যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীদের ভূমিকা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অভিবাসীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। মরিশাসের বাংলাদেশ হাইকমিশন ও ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের (২০১৮) অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন দেশটির শ্রম, শিল্পসম্পর্ক, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সুদেশ সাতকাম কালীচরণ। গতকাল সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী পোর্ট লুইসে দিবসটি উদ্যাপন করা হয়।
উল্লেখ্য, গত বছর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে মরিশাসে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে অনুষ্ঠানটি তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির সম্মতি নিয়ে গতকাল এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মন্ত্রী সুদেশ সাতকাম কালীচরণ। সভাপতিত্ব করেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রেজিনা আহমেদ। অতিথি ছিলেন আইওএমের প্রতিনিধি ও পোর্ট লুইসের ডেপুটি লর্ড মেয়র।
সুদেশ সাতকাম কালীচরণ আরও বলেন, তাদের সরকার সুষ্ঠু অভিবাসন প্রক্রিয়া প্রয়োগের ক্ষেত্রে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ও বাংলাদেশি কর্মীদের সঙ্গে নিয়োগকর্তার চুক্তিপত্র বাংলায় প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। যাতে কর্মীরা নিয়োগের সকল শর্ত সম্পর্কে অবগত থাকেন। এ ছাড়া, সাম্প্রতিক কিছু অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তার মন্ত্রণালয়ের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
আইওএমের প্রতিনিধি বলেন, মর্যাদার সঙ্গে অভিবাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে। স্বচ্ছতার সঙ্গে নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে সকল অংশীজনকে একসঙ্গে কাজ করারও আহ্বান জানান তিনি।
ডেপুটি লর্ড মেয়র বলেন, মরিশাসে কোনো স্থানীয় জনগণ নেই। আজকের এই মরিশাস, প্রবাসী কর্মীদের ঘাম জড়ানো পরিশ্রমের ফসল।
রেজিনা আহমেদ বলেন, অভিবাসন বাংলাদেশের উন্নয়নের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মারাকেশে গ্লোবাল কমপ্যাক্ট ফর সেফ অর্ডারলি অ্যান্ড রেগুলার মাইগ্রেশন (জিসিএম) গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশ এর কৃতিত্ব দাবি করতে পারে। কেননা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গ্লোবাল কমপ্যাক্টের ধারণা উপস্থাপন করেন। বাংলাদেশ এ জন্য অত্যন্ত গর্বিত। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই কমপ্যাক্টের মাধ্যমে সারা বিশ্বের অভিবাসীরা উপকৃত হবেন। রেজিনা আহমেদ প্রবাসীদের জন্য বর্তমান সরকারের গৃহীত নানামুখী কার্যক্রম উপস্থিত অতিথিদের অবহিত এবং সরকারের গৃহীত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন ও সকল উদ্যোগকে সফল করার প্রবাসীদের সহযোগিতা কামনা করেন। রেজিনা আহমেদ আরও বলেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। এতে প্রবাসী আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে এ দিবস উপলক্ষে মরিশাস থেকে বৈধ পথে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রেরণকারীকে ‘রেমিট্যান্স সম্মাননা ২০১৮’ প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য, মরিশাসের মিশন এ বছরই প্রথমবারের মতো এ উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ বছর সর্বমোট পাঁচজনকে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। মন্ত্রী ও হাইকমিশনার এ সম্মাননা তাঁদের হাতে তুলে দেন। উপস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণে তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং অংশগ্রহণকারী সকলেই এ ধরনের সম্মাননা প্রদানের উদ্যোগকে স্বাগত জানান।
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে দিবসটি উপলক্ষে প্রদত্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবের বাণী পাঠ করে শোনান হয়। পরে আইওএম কর্তৃক নির্মিত বাংলাদেশের ওপর বৈধ অভিবাসন বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে দেশটির বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, জাপান ও আমেরিকার রাষ্ট্রদূত, ভারত হাইকমিশনের কাউন্সেলর ও ইউএনডিপির স্থানীয় প্রতিনিধিসহ প্রবাসী বাংলাদেশিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে অংশগ্রহণকারীদের দেশীয় খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। বিজ্ঞপ্তি