রাতটা ঝুমঝুম জোছনার

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

একসঙ্গে পাঁচটা ছায়ার ধুপছায়া পড়ছিল হেলে রাস্তার এক কোণে। রাস্তার কোলজুড়ে শান্ত–স্নিগ্ধ ছায়াদের মিছিল।
কলাপাতায় বাতাস দোলায় দোল লেগেছিল ১৭ বছর বয়সের ছায়াগুলোতে।
সে বাতাসের পরশ লাগতেই কত কথা ঝরে পড়ল পাঁচ ছায়া থেকে। এর কথা, সের কথা, কথা হলো জোনাক মেয়ের সঙ্গে যাবার গোপন অভিসারের!
হাঁটছে ছায়াগুলো নদীর ধার ধরে। ওদের সঙ্গে আছে মেঘনার গর্জন, ট্রলার আর জেলের উপস্থিতি। ঝুড়ির ইলিশ আর চাঁদের রুপালি ঝিলিক পড়ছে জেলের গালের টোলে।
রাত এক, দু্ই, তিন হলো। দূর, ওই দূরে নিবু নিবু জ্বলছে প্রদীপ।
ওটা কী? প্রশ্ন জাগে ছায়া সবের। কোন এক মা রাতকাঁদা বাবুকে নিয়ে চাঁদমামা গান শোনাচ্ছেন। তার সাক্ষী হয়ে জেগে আছে স্নেহপ্রদীপ। ব্যাপার কী? মেঘনার গর্জনে, বাতাসের বিলাপে নিভলো না প্রদীপটা? প্রশ্নাকুল নয়ন সবার। উত্তর আসে ওই দূর থেকে৷ নিভে না তা মায়ের প্রদীপ বলে!
কিছুক্ষণ পর চাঁদ ঢেকে যায় মেঘে, হিংসা কিংবা শ্রদ্ধায়, যা হোক একটা কিছু দেখাবে বলে! রাত কম হয়নি, তাই ঘরে ফেরা ছায়াগুলোর ঘরে ফিরে আলো জ্বালতেই মুহূর্তেই ছায়া সব বিলীন হলো রীপা, রূপসা, বেনজির, লাভলী আর আমার মধ্যে।
তাই আর কী করা! দুটা বালিশ জোগাড় করে ছোট খাটে পা আর হাঁটুমাথা এক করে আয়েশে শুয়ে পড়ার ভান করলাম। আমাদের ঘুম আসছে না।
ঘুমকন্যা আজ গেল কোন পুরীতে? শুয়ে শুয়ে কত কথা বলা হয়ে গেল অযথা। এদিকে আমাদের পেটে লাগল ভীষণ ক্ষিধা। তাই মাথায় এল চোরবুদ্ধি!
চুপে চুপে বউমার আলমিরা খুললাম। গেল হাত লাভলীর আচারের বয়ামে। আচার এল হাতে কিন্তু হাতটা আসছে না বাইরে!
তাই খিলখিল করে হাসল বেনজির। পাশে থাকা রীপা হঠাৎ কী জানি কী করল, বোবা হয়ে গেল চুরি করার খলখলানো অদ্ভুত সুখের হাসিটা।
তারপর পানি খেয়ে আমরা আবার শুয়ে পড়লাম। তারপর কদমপাড়ার মুয়াজ্জিনের ঘুম ভাঙার ইঙ্গিত এল কানে।
এরপর ২০০৭ সাল পেরিয়ে ২০১৪ এলো।
এখনও জোছনা আসে আকাশে। ঘুমপরীরা ফেরত আসে অচেনা দূর থেকে। কিন্তু এখন এমনই এক সময় সাজানো আচারের বয়ামে মরিচা ধরেছে।
দূর দূরান্তে চলে গেছে সবকটা ছায়ার কায়া। কেউ কারও কাছে নেই আমরা। এতদিন পরে আজও মনে পড়ে সেই ঝুমঝুম জোছনার রাতের কথা।
তবু দূরে চলে যাওয়া মানুষগুলোর জড়ানো মায়া অর্থহীন হয় না বর্তমানের পাতায়। ভাবি, কতরাত এল গেল, এখন আর আসে না সেইসব রাত।
রাতজাগা বাবুটি এখন হয়তো শিখে গেছে বয়স গুনতে, হাতের কড়ে ছয় কি সাত! জেলের গালের টোলের স্থানে নদীভাঙনের খেয়ালি খেলার বিষন্ন ভাঁজ। আর আমরা দিনান্তে করি সেইসব বিলাসী স্মৃতির তোয়াজ।
ভ্যালেন্সিয়া কলেজ
ছবি- সংগৃহীত