের সঙ্গে স্পষ্টত মাস্তানি করেছেন। এ মাস্তানতন্ত্র অবসানের পাশাপাশি তিনি দ্রুত রোজিনা ইসলামের মুক্তি দাবি করেন।
কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মো. মাহমুদ হাসান স্বাগত বক্তব্যে বলেন, প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম অতীতে বহু চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তা ইস্পাত-দৃঢ় মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর অতীত কর্মকাণ্ডে এটি স্পষ্ট প্রতীয়মান, শুধু পেশাগত দায়িত্ববোধ নয়, শেখ হাসিনাঘোষিত ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স’ নীতিতেই তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। তাঁর মতো একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সচিবালয়ের কর্মচারীদের হাতে যেভাবে নিগৃহীত হয়েছেন, অতি দ্রুত এর প্রতিকার না হলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আইনের শাসনের প্রশ্নে দেশের ভাবমূর্তিকে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
ক্যালগেরির এ বি এম কলেজের প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ আবদুল বাতেন বলেন, ‘সাংবাদিকেরা জাতির বিবেক। দুর্নীতি নির্মূল, আইনের শাসনের সহযোগী হিসেবে যাঁরা চরম দুঃসময়েও জাতির পাশে থাকেন, সেই সমাজের একজন সিনিয়র সাংবাদিক যদি সচিবালয়ের মতো স্থানে এভাবে নিগৃহীত হন, তা আমাদের চরমভাবে উদ্বিগ্ন করে।’ জাতির কান্ডারি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি এর দ্রুত প্রতিকার দাবি করেন।
অ্যাসোসিয়েশন অব প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড জিও সায়েন্টিস্ট অব আলবার্টার ক্যালগেরি শাখার কোষাধ্যক্ষ প্রকৌশলী মোহাম্মদ কাদির বলেন, সাংবাদিক রোজিনার ওপর বর্বরোচিত হামলা গণতন্ত্র ও মুক্ত গণমাধ্যমের ওপর চপেটাঘাত। রোজিনা ইসলামের মুক্তি ও নির্যাতনকারী কর্মচারীদের দ্রুত চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আবদুল্লা রফিক বলেন, সরকার মুক্ত স্বাধীন গণমাধ্যমের নীতিতেই বিশ্বাসী। এটিকে প্রমাণ করার জন্য হলেও অনতিবিলম্বে রোজিনা ইসলামের মুক্তি দিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
সিলেট অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সভাপতি রূপক দত্ত বলেন, রোজিনা ইসলাম একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও নারী সমাজের প্রতিনিধি। নিকট অতীতে প্রমাণ আছে, সাংবাদিক সমাজ গর্জে উঠেছিল বলেই চরমপন্থী স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে আজ আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সম্ভব হচ্ছে। সেই সাংবাদিক সমাজকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর ষড়যন্ত্রে পা না দিয়ে দ্রুত এই ন্যক্কারজনক ঘটনার বিচার করে সরকারকে তার স্বচ্ছতার প্রমাণ দিতে হবে।
সাবেক ছাত্রনেতা, বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সাবেক সভাপতি ও ট্রাস্টি বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব কিরণ বণিক শংকর বলেন, সরকারি কর্মকর্তার অফিস থেকে যেকোনো তথ্য সংগ্রহের অধিকার একজন সাংবাদিকদের আছে। কী এমন গোপনীয় তথ্য এই কর্মকর্তার টেবিলে ছিল, যা প্রকাশিত হলে জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে? তাহলে কি জাতির উন্নয়নের পরিবর্তে দুর্নীতির কোনো মহাপরিকল্পনার ফাইল সেখানে রক্ষিত ছিল, যেটি রোজিনা ইসলামের হস্তগত হওয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা তাঁর ওপর হামলে পড়েছেন?
*লেখক: সোহেল সোহরাব, টরন্টো