যুক্তরাষ্ট্র চায় বিশ্ব ভূরাজনীতি থেকে রাশিয়া মুছে যাক

ইউক্রেনীয়রা মরণপণ লড়ছে। দনবাস, ক্রিমিয়া, দক্ষিণের মারিউপোলসহ বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পথে যুদ্ধ করছে রাশিয়া। দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কি যুদ্ধ বন্ধে বৈঠকে বসতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আহ্বান জানিয়েছেন। এ কথা সত্যি, এখন পর্যন্ত রাশিয়া রাজধানী কিয়েভের পতন ঘটাতে পারেনি, পারেনি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে। রাজধানীর উপকণ্ঠে ইউক্রেনের সৈন্যদের তীব্র প্রতিরোধের মুখ রুশ বাহিনী সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে।...এ অর্জনে যুক্তরাষ্ট্র মহাখুশি। কারণ, এ ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে ভূরাজনীতিতে বিশ্বে রাশিয়ার ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রুশ আগ্রাসনের কারণে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়েছে প্রায় ৫২ লাখ মানুষ। হাজারো নারী-পুরুষ ও শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে কতগুলো শহর, বন্দর ও নগরী। তারপরও আশাবাদী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান স্টেট ডিপার্টমেন্টের বরাত দিয়ে ইউক্রেনকে পুরোপুরিভাবে রাশিয়া কখনোই পরাস্ত বা দখল করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনের মিত্রদের মধ্যকার ঐক্য রাশিয়াকে এই কঠোর বার্তাই দিচ্ছে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধাবসানের প্রচেষ্টা চালানো একটি গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী দেশ হচ্ছে তুরস্ক।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস তুরস্ক, মস্কো ও কিয়েভ সফর করবেন। তুরস্ক এ যুদ্ধাবসানে মধ্যস্থতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের আলোচকদের মধ্যে বৈঠকের এবং আন্তালিয়ায় এ দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে সম্মেলনের আয়োজন করে। আঙ্কারা বর্তমানে পুতিন ও জেলনস্কির মধ্যে একটি সম্মেলন আয়োজনের চেষ্টা করছে। সম্মেলনটি ইস্তাম্বুলে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকটের কারণ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার এ যুদ্ধ। কয়েকটি পর্বে রাশিয়া তার অভিযানকে ভাগ করেছে। প্রথম পর্বের সফল সমাপ্তি ঘোষণা করে দ্বিতীয় পর্বের সূচনা করেছে।

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধাবসানের প্রচেষ্টা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে এ মুহূর্তে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। ইউক্রেনের এ যুদ্ধে পশ্চিমা নেতারা সামরিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা জুগিয়ে আসছেন। যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, এ যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিই জয়লাভ করবেন। এখানে রাশিয়ার কৌশলগত পরাজয় হতে যাচ্ছে।

দিনে দিনে এ কথা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে এ যুদ্ধে ইউক্রেন এখন আর একক কোনো পক্ষ নয়। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তুরস্ক, মস্কো ও কিয়েভ সফরের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও সফর করা দরকার। যুক্তরাষ্ট্র যত দিন বিশ্ব ভূরাজনীতি থেকে রাশিয়াকে মুছে ফেলার মনোবাসনা ত্যাগ না করবে, তত দিন প্রকারান্তরে এ যুদ্ধ চলবে।

লেখক: দেলোয়ার জাহিদ, আলবার্টা, নিবাসী