রানওয়ে গার্ল

বন জোভির রানওয়ে গার্ল ট্র্যাকটা শুনছিলাম৷ আর তখনই চোখের সামনে ভেসে উঠল ১১ বছরের কিশোরী হানার নিষ্পাপ মুখ । নীল চোখ , সোনালি চুল । মা স্কটিশ, বাবা বাঙালি । জীবনের সব প্রাচুর্য পেয়ে এত নিঃস্ব বালিকা আমার দেখায় প্রথম। হানার বাবার মৃত্যুর পর ওর মা ফিওনা সংসার নিয়ে হিমশিম খেতে থাকে। এক ধরনের বিষাদ তাঁকে গ্রাস করে। হানাকে ব্যয়বহুল প্রাইভেট স্কুল থেকে ছাড়িয়ে স্টেট স্কুলে ভর্তি করায় । ফিওনাকেও লম্বা সময়ের জন্য কাজ করতে হয়। মেয়েকে স্কুলে দিয়ে কাজে দৌড়ান, চাইল্ড মাইন্ডার এসে স্কুল ছুটি হলে হানাকে নিয়ে যায়৷ সন্ধ্যা সাতটায় ফিওনা অফিস শেষে মেয়েকে নিয়ে বাসায় ফেরেন। একদিন শুনলাম হানা নিখোঁজ। বাড়ি থেকে পালিয়েছে। তিন দিন পর পুলিশ তাকে খুঁজে পায় ইয়র্কশায়ারের এক রেলস্টেশনে। হোমলেস কিছু লোকজনের সঙ্গে । বাড়ি ফেরে ভালোয় ভালোয়। তারপর কিছু দিন পর পর এটা একটা অভ্যাস হয়ে যায়। কোনো কাউন্সিলিং, বিশেষ পাহারা কিছুই তাকে থামাতে পারে না। কদিন পর পর তার নিখোঁজ সংবাদ শুনি। তারপর তাকে ফস্টার হোমে রাখা হয়, সেখান থেকেও পালায় । ফিওনা মেয়ের চিন্তায় আধা পাগল। একদিন ইস্টহ্যামে তার বাসায় যাই।
কোন ভণিতা না করে বলি তুমি কাজ ছেড়ে দাও অথবা এমন কিছু খোঁজো, যেটা তোমার মেয়ের স্কুল আওয়ারের সঙ্গে মিলে যায়। ওকে সময় দাও।
সম্ভব না। এই বিশাল বাড়ির মর্টগেজ দিতে পারব না। ইনস্যুরেন্স এক বছর কাভার করছে। বলে ফিওনা৷
বাড়ি ভাড়া বা বিক্রি করে দাও ।
আর ইউ কিডিং? একমাস ছুটি নিয়ে দেখেছি, কোনো উন্নতি নেই। ফিওনা বলে৷
একটু ধৈর্য নিয়ে দেখো।
বাড়ি বিক্রি করে কই যাব? কাউন্সিল বাড়ি দেবে না, কারণ ব্যাংকে বাড়ি বিক্রির টাকা থাকবে। তুমি বুঝছ না কি বলছো। ফিওনা আবার বলে৷
হুম, আসলেই কঠিন সমস্যা। মনে একটা আইডিয়া ছিল কিন্তু বললাম না। দুই মিলিয়নের বাড়ি খা খা। ফিওনা একা থাকে। এই বাড়িতে এলে ফরিদের কথা খুব মনে হয়। হানা তার বাবার খুব ক্লোজ ছিল। বাবার শূন্যতা সে মেনে নিতে পারে না। এটা একান্তই আমার ধারণা। হানা কাউকেই বাড়ি থেকে পালানোর কারণ বলেনি।
জীবনের দুঃখকে একেকজন একেকভাবে মোকাবিলা করে। কোনো কোনো শিশু বা কিশোর নিজের ওপর প্রতিশোধ নিয়ে সেটা প্রকাশ করে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানি হানা এক ফস্টার হোমে আছে। তারপর ফিওনার সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়ে ওঠে না। নিজেই নানা সমস্যায় হিমশিম খাই। অনেক বছর গড়িয়ে যায় ।
কিছুদিন আগে আমার মেয়ে এসে বলল, ‘মা আমার সঙ্গে হানার দেখা হয়েছে। ও নার্স। কিংস হসপিটালে।’
শুনে খুশি হই। যাক কিছু একটা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছে।
‘ওর বিয়ে হয়েছে। ভালো আছে।’ বলে মেয়ে৷
তা–ই নাকি? ফোন নম্বর আছে?
নিজে যেচে ফোন করি। হানার মা–বাবা আমার মেয়েকে অনেক স্নেহ করত ।
আনন্দ প্রকাশ করি। জোক করে বলি, কি রানওয়ে গার্ল, রানওয়ে ব্রাইড হওনি তো?
‘না অ্যান্টি। আমি ভালো আছি । দোয়া করবা।’
তাহমিনা আমির
উসটার পার্ক, লন্ডন, যুক্তরাজ্য