রংপুরের রান্না
ভাওয়াইয়া গানের আকরভূমি রংপুর। বিশ্বের জনপ্রিয় বুনন শিল্পের ঐতিহ্য ‘শতরঞ্চি’ রংপুরের গৌরব। রংপুর বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের এক ঐতিহ্যবাহী জনপদ। এবার রংপুরের ঐতিহ্যবাহী কয়েকটি খাবারের রেসিপি জানাচ্ছেন এই জেলার মেয়ে সংবাদ পাঠিকা, উপস্থাপক, আবৃত্তিকার ও তথ্যচিত্র নির্মাতা দিমা নেফারতিতি।
গরুর মাংসের আচার
আচারের মাংস সিদ্ধ করতে যা যা লাগবে: হাড়-চর্বি ছাড়া গরুর মাংসের পাতলা স্লাইস দুই কাপ, আদা বাটা এক চা চামচ, রসুন বাটা এক চা চামচ, ধনে গুঁড়া এক চা চামচ, মরিচ গুঁড়া এক চা চামচ, লবণ আধা চা চামচ, হলুদ গুঁড়া অল্প পরিমাণ, পানি পরিমাণ মতো।
উপকরণ: সরিষার তেল দুই কাপ, তেজপাতা একটা, পাঁচফোড়ন গুঁড়া এক চা চামচ, শুকনা মরিচ ১২-১৫টা, সরিষা বাটা এক চা চামচ, ভিনেগার আধা কাপ, গোটা রসুনের কোয়া এক কাপ, গরম মসলার গুঁড়া আধা চা চামচ।
প্রণালি: প্রথমে সেদ্ধ করা সব মসলা মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে একটি পাতিলে চুলায় দিতে হবে। এর সঙ্গে দুই কাপ পানি যোগ করুন; পাতিলে ঢাকনা দিয়ে মাংস পুরোপুরি সেদ্ধ করে মাংসের পানি ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ননস্টিক পাত্র হলে ভালো হয়। তাহলে নিচে লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। একদম ভাজা ভাজা করে নামাবেন।
এবার অন্য একটি কড়াইয়ে সরিষার তেল গরম করে নিয়ে তাতে তেজপাতা ও পাঁচফোড়ন দিন; এরপর শুকনা মরিচ দিয়ে হালকা ভাজুন, ভিনেগার ও রসুনের কোয়া দিয়ে দুই মিনিট অনবরত নাড়তে থাকুন; এবার আগে থেকে ভেজে রাখা সেদ্ধ মাংস যোগ করতে হবে। এ সময় চুলার আঁচ কমিয়ে রাখুন।
কিছুক্ষণ পর মাংসের রং কালচে ভাজা ভাজা হলে গরম মসলা ও পাঁচফোড়ন গুঁড়া দিয়ে এক মিনিট চুলায় রেখে নাড়ুন; এরপর চুলার আঁচ বন্ধ করে দিন। ঢাকনা খুলে রেখে মাংস ঠান্ডা করে নিয়ে বয়ামে রাখুন। মাঝে মাঝে ঢাকনা খুলে রোদে দিতে হবে। এবার পরিবেশন করুন খুবই মজাদার গরুর মাংসের আচার।
আলুর ডাল
উপকরণ: আলু সেদ্ধ আধা কেজি, কাঁচামরিচ সাত-আটটি, দুটি পেঁয়াজ কুচি, একটি রসুন কুচি, আদা বাটা আধা চা চামচ, জিরা বাটা আধা চা-চামচ, ধনে পাতা, লবণ, হলুদের গুঁড়া ও তেল পরিমাণ মতো।
প্রণালি: প্রথমে আলু সেদ্ধ করে ঠান্ডা করে নিন। এরপর আলুর খোসা ছাড়িয়ে ভর্তার মতো পেস্ট করুন। এবার অন্য পাত্রে পরিমাণ মতো তেল দিয়ে ধনে পাতা ছাড়া ওপরের সব উপকরণ ভেজে নিন। এবার পেস্ট করা আলু তার মধ্যে ছেড়ে দিয়ে নাড়তে থাকুন। দুই মিনিট পর পরিমাণ মতো পানি দিয়ে আঁচ দিতে থাকুন। আলুর ডাল যখন হালকা গাঢ় হয়ে আসবে তখন ধনে পাতা দিয়ে আরও এক-দুই মিনিট আঁচ দিয়ে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন। ব্যস, তৈরি হয়ে গেল মজাদার আলুর ডাল।
সিঁদল দিয়ে মাছ ভুনা
উপকরণ: সিঁদল এক কাপ, মাছ (শোল/মাগুর/পাঙাশ) আধা কেজি, পেঁয়াজ এক কাপ, তেল পরিমাণ মতো, রসুন বাটা এক চা চামচ, রসুনের কোয়া দুটি (মাঝারি), মরিচ গুঁড়া এক চা চামচ, কাঁচামরিচ কাটা পাঁচ-ছয়টি, হলুদ গুঁড়া এক চা চামচ, ধনে গুঁড়া এক চা চামচ, জিরার গুঁড়া আধা চা চামচ ও লবণ।
প্রণালি: তাওয়ায় হালকা আগুনে সিঁদল ভেজে সামান্য পানি দিয়ে বেটে নিতে হবে। এরপর কড়াইয়ের তেলে হলুদ ও লবণ দিয়ে মাছ মেখে ভেজে নিতে হবে। এবার তেলে পেঁয়াজ দিয়ে বাদামি রং হওয়া পর্যন্ত ভাঁজতে হবে। সেখানে সামান্য পানি দেওয়ার পর সব মসলা দিয়ে চার-পাঁচ মিনিট কষানো হলে তাতে সিঁদল ঢেলে আস্তে আস্তে নাড়তে হবে। এবার মাছের কাঁটা ছাড়িয়ে কষানো সিঁদলের মধ্যে দিতে হবে। কিছুক্ষণ কষিয়ে সিঁদলের তেল ছাড়লে নামিয়ে ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে।
সিঁদল তৈরির প্রণালি: রংপুর অঞ্চলে জনপ্রিয় খাবার সিঁদল। এটি তৈরি হয় মাছ, কচুসহ নানা উপাদানে। মাছ প্রথমে ভালো করে ধুয়ে কুটে পাঁচ-ছয় দিন কড়া রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। মাছের শুঁটকি বড় হামানদিস্তা বা শিল-পাটায় আধা ভাঙা করে নিতে হয়। আবার ব্লেন্ডারেও ব্লেন্ড করা যেতে পারে। এরপর একই পরিমাণ সাদা মানকচু ও কালো কচুর ডাঁটা ধুয়ে নিয়ে কাঁচা অবস্থাতেই বাঁটতে হয়। কচুবাটার সঙ্গে মলা, ডারকা বা পুঁটি মাছের আধা ভাঙা গুঁড়া, প্রয়োজন মতো শুকনা মরিচ, রসুন এবং কিছু পরিমাণ খাওয়ার সোডা ধীরে ধীরে সবকিছুর সঙ্গে মেশাতে হয়। সব মেশানো হয়ে গেলে এক দিন পর মণ্ডগুলো হলুদ ও সরিষার তেল দিয়ে মেখে হাত দিয়ে গোল বা চ্যাপ্টা করে পাঁচ-ছয় দিন রোদে শুকাতে হয়। শুকিয়ে এগুলো একটু শক্ত হয়ে গেলে তৈরি হয়ে যায় সিঁদল। এসব বহুদিন রেখে খাওয়া যায়।
বউভাত
উপকরণ: পোলাও বা ভাতের চালের খুদ এক কেজি, পেঁয়াজ কুচি এক কাপ, রসুন কুচি এক টেবিল চামচ, আদা কুচি এক টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ পাঁচ-ছয়টা, পরিমাণ মতো লবণ ও দুটি তেজপাতা।
প্রণালি: খুদের চাল ধুয়ে ঝরিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি ভেজে চাল ছাড়া সব উপকরণ ঢেলে দিন। একটু পর খুদের চাল, পরিমাণ মতো পানি ও কাঁচামরিচ দিয়ে ঢেকে দিন। ১৫ মিনিট পর ঢাকনা খুলে চুলার আঁচ কমিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। ব্যাস, হয়ে গেল বউভাত। এবার গরম-গরম পরিবেশন করুন।